গুলশান হামলা

দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে পরোয়ানা হাসনাত করিমকে অব্যাহতি

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০১৮, ২২:৫৬

যাযাদি রিপোটর্
হাসনাত করিম
গুলশানে হলি আটির্জান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবর রহমান এই আদেশ দেন। আদালত মামলার পলাতক দুই জঙ্গির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পলাতক দুই জঙ্গি হলেন শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন। তাদের ধরা গেল কি গেল না, এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১৬ আগস্ট জমা দেওয়ার জন্য পুলিশকে নিদের্শ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার দায় থেকে নথর্ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার খান বলেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া নথর্ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা না পেয়ে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। বুধবার মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন হাসনাত করিম। গত ২৩ জুলাই পুলিশ এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়। হোলি আটির্জান হামলার এ ঘটনায় ২১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে পাঁচজন ওই দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আটজন পরবতীর্ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন। জীবিত বাকি আটজনের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার আছেন। তারা হলেন রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা। আদালত সূত্র বলছে, আজ এই ছয়জনকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে, সরকারকে কোণঠাসা করতে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত করতে ও বিদেশি ক্রেতারা যেন চলে যায়Ñএসব কারণে হলি আটির্জানে ওই হামলা চালানো হয়। এখানে সরাসরি আন্তজাির্তক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে জঙ্গিদের এই হামলা চালিয়ে আন্তজাির্তক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকষের্ণর লক্ষ্য ছিল। আন্তজাির্তক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী থেকে প্রযুক্তিগত সুবিধা পেতে তারা হামলা চালিয়েছিলেন। হলি আটির্জানকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা বিভিন্ন জায়গায় রেকি করেছিল। ছয় মাস আগে থেকে তাদের পরিকল্পনা ছিল। হলি আটির্জানে প্রচুর বিদেশি নাগরিক খাওয়াদাওয়া করতে আসতেন। এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রায় ছিলই না। তাই এই রেস্টুরেন্টকে তারা বেছে নেয়। এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া যায় সহজে। এ ছাড়া ওই দিন ছিল শুক্রবার, ২৭ রমজান, বেশি সওয়াব পেতে তারা ওই দিন হামলা চালায়। হলি আটির্জানের হামলার ঘটনায় মোট সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ২১১ জনের। এর মধ্যে ১৪৯ জন ঘটনার প্রত্যক্ষদশীর্ ছিলেন। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অফিসার, ফরেনসিক টেস্ট যারা করেছেন, তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আটির্জানে জঙ্গিরা হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কমর্কতার্ নিহত হন। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। পরে পুলিশ ১৮ বিদেশিসহ ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন রেস্তোরাঁকমীর্। হলি আটির্জান হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হন পাঁচজন। তারা হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। আর হলি আটির্জানের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন আটজন। নারায়ণগঞ্জে নিহত হন গুলশান হামলার প্রধান পরিকল্পনকারী তামিম চৌধুরী, ঢাকার সাভারে সরোয়ার জাহান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাশারুজ্জামান ও মিজান ওরফে ছোট মিজান, মোহাম্মদপুরে নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান, রূপনগরে মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, লালবাগে তানভীর কাদেরী ও কল্যাণপুরে নিহত হন রায়হান ইবনে কবির। গ্রেপ্তার আসামি রাজীব গান্ধী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ২০১৬ সালের ৩০ জুন সকালে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসায় আসেন সারোয়ার জাহান। সবাইকে নিয়ে সেদিন ওই বাসাতেই হামলা করার জন্য বৈঠক করেন। সেখানে ১ জুলাই হলি আটির্জান বেকারিতে হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর সেদিন সকাল ১০টায় জঙ্গি বাশারুজ্জামান বসুন্ধরার ওই বাসায় এসে হামলাকারীদের কাছে অস্ত্র দিয়ে যান। এর সঙ্গে চারটি হাতে তৈরি বোমাও দেন তিনি। জঙ্গি নেতা তামিম সেদিন হামলাকারীদের জানিয়ে দেন, আসরের নামাজের পর জঙ্গি রোহান, নিবরাস ও মোবাশ্বের বাসা থেকে যেন বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পর শফিকুল ও খাইরুলকে বের হতে বলেন তামিম। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ হয়ে আক্রমণকারীরা কিছু পথ রিকশায় এবং কিছু পথ হেঁটে সেদিন গুলশানের হলি আটির্জান বেকারিতে আসেন। ইফতারের পরপরই জঙ্গিরা হামলা শুরু করেন। ভেতরে থাকা সবাইকে জিম্মি করে ফেলেন জঙ্গিরা। আক্রমণের জন্য এই পাঁচজনকে বাছাই করে পাঠান শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও রাজীব গান্ধী। হামলাকারীদের প্রশিক্ষক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম, রিগ্যান ও আবু রায়হান ওরফে তারেক। সফটওয়্যার প্রকৌশলী বাশারুজ্জামান জঙ্গিদের আনুষঙ্গিক কাজে সহায়তা করেন। আর হামলায় অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গিসহ জঙ্গি নেতাদের জন্য বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া করে দেন ব্যাংক কমর্কতার্ তানভীর কাদেরী। জঙ্গিদের ধমীর্য় প্রশিক্ষক ছিলেন নব্য জেএমবির শূরা সদস্য সারোয়ার জাহান। গুলশানে হামলার আগে ঘটনাস্থল পরিদশর্ন করে নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখে আসেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ভারত থেকে অস্ত্র সংগ্রহ এবং বোমা তৈরি ও সরবরাহে যুক্ত ছিলেন হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর, সোহেল মাহফুজ, রাশেদ, বড় মিজান ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান। মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন হলি আটির্জানে হামলার প্রস্তুতি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।