'অসুস্থ' সম্রাট কারাগার থেকে হাসপাতালে

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট
যাযাদি রিপোর্ট ক্যাসিনোকান্ডে আলোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট 'অসুস্থ' বোধ করায় তাকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়ার পর গত রোববার সম্রাটকে রাখা হয়েছিল কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখান থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্বরতর্ যাব সদস্য মোতালেব হোসেন বলেন, "উনি বুকের ব্যথা অনুভব করার কথা বলায় কারাগার থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। এখানে ইসিজি করার পর ডাক্তারের পরামর্শে ৮টার দিকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়।" হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আফজালুর রহমান বলেন, "উনার (সম্রাট) ভাল্ব আগেই রিপেস্নস করা হয়েছে। সেটা ভালো আছে। সকালে বুকের ব্যথা নিয়ে এখানে এসেছেন। এখন অবস্থা স্থিতিশীল। আমরা জরুরি মেডিকেল বোর্ড করেছি। চিকিৎসার কোনো ত্রম্নটি হচ্ছে না।" চিকিৎসকরা জানান, ১৯৯৮ সালে সম্রাটের হৃদপিন্ডের একটি ভাল্ব রিপেস্নস করা হয়েছিল। তবে হাসপাতালে আনার পর তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। তাকে সিসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সম্রাটের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, আরও কিছু পরীক্ষা করা হবে জানিয়ে একজন চিকিৎসক বলেন, ফলাফল হাতে পাওয়ার পর বলা যাবে তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া যাবে না, ছেড়ে দেওয়া হবে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায়র্ যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা সম্রাটের নাম ঘুরেফিরে আসছিল। শনিবার গভীর রাতে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। পরে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং 'নির্যাতন করার' বৈদু্যতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানায় র?্যাব। ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেদিনই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেরানীগঞ্জের কারাগারে। সোমবার রমনা থানায় সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করের্ যাব। তাকে দুই মামলায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করে রমনা থানা পুলিশ। বুধবার রিমান্ড শুনানির জন্য সম্রাটকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে। তার আগেই অসুস্থতার কারণে সম্রাটকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। বিদেশ নেওয়ার দাবি আইনজীবীদের এদিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের কারাদন্ড পাওয়া সদ্য বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যুবলীগের আইন সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ পারভীন হীরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে এ দাবি জানান। নিজেকে সম্রাটের মামলার প্রধান আইনজীবী উলেস্নখ করে অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভীন হীরা সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা দেখতে এসেছিলাম আমার ক্লায়েন্ট ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট হাসপাতালে কেমন আছেন। কিন্তু আমাদের দেখতে দেওয়া হয়নি।' 'উনার শারীরিক কন্ডিশন অনেক খারাপ। গত ১০ সেপ্টেম্বর উনার হার্টে পেসমেকার লাগানোর জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ১৪ সেপ্টেম্বর একটি প্রোগ্রাম থাকার কারণে তার যাওয়া হয়নি। পরবর্তীতে দেশের পরিস্থিতি আপনারা সবাই জানেন। পরবর্তীতে তিনি অ্যারেস্ট হন।' তিনি বলেন, সোমবার যখন আমরা উনার (সম্রাট) সঙ্গে দেখা করতে জেলগেটে গিয়েছিলাম, সেখানে অনেক নিয়ম-কানুন মেন্টেন করে অপেক্ষার পর তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। তখন আমরা দেখতে পেয়েছি ওনার শারীরিক কন্ডিশন অনেক খারাপ ছিল। দূর থেকে বলছিলেন উনার বুকে ব্যথা করছে। 'তিনি খুবই অসুস্থ। তিনি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কাছে দাবি করেছেন, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হোক। তিনি সব সময় দেশের বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরাও দাবি করছি- উনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া হোক।' সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইনজীবী হীরা বলেন, 'আগে তো তার সুস্থতা। রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি থাকবে আগে উনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন। পরে না হয় রিমান্ডের আবেদন করা যাবে। এমনকি উনাকে যদি জেলগেটেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাও আইনজীবীর উপস্থিতিতে যেন করা হয়- আমাদের সে অনুরোধ থাকল।'