ছয় পদ্ধতিতে শেখ হাসিনার নজরদারিতে শীর্ষ নেতারা

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৩৪

সোহেল হায়দার চৌধুরী

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বহুমুখী নজরদারিতে রেখেছেন দলপ্রধান শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে সহযোগী সংগঠনের চলমান কাউন্সিল প্রক্রিয়া ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত এ নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর যারা অপরাধ-অপকর্ম, দুর্নীতি বা দলীয় গ্রম্নপিংয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে জানা যাবে তাদের ঠাঁই হচ্ছে না কোনো কমিটিতে। ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের ধারা এগিয়ে নিতে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি জানান, কমপক্ষে ৬টি পদ্ধতিতে দলের শীর্ষ নেতাদের নজরদারিতে রেখেছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে- শেখ হাসিনার পছন্দের নেতাদের কয়েকজনের একটি গ্রম্নপ, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা, বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ, টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট, যার যার এলাকার নেতাদের রিপোর্ট এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রেরিত ভিডিও ও ছবি। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশে এরইমধ্যে পছন্দের নেতারা তাদের পর্যালোচনা রিপোর্ট তৈরি করছেন। তারা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিচ্ছেন। আর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নেতাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন। সংস্থার সদস্যরা নেতাদের অনুসারীর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশিষ্টজনদের মতামত নিচ্ছেন। কখনো কখনো সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হয়ে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তুলে দেয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এরইমধ্যে শতাধিক নেতার নানা ধরনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা পড়েছে। তার সেলফোনের গ্যালারিতে সেগুলো রাখা হয়েছে। এছাড়া ল্যাপটপেও রয়েছে অনুরূপ কপি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাউন্সিল ও শুদ্ধি অভিযানকে সামনে রেখে দলপ্রধান শেখ হাসিনা নানা মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছেন। সেসব তথ্য তার ব্যক্তিগত সেলফোন এমনকি ল্যাপটপেও রাখা আছে। সম্প্রতি তিনি দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে সেসব ভিডিওর কিছু অংশ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দলের বিভিন্ন কার্যালয়সহ সচিবালয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি সক্রিয় রয়েছেন। তারা অনেক অপকর্মের ভিডিও সংগ্রহ করেছেন নানা পদ্ধতিতে। সেগুলোই মূলত দলপ্রধানকে দেয়া হয়েছে। এই মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলে দুর্নীতিবাজ, অপকর্ম ও অনিয়মকারীসহ দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। একইসঙ্গে সরকার ও প্রশাসনে থাকা অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধেও তার অবস্থান। দুর্নীতি, অপকর্ম ও মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা ঘোষণার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের সতর্ক করেছেন একাধিকবার। এ সতর্কতার আগেই তার কাছে অনেক তথ্য ছিল। সেগুলো ছিল মূলত লিখিত অভিযোগ। ওইসব অভিযোগ নিয়ে তিনি যেসব নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা 'শত্রম্নতার জের' 'প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাজ' বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর শেখ হাসিনা ডিজিটাল তথ্য সংগ্রহের উপর জোর দেন। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক তার আস্থাভাজন নেতাদের একটি গ্রম্নপ ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। যার ফলে কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাই বেকায়দায় পড়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কয়েকজন রয়েছেন। জানা গেছে, গত ৯ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলন শেষে দলের নেতাদের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সেলফোনে সংরক্ষিত ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখান সহযোগীদের। এ সময় তিনি বিভিন্ন নেতার প্রায় দুই ডজন ছবি ও একাধিক ভিডিও ফুটেজ দেখান। এসব ছবি ও ভিডিও ফুটেজে যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও জি কে শামীমের সঙ্গে সখ্য থাকা নেতাদের নানা রূপ দেখা গেছে। এসব ছবি ও ভিডিও ফুটেজে বর্তমান ও সাবেক একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, দলের সভাপতিমন্ডলী ও সম্পাদকমন্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নানা অপকর্মের চিত্র রয়েছে। শুধু দেশেই নয়, প্রবাসে গিয়ে কোন নেতা কি করেছেন তারও বেশকিছু প্রমাণাদি রয়েছে। ওই বৈঠকে থাকা আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সম্প্রতি বিষয়টি স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে বলেন, দলপ্রধান শেখ হাসিনা অত্যন্ত ক্ষুব্ধভাবে এসব ছবি সহযোগীদের দেখানোর পাশাপাশি বলেছেন, কাউকে ছাড়া হবে না। সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ তার হাতে রয়েছে। ওই নেতা বলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ ও আস্থাভাজন নেতাদের অনেকের কর্মকান্ড দেখে নেত্রী (শেখ হাসিনা) আশাহত। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কয়েকজন সেদিন বৈঠকে থাকায় প্রধানমন্ত্রী তাদের ভিডিও ফুটেজ বা ছবি দেখাননি। তবে আকারে-ইঙ্গিতে তাদের অপকর্মের প্রমাণাদি থাকার কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যে নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তারা বৈঠকে থাকলেও চুপসে ছিলেন বলে জানা যায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন এক নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, একাধিক পদ্ধতিতে দল, নেতাদের নজরদারি করছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। শুধু দল নেতা নন, সরকার ও প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তিও রয়েছেন নজরদারিতে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাগজে বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে তা কোনো কোনো নেতার ক্যারিয়ারও ধ্বংস করে দিতে পারে।