মধুমাসের প্রথম দিনেই বাজারে আসছে রাজশাহীর আম

প্রকাশ | ১৫ মে ২০১৯, ০০:০০

বদরুল হাসান লিটন, রাজশাহী
জ্যৈষ্ঠের প্রথম দিনেই বাজারে আসছে রাজশাহীর আম। তবে গত বছরের চেয়ে এবার পাঁচদিন আগেই আম পাড়া শুরু হচ্ছে। টানা তাপদাহের কারণে এবার আগেই আম পাকতে শুরু করায় পাড়ার সময়ও এগিয়ে আনা হয়েছে। এক নামেই দেশজুড়ে খ্যাত রাজশাহীর আম মধুর মতন মিষ্টি, আর টস টসে রসে ভরা। হাতে নিয়ে খেতে গেলে নিস্তার নেই, কনুই ভিজিয়েই খেতে হবে। তাই বছরে একবার খেলেও এমন আমের স্বাদ সব সময়ই রসনাবিলাসীদের জিভে লেগে থাকে। কেবল দেশেই নয়, রাজশাহীর আম যায় বহির্বিশ্বেও। এজন্য বছরজুড়েই চলে অপেক্ষা। চলে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এবার মধুমাস শুরুর আগেই আম পরিপক্ব হয়ে গেলেও প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী ১লা জ্যৈষ্ঠে ঝুড়িতে নামছে 'রাজশাহীর আম'। দেশবাসীকে বিষমুক্ত ফল দিতে গেল তিন বছর ধরে গাছ থেকে আম ভাঙার জন্য সময় বেঁধে দিচ্ছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। তবে দাবদাহের কারণে আগে পাকতে শুরু করায় আম পাড়ার সময় কয়েকদিন এগিয়ে নেয়া হয়েছে। গত বছর গুটি ২০ মে, গোপালভোগ ২৫ মে এবং লক্ষ্ণা বা লক্ষ্ণণভোগ ১ জুলাই থেকে পাড়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হচ্ছে। এরপর থেকে অন্য জাতের আম যখন পাকতে শুরু করবে তখন পাড়া যাবে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গোপালভোগ ২০ মে, রানীপছন্দ ও লক্ষ্ণা বা লক্ষ্ণণভোগ ২৫ মে, হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি, ফজলি ও সুরমা ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা আম পাড়া যাবে আগামী ১ জুলাই থেকে। তবে এবার গুটি, গোপালভোগ এবং লক্ষ্ণা বা লক্ষ্ণণভোগ- এই তিন জাতের আম পাড়ার সময় গত বছরের চেয়ে পাঁচদিন এগিয়ে আনা হয়েছে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মণিগ্রামের আমচাষি ও ব্যবসায়ী জিলস্নুর রহমান বলেন, সাধারণত মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শুরুর পর রাজশাহীতে ধীরে ধীরে আম পাকতে শুরু করে। কোনো আম আগে পেকে যায় কোনোটা আবার পরে। তাই বিভিন্ন জাত ও নামের আম পর্যায়ক্রমে নামতে থাকে বাজারে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা মেনে নামানোয় গত বছর বাজারে প্রায় এক সঙ্গেই হাজির হয়েছিল সব জাতের আম। তবে অন্তত এবার তেমনটি হবে না। মধ্য রমজানের পর এক এক করে পর্যায়ক্রমেই বাজারে নামবে বিভিন্ন জাত ও স্বাদের আম। তবে রমজানের কারণে অনেকেই এখন আম ভাঙবেন না। সেই অর্থে বলতে গেলে ঈদের পরপরই পুরোদমে আম ভাঙা শুরু হবে রাজশাহীতে। অপর আমচাষি জসিম উদ্দিন বলেন, গাছে পরিপক্ব করে আম নামালে আর কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকাতে হয় না। এজন্য তার মতো সব চাষিই এখন গাছ থেকে পরিপক্ব আম নামান। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। এরই মধ্যে প্রায় গাছের আমেই পূর্ণতা এসে গেছে। বুধবার (১৫ মে) থেকে অনেকেই আগাম জাতের গুটি আম ভাঙতে শুরু করবেন। এরপর থেকে সব বাগানেই কিছু কিছু আম ভাঙা শুরু হবে। আর ঈদের পরপরই পুরোদমে ভাঙা শুরু করবেন আম। প্রথমেই জাত আম খ্যাত গোপালভোগ রাজশাহীর বাজারে আসবে বলেও জানান আমচাষি জসিম উদ্দিন। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, গুটি আম প্রতিবছরই একটু আগে পাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই অনেকে এখন গুটি আম নামাতে শুরু করবেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়ার সময় অনুযায়ী সাত দফায় আম নামাতে পারবেন। এতে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিকটন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। নতুন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না এলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্য হবে না বলেও মনে করেন এই কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।