ব্যাঙের বিয়ে

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

শফিক নহোর
বাবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই দেখলাম একটা গামছা ভিজিয়ে নিয়ে ঘরের ফ্লোর মুছছে, জীর্ণশীর্ণ একটি পুরাতন কাপড় দিয়ে। ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে প্রচন্ড গরমে। আজ কদিন অসহনীয় গরম পড়ছে, মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয় তবুও। অন্য আরেকটা ভেজা কাপড় দিয়ে বাবা আমার শরীর মুছে দিলেন। বাবা একটি বালিশ টেনে নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লেন। আমাকে বললেন, খোকা আসবি নিচে? না বাবা, আমি মায়ের সঙ্গে খাটের উপরে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে কখন যেন বিদু্যৎ চলে গিয়েছিল আমি বুঝতে পারিনি, বাবা ঘুম থেকে উঠে খাটের ওপর বসে আমাকে বাতাস করছে, আকস্মিকভাবে আমার ঘুম ভেঙে গেল। জানালা খোলা বাহির থেকে কোনো প্রকার বাতাস আসছে না রুমের ভেতরে। বাবা আবারও গামছা ভিজিয়ে নিয়ে এসে আমাকে মুছিয়ে দিলেন বাবা নিজে তার শরীর মুছলেন, হা-হুতাশ করতে লাগলেন এত গরম কেন? জানালার পর্দা সরিয়ে দিলেন বাহির থেকে একচুল পরিমাণ বাতাসেও রুমের ভিতরে প্রবেশ করছে না, রুমের ভেতর আরও চারজন মানুষের নিঃশ্বাসের ভারে বন্ধ হয়ে আসছে দম। সকালে উঠে বাবা যখন আমাকে পড়াতে বসলেন তখন আমিও বাবাকে বললাম, আচ্ছা বাবা তুমি না সেদিন বললে, আগে বৃষ্টি হলে ব্যাঙ ডাকত বৃষ্টি হওয়ার আগে ব্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাক করত। এখন তো বৃষ্টি হচ্ছে না প্রচন্ড গরম পড়ছে, ব্যাঙ ডাকছে না আগে নাকি তোমরা বুঝতে ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হতো ব্যাঙের বিয়ে হতো এখন এসব হয় না বাবা? দিন দিন যেভাবে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে গেছে মানুষ শতশত গাছ কাটছে, পরিবেশের ওপর চাপ পড়েছে, প্রকৃতি আমাদের ধোঁকা দিচ্ছে, প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে যা করছে, তা ঠিকই করছে; আমরা নিজেরা পরিবেশ নষ্ট করছি, আমরা গাছ কাটলে আর বৃক্ষরোপণ করি না। তার ফল ভোগ তো আমাদের করতেই হবে। আচ্ছা বাবা বৃষ্টি হচ্ছে না কেন? বৃষ্টি না হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে বিশ্বজুড়ে ক্লাইমেট চেঞ্জ অথবা গেস্নাবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব বেশ কাজ করছে। এ বছর অতি খরা হচ্ছে সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। মানুষের জনজীবন বিপর্যয় হয়ে পড়ছে। অনিকের খুব শখ সে ব্যাঙের বিয়ে দেখবে। আচ্ছা বাবা বৃষ্টির দিনে কীভাবে ব্যাঙের বিয়ে হয়! আমাদের বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ করতে হবে না, হলে খরার থেকে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। গরম বেড়ে যাবে দিন দিন। তখন মানুষ ব্যাঙের বিয়ের কথা ভুলে যাবে। বাড়ির খোলা জায়গায় অনিক বন্ধুর বাড়ি থেকে কিছু বীজ নিয়ে এসে মাটি খুঁড়ে তা রোপণ করছে। কিছুদিন পর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে তার লাগানো গাছ দেখিয়ে বলছে, বাবা দেখ আমার রোপণ করা গাছ কত বড় হয়ে গেছে। তাহলে কি আগামী বছর এমন গরম পড়বে না। অনিক তোমার মতো সবাইকে বৃক্ষরোপণে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ক্লাইমেট চেঞ্জ অথবা গেস্নাবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব আমাদের বাঁচতে দেবে না।