শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যারাডোনার মৃত্যুতে শোকের মাতম

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০৭
আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে দিয়াগো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামের বাইরে ভক্তদের শোক -ইন্টাননেট

ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন 'দিয়স ভিভো' অর্থাৎ 'জীবন্ত ঈশ্বর'। গত বুধবার তিগ্রের নিজ বাড়িতে মারা যান ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা 'দিয়াগো ম্যারাডোনা'। তার বিদায়ে আর্জেন্টিনা কাঁদছে। প্রতিকৃতি আর ১০ নম্বর জার্সি নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে শোক। ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনার মৃতু্যতে প্রিয়হারা বেদনার ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও। তার মৃতু্যতে দেশটিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা সরকার। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় তিনি বলেন, 'যুগে যুগে ম্যারাডোনার ক্রীড়া নৈপুণ্য ভবিষ্যৎ ফুটবল খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।' ম্যারাডোনার জন্ম আর্জেন্টিনায়। পৃথিবীর মানচিত্রে একটি ভূখন্ড, সেই পরিচয় ছাপিয়ে সারা বিশ্বের কাছে তিনি একজন ফুটবল ঈশ্বর। বুয়েন্স আয়ার্স থেকে যাত্রা শুরু করে পায়ের জাদুতে তিনি জয় করেছেন ইতালি। ৮৬ ম্যাক্সিকো আসরে তার হাত ধরেই বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা প্রথমবার ছুঁয়ে দেখতে পেরেছিল আর্জেন্টিনা। তার বাঁ-পায়ের জাদু দেখতে মুখিয়ে থাকত ফুটবল বিশ্ব। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত দিয়ে করা 'হ্যান্ড অব গড' আজও রহস্য হয়ে টিকে আছে। ওই ম্যাচেই মুগ্ধতা ছড়ানো একক নৈপুণ্যের গোলটি পেয়েছে শতাব্দী সেরার স্বীকৃতি। নিজের ৬০ বছরের জীবনে ফুটবল খেলে কাটিয়েছেন ২১ বছর, ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আরও প্রায় ৭ বছর। জীবনের মোট ২৮ বছর যেই ফুটবল মাঠের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন ম্যারাডোনা, সেই খেলাটি তাকে দিয়েছে দুই হাত ভরে। জিতেছেন ফুটবল বিশ্বকাপ, ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে নিজেকে নিয়ে গেছেন সবার ওপরে। ম্যারাডোনা বেড়ে উঠেছেন আর্জেন্টিনার খুবই দারিদ্র্যপীড়িত একটি এলাকা থেকে। বুয়েন্স আয়ার্সের শহরতলিতে বসবাস করতেন তিনি। আর্জেন্টিনার তখনকার সবচেয়ে দরিদ্র ফুটবলাররা স্বপ্ন দেখতেন বোকা জুনিয়র্সের হয়ে খেলার। দিয়াগো ম্যারাডোনাও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন বলে তিনি বোকা জুনিয়র্সে খেলার স্বপ্ন দেখতেন। ম্যারাডোনার বিদায়ে ফুটবল বিশ্ব হারাল এক বর্ণিল চরিত্রকে, এক সাফল্যে মোড়া কিংবদন্তি ফুটবলারকে। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েন্স আয়ার্সের লানুসে অবস্থিত পলিক্লিনিক এভিটা হাসপাতালে জন্ম নেওয়া ম্যারাডোনা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন ২০২০ \হসালে ২৫ নভেম্বর বুয়েন্স আয়ার্সে তিগ্রের নিজ বাসায়। সম্প্রতি বেশকিছু রোগে ভুগছিলেন তিনি। গত ৩০ অক্টোবর ৬০তম জন্মদিন পালন করার তিন দিন পর শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করায় ম্যারাডোনাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। বুয়েন্স আয়ার্সের হাসপাতালে তার মস্তিষ্কে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। মস্তিষ্কে জমাট বেঁধে থাকা রক্ত (ক্লট) অপসারণ করা হয়েছিল। তখন মাদকাসক্তি নিয়ে ভীষণ সমস্যায় ভুগেছেন ম্যারাডোনা। অস্ত্রোপচার সফল হলেও হঠাৎ অ্যালকোহল পরিহার করায় কিছু সমস্যা দেখা দেয় তার। এ কারণে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল এই ফুটবল জাদুকরকে। পুনর্বাসনের জন্য তাকে নেওয়া হয়েছিল তিগ্রের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই মাদকাসক্ত ছিলেন এই আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা। তার ব্যক্তিগত আইনজীবী মাতিয়াস মোরলাহাস গণমাধ্যমকে জানান, অতিরিক্ত মাদকাসক্তির জন্য শেষ মুহূর্তেও মেডিসিন নিচ্ছিলেন তিনি। এর আগেও বেশ কয়েকবার মৃতু্যর মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে সমানভাবে আলোচনায় থাকা ম্যারাডোনা ২০০০ সালে একেবারে মৃতু্যর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেবার দীর্ঘদিন পর হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান তিনি। ২০০৫ সালেও তাকে জটিল রোগে ভুগতে হয়। পরে ২ বছর পুনর্বাসনে কাটাতে হয় তাকে। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ম্যারাডোনার মৃতু্যতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছে, 'আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া আমাদের কিংবদন্তি দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনার মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন। আপনি সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।' এক শোক বার্তায় আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফেরনান্দেসের জানান, 'তিনি শুধু আমাদের আনন্দই দিয়েছেন। আমরা তার কাছে ঋণী। রাজ্যের সব দুয়ার দিয়াগোর জন্য খোলা।' আর্জেন্টাইন নারী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো প্রেমে পড়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। আর বাঙালিদের আর্জেন্টাইন ফুটবলের প্রেমে ফেলেছিলেন দিয়াগো। যখনই বিশ্বকাপ, তখনই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যেত বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। বাসার ছাদে, উঁচু গাছে উড়ত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা। কে সর্বকালের সেরা- এই প্রশ্নে পেলে ও ম্যারাডোনা নিয়ে হতো নানা তর্ক-বিতর্ক। সেই ম্যারাডোনাই সারা বিশ্বকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন 'না ফেরার' দেশে। তার মৃতু্যতে শোকাহত বাংলাদেশও। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। ৮৬ বিশ্বকাপ জয়ী নায়কের মৃতু্যতে শোকবিহবল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলও। ফুটবল রাজপুত্রকে হারিয়ে কাঁদছে ক্রিকেট বিশ্বও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে