ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ৭ চুক্তি

মানববন্ধন, ফেনী নদী অভিমুখে রোডমার্চের ভাবনা বিএনপির

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
হাসান মোলস্না বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক দেশের স্বার্থবিরোধী হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। চুক্তিগুলো দলের পক্ষ থেকে বাতিলের দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি তারা। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি শরিক দলগুলো এ ইসু্যতে কর্মসূচি দেওয়ার চাপ দিচ্ছে বিএনপিকে। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে চুক্তির খুটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে চুক্তিবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে বিএনপি। বিএনপির মধ্য সারির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তি বিশেষ করে ত্রিপুরার সাবরুম শহরের জন্য ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহার চুক্তির বিরোধিতা করে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে। এ ইসু্যতে কেন্দ্র করে বুয়েটে একজন মেধাবী ছাত্রকে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। দলের নেতাকর্মী ও শরিকরা এ ইসু্যতে বিএনপির চুপ থাকটা পছন্দ করছে না। সঙ্গত কারণে এ ইসু্যতে কোনো কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না তা ভাবা হচ্ছে। মানববন্ধন, ফেনী নদী অভিমুখে রোডমার্চসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গত শনিবার নয়া দিলিস্নতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। চুক্তিগুলোর মধ্যে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত তিস্তার পানির কোনো সুরাহা না হওয়ায় দেশবাসী হতাশ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাবরুম শহরে সরিয়ে নেওয়ার চুক্তি। এতে হতাশা আরও বেড়েছে। চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে বিএনপিতে হতাশা, ক্ষোভ থাকলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কিছু বলেনি। শুধু প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সঙ্গে 'দেশবিরোধী' চুক্তি করে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারসহ সব দেশবিরোধী চুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ওইসব চুক্তি বাতিলের দাবি জানান। আর নিজের ফেসবুকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নিজের অভিমত তুলে ধরে বলেন, 'নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সফলতা আসেনি। দুতরফা বৈঠকে একতরফা চুক্তি, তরল গ্যাস, চট্টগ্রাম মংলা বন্দর, ফেনী নদীর পানিও যাবে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রম্নম শহরের। কথা ছিল মৃতপ্রায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আসবেন, উল্টো পানি দিয়ে আসলেন। শুধু কি পানি? তরল গ্যাস, একাধারে চট্টগ্রাম আর মোংলা সমুদ্রবন্দর, গভীর সমুদ্রের গ্যাস বস্নক, করিডরসহ অজানা আরও অনেক কিছু। বিনিময়ে এদেশের ১৭ কোটি মানুষ কি পেলাম আমরা? ১৭ কোটি মানুষের জন্য ১টি মাত্র ঠাকুর পুরস্কার। দেশের মানুষের ন্যায্য প্রাপ্যটুকুও দরকষে আদায়ে ব্যর্থ নতজানু সরকার।' অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি আরও কয়েকজন নেতাও কথা বলছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করার পরই বিএনপি দলীয় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ও কর্মসূচি দিতে চায়। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দলের সিনিয়র নেতা ও কূটনীতিক উইং নিজেদের মধ্যে কথা বলার পাশাপাশি শরিক দল ও এ বিষয়ে বিভিন্ন এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলছেন। কথা হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গেও। এর ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তিগুলো দেশের 'স্বার্থবিরোধী' অভিহিত করে তা বাতিলের দাবি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ভারত, মিয়ানমার, চীনসহ ভিনদেশের সঙ্গে সমালোচনামূলক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যে দেশের যে চাহিদা আওয়ামী লীগ সরকার তা-ই পূরণ করছে। সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ইসু্যতে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সিকিমের পথে হাটবে কি না প্রশ্ন এসেছে। তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দেশবিরোধী কাজগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে। তাও ইচ্ছাকৃতভাবে। এ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে একটা বড় ধরনের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ প্রয়োজন। এজন্য খুব শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়া হবে। একই বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি সব তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। শুধু ভারত সফরের ব্যর্থতাই নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি সব কিছু খুটিনাটি জাতির সামনে দালিলিক প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার, জিএসপি সুবিধা বাতিল, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়গুলো থাকবে।