বোমায় রক্তাক্ত পাকিস্তান

জঙ্গিবাদ নিমূর্ল হোক

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৭:৫১

অনলাইন ডেস্ক
জঙ্গিগোষ্ঠীর ভয়াবহ বোমা হামলায় আবারও রক্তাক্ত হলো পাকিস্তান। শুক্রবার দেশটির বেলুচিস্তানের কোয়েটায় এবং আফগান সীমান্তের কাছে খাইবার পাখতুনখাওয়ার বান্নুতে নিবার্চনী জনসভা চলাকালে এই হামলায় ১৩২ জন নিহত হন। এদের মধ্যে একজন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীর্ও রয়েছেন। হামলার ঘটনায় দুই শতাধিক আহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। হামলার ঘটনায় জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত থাকতে পারে এমন আলোচনার মধ্যে কোয়েটার মাস্তুং জেলায় চালানো হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে নিজস্ব মিডিয়া আমাক নিউজ এজেন্সির মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। বেলুচিস্তান প্রশাসন হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে দাবি করেছেন কোয়েটায় নিবার্চনী জনসভায় প্রায় হাজারখানেক মানুষের মধ্যে এক ব্যক্তি নিজের শরীরে বাধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। সংশ্লিষ্টরা জানান, শক্তিশালী ওই বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ১০ কেজি বিস্ফোরক এবং বল বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে আন্তজাির্তক বিশ্লেষকের মতে, সেনাবাহিনী জঙ্গিদের তাড়িয়ে দিয়েছে দাবি করলেও, প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান জঙ্গিবাদের অক্টোপাসেই বন্দি। শুক্রবারের হামলায় যত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, তা গত এক বছরের বেশি সময়েও ঘটেনি। ফলে ভয়াবহ হামলার পর দেশটিতে বড় ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি হওয়াও অমূলক নয়। আগামী ২৫ জুলাই পাকিস্তানের পালাের্মন্ট নিবার্চন। এ নিবার্চনকে সামনে রেখে পাকিস্তানে অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে, যা একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানের অশনিসংকেত বললেও অত্যুক্তি হয় না। সাম্প্রতিক হামলায় নিহতদের মধ্যে বেলুচিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নিবার্চনের প্রাথীর্ সিরাজ রাইসানি রয়েছেন। যিনি বেলুচিস্তান আওয়ামী পাটির্র প্রাথীর্। বেলুচিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবাব আসলাম রাইসানি তার ভাই নিহত সিরাজ রাইসান একই আসন (পিবি-৩৫) থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। আসলাম রাইসানি আছেন স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে। এ ঘটনার পর মনে করা হচ্ছে, ২০১৩ সালের নিবার্চনের আগে জঙ্গিরা যে আগাম হুমকি দিয়েছিল, এখন সেটাই বাস্তবায়নে নেমেছে তারা। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নিবার্চনী প্রচারণা চালাতে না পারে, এমনটি তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তানে জঙ্গিবাদের বিষয়টি বিশ্বজুড়েই আলোচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক এই হামলার ঘটনা একেবারেই অপ্রত্যাশিতÑ দাবি করেছে দেশটির সবোর্চ্চ পযাের্য়র প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী। আবার অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নিবার্চনে প্রাথীর্ হওয়ার অনুমতি পেয়েছে দেশটির ২৬৫ জন জঙ্গি। যে তালিকায় আছেন মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হাফিজ সাঈদের ছেলে ও তার মেয়ের জামাই। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী গণমাধ্যমের খবরে জানা গিয়েছিল, নিষিদ্ধ সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সাঈদের ভোটে লড়ার প্রস্তাব আগেই খারিজ করে দিয়েছে পাকিস্তান নিবার্চন কমিশন। তবে তার দলের অনুগামীদের নিবার্চনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে হাফিজ, এমন খবরও এসেছে বিশ্ব গণমাধ্যমে। একটি দেশের তালিকাভুক্ত ২৬৫ জঙ্গির নিবার্চনে অংশ নেয়ার ঘটনায় বিশ্ববাসীও বিস্মিত হয়েছেন। পাকিস্তানের বিতকির্ত দল জামাত-উদ-দাওয়াকে ২০১৪ সালে আন্তজাির্তক জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের মাটিতেও হাফিজের এই দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর হাফিজ ‘মিল্লি মুসলিম লীগ’ (এমএমএল) নামে একটি দল তৈরি করে নিবার্চনে লড়ার আবেদন জানালেও তা খারিজ করে নিবার্চন কমিশন। পরে ‘আল্লাহ-হু-আকবর তেহরিক’ নামে নতুন দলের ছত্রছায়ায় হাফিজের অনুগামীরা নিবার্চনে প্রাথীর্ হয়েছেন। হামলার ঘটনায় এসবের যোগসূত্র থাকতে পারে, এমনটিও আলোচিত হচ্ছে সবর্ত্র। আমরা মনে করি, জঙ্গিরা কখনো দেশ ও জাতির জন্য স্বস্তিকর হতে পারে না। পাকিস্তানের জঙ্গিরা সে দেশের স্কুল, বিমানবন্দর, জনসভা, মসজিদসহ নানা স্থাপনাসহ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপরও হামলা করেছে। বলাই বাহুল্য, দেশটির খাইবার পাখতুন এলাকায় দীঘির্দন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘষর্ চলেছে। কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীর কাছে দেশটির সাধারণ মানুষ বলতে গেলে জিম্মিবস্থায় রয়েছে। সেনাবাহিনীর কঠোর তৎপরতায় জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা কম হলেও তাদের পুরোপুরি নিমূের্ল যে দেশটি ব্যথর্, সাম্প্রতিক ঘটনা এটাই প্রমাণ করে। আমরা মনে করি, সারা বিশ্ব যেখানে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে মরিয়া সেখানে পাকিস্তানেরও কতর্ব্য হওয়া দরকার জঙ্গি নিমূের্ল আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। দেশে দেশে জঙ্গিবাদ নিমূের্লর মধ্যদিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।