বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ-বালাই

তিন ভাইরাসে কাবু শিশুরা

ম জাহিদ হাসান
  ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০৮
শিশুকে নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে -ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই এবার শীতের শুরুতে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ-বালাই বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আতঙ্ক-অসময়ের ডেঙ্গু ভাইরাস। ফলে কোভিড-১৯, কমন-কোল্ড ভাইরাল-ফ্লু ও ডেঙ্গু এই তিন ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন, শীত জেঁকে না বসলেও নবজাতক ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। গত মাসের তুলনায় নভেম্বরে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে বেশিরভাগ শিশুই কমন-কোল্ড (সাধারণ সর্দি-কাশি) বা সিজনাল ফ্লু জাতীয় সমস্যা নিয়ে আসছে। তবে এ বছর ঠান্ডাজনিত রোগ ছাড়াও মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সংক্রমণের আশঙ্কা ও মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধিতে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সরেজমিন রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, মোহাম্মাদপুরে মা ও শিশু হাসপাতাল, মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি চিকিৎসাকেন্দ্র ঘুরে চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আবহওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে স্বভাবতই দেশে শীতের শুরুতে শিশু ও নবজাতকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার কোল্ড ডিজিজের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। শিশুরা শীতজনিত মৌসুমি রোগ যেমন- নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, অ্যাডিনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। চলতি বছর শীতকালীন রোগের সঙ্গে অসময়ে ডেঙ্গুজর ও করোনাভাইরাস আক্রান্তের ভয় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শাফি আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, ৬৫০ শয্যার এই চিকিৎসাকেন্দ্রে এ বছর শীতের শুরুতেই প্রতিদিন হাসপাতালের মেডিসিন ওপিডিতে (শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সি) গড়ে ৬শ' থেকে ৭শ' রোগী আসছে। যাদের এক তৃতীয়াংশই ঋতু পরিবর্তনজনিত কোল্ড ভাইরাল ফ্লু যেমন- জ্বর, ঠান্ডা-কাশি, ব্রঙ্কিউলাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, রোটাভাইরাল ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের রোগী। গত বছরের তুলনায় এবার এই ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭১ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। গতকাল পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১ জনসহ মোট ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি রয়েছে। বর্তমানে করোনা ইউনিটে ২০ বেডসহ হাসপাতালের পিআইসিইউ, এনআইসিইউ, কর্ডিয়াক আইসিইউ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ডেভেলপ বা সিসিআইডি, হাই ডিফেসিয়েন্সি ইউনিট বা এইচডিইউ বেডগুলোতে রোগী পূর্ণ রয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কয়েকজন চিকিৎসক যায়যায়দিনকে বলেন, শীতের শুরুতেই শিশুরা জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস বা শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা (হাঁপানি), সাইনোসাইটিস এবং টনসিলের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসে। এবার করোনার কারণে গত ১৩ জুলাই শিশু হাসপাতালে কোভিড-১৯ ইউনিট চালু করা হয়েছে। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ২শ' শিশুর করোনা পরীক্ষা হয়েছে। এছাড়া উপসর্গ সন্দেহে বহির্বিভাগে আসা ৮৩৩ জন শিশুর কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়েছে। ২০ নভেম্বর একদিনেই ১০ শিশুর পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০৬ জন শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৪ জন শিশু মারা গেছে। মোহাম্মদপুর মা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালের ইনডোর আউটডের মিলে গত শুক্রবার ২৬৫ ও শনিবার ২৪৬ জন শিশু ভর্তি ছিল। এ ধারাবাহিকতায় গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় রোগী বাড়ছে। মূলত শীত ঋতুতে বাতাসে ধুলার পরিমাণ বেশি হওয়ায় হাসপাতালে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, মাইল্ড নিউমোনিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া বাচ্চারা শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। এর বাইরে ডেঙ্গু ও করোনা উপসর্গ রোগীদের ঢাকা শিশু হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। তবে শিশুদের চিকিৎসায় এখানে পর্যাপ্ত শয্যা, রোগীর ওজন-উচ্চতা নির্ণয়ের ব্যবস্থা, ন্যাসোফ্যারিনজিয়াল অ্যাসপিরেটস সাকশন, রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন পরিমাপ যন্ত্র, অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্রায় সব ধরেনর ওষুধ রয়েছে। মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) পরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ মান্নান যায়যায়দিনকে জানান, শীতের সময় তুলনামূলক বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধুলাবালুর পরিমাণ বেড়ে যায়। এমন পরিবেশে ধুলামিশ্রিত ঠান্ডা বাতাস অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসনালি সরু হয়ে যায়। ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এছাড়া ধুলা থেকে অন্যান্য সিজনাল ফ্লু জাতীয় রোগ-ব্যাধিও বাড়ে। বিশেষ করে শীত ঋতুতে শিশুদের কমনকোল্ড বা সর্দি-কাশি, ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাস জ্বর, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস ছাড়াও কোল্ড ডায়রিয়া, রোটাভাইরাল ডায়রিয়া ও চর্মরোগ দেখা দেয়। এসময় শিশুদের নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত কারার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে ঠান্ডা খাবার পানি না খাওয়ানো উচিত। কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো, পায়ে জুতা পরিয়ে রাখা ও রাতে ঘুমানোর সময় কান টুপিসহ মোটা কাপড় পরিধান করাতে হবে। শিশুদের শীতজনিত রোগ সম্পর্কে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শাফি আহম্মেদ যায়যায়দিনকে আরও বলেন, শীতে ভাইরাল ফিভার ও ঠান্ডা-কাশি হয়। জ্বরের কারণে অনেক শিশুর তাপমাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর ঠান্ডা-কাশি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে নিউমোনিয়া হয়। এছাড়া শীতের সময় বাতাস ঠান্ডা থাকে আর এ বাতাস নিশ্বাসের সঙ্গে নেওয়ায় ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র ঠান্ডা হয়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের প্রটেকশন কমে যায়। ফলে এ সময় বাচ্চাদের ভিড় বা কোনো অনুষ্ঠানে নেওয়া যাবে না। একইভাবে শপিং মলসহ যেকোনো ভিড়ে এ সময়ে শিশুদের না নেওয়াই ভালো। আর শীত থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের কুসুম গরম পানিতে গোসল, গরম কাপড় পরিধান, বিশুদ্ধ পানি পান করানো উচিত। \হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে