বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি

গরুর হাটে জায়গা দখলের পালস্না

হাট ইজারাদারের প্রতিনিধিরা কেউ কেউ পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় গরু রাখার ব্যবস্থা করে দিয়ে ব্যাপারীদের কাছ থেকে উপরি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শরৎচন্দ্রের সেই মহেশ আর গফুরের যুগ নেই। সামান্য খড়-বিচালি কিংবা ঘাসের জন্য কোনো মহেশের আর করুণ মৃতু্য হয় না। এই সময়ের মহেশরা (গরু) পালিত হয় নিবিড় পরিচর্যায়। তাদের ভালো খাবার দিয়ে শুধু স্বাস্থ্যবানই করা হয় না, শরীরে দাগ-ময়লা লাগলেই ধুয়ে-মুছে তকতকে-চকচকে করা হয়। ওদের বিক্রি করলে পাওয়া যায় অনেক টাকা। ঘরে আসে আরও সচ্ছলতা। রাজধানীর আফতাবনগরে মঙ্গলবার কোরবানির পশুগুলোকে এভাবেই পরিচর্যা করা হয় -যাযাদি
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ৫ দিন। এরই মধ্যে রাজধানীর গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটের পাশাপাশি অস্থায়ী ২৩টি হাটে ট্রাক ও ট্রলার ভরে গরু-ছাগল-মহিষসহ বিভিন্ন গবাদি পশু আসতে শুরু করেছে। তবে কোনো হাটেই বেচাকেনা শুরু না হওয়ায় বেশিরভাগ গরুর ব্যাপারীই এখন সুবিধা মতো জায়গা দখলেই ব্যস্ত। এ সুযোগে হাট ইজারাদারের প্রতিনিধিরা কেউ কেউ পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় গরু রাখার ব্যবস্থা করে দিয়ে ব্যাপারীদের কাছ থেকে উপরি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। এ নিয়ে কোনো কোনো হাটে ছোটখাটো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। ব্যাপারীদের ভাষ্য, সুবিধামতো জায়গায় ঠাঁই না হলে এবার ভালো দামে গরু বিক্রি করা কঠিন হবে। কেননা বেচাকেনা শুরুর প্রথম দিকে ক্রেতারা অনেকেই হাটের ভেতরের দিকে ঢুকতে চান না। তাই কোরবানির পশুর ব্যাপক চাহিদা না থাকলে তাদের অনেকেই গরু-ছাগল বিক্রি না করেই তা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এছাড়া এবার ডেঙ্গু আতঙ্কে ক্রেতাদের অনেকেই হাটের ভেতরে বেশি দূর না গিয়ে সামনে থেকেই কোরবানির পশু কিনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী দু'একদিনের মধ্যে টানা ভারি বৃষ্টি হওয়ার আভাস দিয়েছে। তাই ব্যাপারীরা এবার সবাই হাটের সামনের দিকের সুবিধামত উঁচু জায়গা খুঁজছে। যাতে বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়ায় জায়গায় গরু দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আফতাবনগর গরুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে বাঁশের খুঁটি। এর সঙ্গে বাঁধা বাঁশ। উঁচু-নিচু মাটি সমান করা হয়েছে বালু বা ইটের খোঁয়া দিয়ে। ব্যাপারীরা এদিক-সেদিক ঘুরে পছন্দের জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই এরইমধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জায়গা দখলে নিয়ে গরুর যত্ন-আত্তি নিচ্ছেন। নতুন করে যারা গরু নিয়ে আসছেন তারা যাতে ওই জায়গায় ভাগ বসাতে না পারেন এ জন্য নানা ফন্দি ফিকির করছেন। এ নিয়ে ব্যাপারীদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। হাট কর্তৃপক্ষ তা সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে বেশকিছু গরু ব্যবসায়ী সুবিধামত জায়গা দখলে নিয়ে নিশ্চিন্তে গরুর সেবা যত্ন করে সময় কাটাচ্ছেন। আফতাবনগর হাটের ইজাদারদের প্রতিনিধিরা জানান, এরইমধ্যে দেশের দূর-দুরান্ত থেকে হাটে গরু আসতে শুরু করেছে। যারা যত আগে আসছেন, তারা তত সামনের দিকে জায়গা দখল করছেন। সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মেহেরপুর, রংপুর ও দিনাজপুর থেকে বিপুল সংখ্যক গরুর ব্যাপারী এ হাটে এসেছেন বলে জানান হাট ইজারাদার ইকবাল হোসেন খন্দকার। গরু ব্যবসায়ী ইসমাইল কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন ১৮টি গরু নিয়ে। এর মধ্যে ১০টি বড় গরু রয়েছে, যার দাম ২ লাখ টাকার ওপরে। আর দুটি গরু রয়েছে ৩ লাখ টাকা করে। এবার গরুর দাম বেশি হবে। কেননা গরুর খাবারের দাম বেশি। ১ বস্তা ভুসি ১ হাজার ৫০০ টাকা। খুদের ভাত, চাউলের কুড়া, খেসারির ডাল সবকিছুরই দাম বেশি। তাই গরুর দাম বেশি পড়বে। তবে দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছেন তিনি। হাটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, 'মূল সড়ক থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভেতরে হাট। যাতায়াতের রাস্তাও সুবিধার নয়, বৃষ্টি হলে বিপদে পড়তে হবে।' পাবনা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন দবিরুল মোলস্না। তিনি জানান, সকালে গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। হাটে কোনো চাঁদা দিতে না হলেও, রাস্তায় কয়েক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়েছে। এখনও হাটে কোনো ক্রেতা নেই। হাট জমতে আরও ২-৩দিন লাগবে বলেও আশা করছেন তিনি। নাটোর থেকে ১৩ জনের একটি দল তেজগাঁও পলিটেকনিক খেলার মাঠের অস্থায়ী পশুর হাটে ৩০টি গরু নিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে ইউনূস আলী নামের একজন জানান, ক্রেতা আসলেও এখানো কোনো গরু বিক্রি হয়নি। অনেকেই এসে গরু দেখে চলে যাচ্ছেন। মাঝারি সাইজের একটি গরু ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করার প্রত্যাশা তার। তবে এরচেয়ে ৫/১০ হাজার কম হলেও বিক্রি করবেন। তাদের কাছে ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে বলে জানান তিনি। সিরাজগঞ্জ থেকে তিনটি গুরু নিয়ে এসেছেন মুমিনুল হক নামের এক খামারি। গরুগুলো দেড় থেকে দুই বছর আগে কিনেছেন। এরপর নিজেই লালন-পালন করেছেন। তার গরুগুলো ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে দাম হাঁকাবেন। তবে এখনো কোনো ক্রেতা দাম করতে আসেনি বলে স্বীকার করেন তিনি। তবে তেজগাঁওয়ের এই অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটে সোমবার রাত দুই-একটি করে গরু বিক্রি শুরু হয়েেেছ বলে জানান ইজারাদার মো. জালাল উদ্দিন। তার দাবি, বলেন, সোমবার রাত ৯টার দিকে এ হাটের প্রথম গরু বিক্রি হয়। ৬৫ হাজার টাকা দাম দিয়ে গরুটি ক্রয় করেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। এরপর মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আর কোনো গরু বিক্রি হয়নি। মাঠের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ গরু দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেছে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন পশুর হাটেও পর্যাপ্ত গরু এনে জড়ো করেছেন ব্যাপারীরা। তবে এখনো কোনো গরু বিক্রি হয়নি বলে জানান ইজারাদারের প্রতিনিধি ইবাদুল ইসলাম। তাঁর আশা, বুধবার ভোর থেকেই বেচাকেনা জমে উঠবে এবং ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত তা চলবে। রাজধানীর উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড-০৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএস'র উত্তর পাশের সেতু প্রোপার্র্টি ও সংলগ্ন খালি জায়গার অস্থায়ী পশু হাট, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় হতে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠসহ আশপাশের খালি জায়গা, ডিএসসিসি ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠ সংলগ্ন আশপাশের এলাকার খালি জায়গা, লিটিল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনির আখড়া ও দনিয়া মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধুপখোলা মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ডিএসসিসি ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারটেক মাঠ সংলগ্ন আশপাশের এলাকার খালি জায়গা ও আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গায় অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এর বাইরে গাবতলী স্থাীয় পশুর হাটেও কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে।