ছাত্র রাজনীতি কি বন্ধ হওয়া উচিত

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে একটি ছাত্রসংগঠনের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে। বুয়েটের ইলেক্ট্রনিক অ্যান্ড ইলেট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী যিনি নিজেকে রাহাত নামে পরিচয় দিতে চান, তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। তিনি বলেন, 'আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির নামে যা চলছে, তা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। এসব অত্যাচার বন্ধ হতে হলে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত।' তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন দাবি মানতে চাইছেন না ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা। তারা বলেন, ছাত্র রাজনীতি নয় বরং ছাত্র রাজনীতির নামে যে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের রাজনীতি শুরু হয়েছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষাঙ্গনে প্রশাসনিক দখলদারিত্ব বেড়ে যাবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ। তিনি বলেন, 'আমরা কোনোভাবেই মনে করি না, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত এবং আমরা এই দাবির বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে যে রাজনীতি বা প্রক্রিয়া, সেটা বন্ধ হওয়া উচিত। এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করা দরকার বা কথা বলা দরকার।' ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন- এমন ব্যক্তিরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন তুলে দেয়া উচিত। কারণ, তারা ছাত্র রাজনীতির কোনো নিয়ম বা ব্যাকরণ অনুসরণ করছে না বলে মনে করেন ডাকসুর সাবেক জিএস ড. মোস্তাক হোসাইন। তিনি বলেন, 'অপরাজনীতিকে দমন করতে হলে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে সেটা হবে না। অপরাধী ছাত্রসংগঠন বন্ধ হোক। এগুলো ক্যাম্পাসে থাকা উচিত না।' তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক দলের শাখা হিসেবে শুধু শিক্ষাঙ্গনে নয়; বরং ছাত্র-শিক্ষক, পেশাজীবী-কোথাও হওয়া উচিত নয়। এই দাবি তারা তুললে গোটা দেশবাসীর সমর্থন তারা পাবে।' ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় ছাত্র রাজনীতির অনেক অবদানের কথা উলেস্নখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে গত ১০ বছরে বাংলাদেশে যতগুলো বড় আন্দোলন হয়েছে, এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য কোটাবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ২০০৬ সালে শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থানবিরোধী আন্দোলন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন। এসব আন্দোলনের কোনোটাই রাজনৈতিক দলের সহযোগী ছাত্রসংগঠনগুলোর উদ্যোগে হয়নি। বরং অনেক আন্দোলন যেমন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি দরকার। তবে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা ছাত্র রাজনীতির জন্য খারাপ বলে জানান রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন 'ছাত্রদের নিজেদের যে চাওয়া-পাওয়া রয়েছে, এর পক্ষে অর্থ্যাৎ তাদের নিজেদের যা নিয়ে রাজনীতি করার কথা, সেই সুযোগ তাদের থাকতে হবে।' 'কিন্তু সরকারি দলের যে দলগত রাজনীতি, সেটা বন্ধ করা জরুরি।' 'এটার চেয়েও যেটা বেশি জরুরি সেটা হলো, শিক্ষকদের যে দলীয় রাজনীতি। সেটাও ক্ষতিকর। এই শিক্ষক রাজনীতি টিকে থাকলে তা ছাত্র রাজনীতিকে নিজেদের টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে' বলেন তিনি। দলীয় রাজনীতির ছত্রছায়া বন্ধ করা গেলে গেস্টরুম কালচার, গণরুম এবং র?্যাগিংয়ের নামে ভয়ঙ্কর নিপীড়ন বন্ধ করা সম্ভব বলেও জানান সামিনা লুৎফা। বিবিসি