তালাবদ্ধ আবরারের রুমে ফ্যান ঘুরছে এলোমেলো ২০১১

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) হত্যাকান্ডের শিকার শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের রুমটি (১০১১) তালাবদ্ধ, সেই রুমে ফ্যান ঘুরছে। অন্যদিকে আবরারকে যে রুমে নিয়ে হত্যা করা হয়, শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষটি এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। মঙ্গলবার বুয়েটের শেরেবাংলা হলে সরেজমিন গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে। পিটিয়ে হত্যা করা হয় বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। গত রোববার রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বলা হচ্ছে, ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। ইতিমধ্যে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। আবরার শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর রুমে থাকতেন। ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ১০১১ নম্বরের যে রুমে আবরার থাকতেন ওই রুমটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে। নিচতলার এ রুমে আবরার ছাড়াও চারজন থাকতেন। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা গেছে, ভেতরে একটি ফ্যান চলছে। আবরারের ট্রাঙ্কটি খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দোতলায় ২০১১ নম্বর রুমের কোনো নম্বরপেস্নট নেই। রুমে ঢুকতে বাম পাশের বেডে থাকতেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতাবা রাফিদ। তার বিছানার পাশে বালতি, ব্যাগ পড়ে আছে। বিছানার ওপর কাপড়চোপড় এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। টেবিলের ওপর দেখা গেল বই ও মগ। রয়েছে একটি ছুরি, 'বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটি। এই রুমে থাকতেন তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী ইফতি মোশারফ ওরফে সকাল। তার টেবিলের ওপর একটি ল্যাপটপ চালু অবস্থায় দেখা গেছে। এছাড়া ছড়িয়ে রয়েছে কাগজপত্র। তার বিছানায়ও বালিশ, কোলবালিশ, চাদর এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। রুমমেট প্রত্যয় মবিনের বিছানা ও টেবিলের জিনিসপত্রও এলোমেলো। ওই রুমে অমিত নামে আরেকজন থাকতেন। তার বিছানা ও টেবিল কম এলোমেলো ছিল। শিক্ষার্থীরা জানান, আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে নেওয়ার আগে ২০০৫ নম্বর রুমে নেওয়া হয়েছিল। ওই রুমটি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। রোববার (৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরারকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. বরকত উলস্নাহ ১৯ জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েক জনকে অভিযুক্ত করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদ, উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, গ্রন্থনা ও গবেষণা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্না, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুনতাসির আলম জেমি (২১), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির (২১), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (২১), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান রবিন (২২)। নিহত আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টায় নিজ বাসার সামনে আবরারের তৃতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় রায়ডাঙ্গা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।