এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি বাংলা দ্বিতীয় পত্র

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মো. ইমরান হোসেন, সহকারী শিক্ষক ইস্টার্ন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দনিয়া, ঢাকা য়
অসমাপিকা ক্রিয়া: প্রভাতে সূর্য উঠলে ...

প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র থেকে প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো অনুক্ত ক্রিয়াপদ ক্রিয়াপদ বাক্য গঠনের অপরিহার্য অঙ্গ। ক্রিয়াপদ ভিন্ন কোনো মনোভাবই সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না। তবে কখনো কখনো বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য বা অনুক্ত থাকতে পারে। যেমন : ইনি আমার ভাই = ইনি আমার ভাই (হন)। আজ প্রচন্ড গরম = আজ প্রচন্ড গরম (অনুভূত হচ্ছে) তোমার মা কেমন? = তোমার মা কেমন (আছেন)? বাক্যে সাধারণত 'হু' ও 'আছ' ধাতু গঠিত ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে। সমাপিকা ক্রিয়া যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের (মনোভাবের) পরিসমাপ্তি জ্ঞাপিত হয় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন : ছেলেরা খেলা করছে। এ বছর বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সমাপিকা ক্রিয়া সকর্মক, অকর্মক ও দ্বিকর্মক হতে পারে। ধাতুর সঙ্গে বর্তমান, অতীত বা ভবিষ্যৎ কালের বিভক্তি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন : * আনোয়ার বই পড়ে। এখানে ক্রিয়া-সকর্মক আর কাল-বর্তমান * মাসুদ সারা দিন খেলেছিল। এখানে ক্রিয়া-অকর্মক আর কাল-অতীত * আমি তোমাকে একটি কলম উপহার দেব। এখানে ক্রিয়া-দ্বিকর্মক আর কাল-ভবিষ্যৎ অসমাপিকা ক্রিয়া যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন : প্রভাতে সূর্য উঠলে ...। আমরা হাত-মুখ ধুয়ে ...। আমরা বিকেলে খেলতে ...। এখানে, 'উঠলে' 'ধুয়ে' ও 'খেলতে' ক্রিয়াপদগুলোর দ্বারা কথা শেষ হয়নি। কথা সম্পূর্ণ হতে আরো শব্দের প্রয়োজন। তাই এর শব্দগুলো অসমাপিকা ক্রিয়া। উপযুক্ত বাক্যগুলো পূর্ণ মনোভাব জ্ঞাপন করলে দাঁড়াবে : প্রভাতে সূর্য উঠলে অন্ধকার দূর হয়। আমরা হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম। আমরা বিকেলে খেলতে যাই। পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করতে হলে সমাপিকা ক্রিয়া অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ইয়া (পড়িয়া), ইলে (পড়িলে), ইতে (পড়িতে), এ (পড়ে), লে (পড়লে), তে (পড়তে) বিভক্তিযুক্ত ক্রিয়াপদ অসমাপিকা ক্রিয়া। অসমাপিকা ক্রিয়ার গঠন ধাতুর সঙ্গে কাল নিরপেক্ষ-ইয়া (য়ে), -ইতে (তে) অথবা ইলে (লে) বিভক্তি যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন : 'দরিদ্র পাইলে ধন হয় গর্বস্ফীত'। যত্ন করলে রত্ন মেলে। তাকে খুঁজে নিয়ে আসতে চেষ্টা করবে। ধাতুর ক্রিয়াঘটিত বাক্যে একাধিক প্রকার কর্তা (কর্তৃকারক) দেখা যায়। যেমন : এক কর্তা বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা এক বা অভিন্ন হতে পারে। যেমন : তুমি চাকরি পেলে আর কি দেশে আসবে? 'পেলে' (অসমাপিকা ক্রিয়া) এবং 'আসবে' (সমাপিকা ক্রিয়া) উভয় ক্রিয়ার কর্তা এখানে 'তুমি'। অসমান কর্তা বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা এক না হলে সেখানে কর্তাকে অসমান কর্তা বলা হয়। যেমন : শর্তাধীন কর্তা এ জাতীয় কর্তাদের ব্যবহার শর্তাধীন হতে পারে। যেমন : তোমরা বাড়ি এলে আমি রওনা হব। এখানে 'এলে' অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা 'তোমরা' এবং 'রওনা হব' সমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা 'আমি'। তোমাদের বাড়ি আসার ওপর আমার রওনা হওয়া নির্ভরশীল বলে এ-জাতীয় বাক্যে কর্তৃপক্ষেও ব্যবহার শর্তাধীন। নিরপেক্ষ কর্তা শর্তাধীন না হয়েও সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপদ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রথম কর্তৃপদটিকে বলা হয় নিরপেক্ষ কর্তা। যেমন : সূর্য অস্তমিত হলে যাত্রীদল পথচলা শুরু করল। এখানে 'যাত্রীদের' পথচলার সঙ্গে 'সূর্য' অস্তমিত হওয়ার কোনো শর্ত বা সম্পর্ক নেই বলে 'সূর্য' নিরপেক্ষ কর্তা। অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার ১. 'ইলে'>'লে' বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার ক) কার্যপরম্পরা বোঝাতে : চারটা বাজলে স্কুলের ছুটি হবে। খ) প্রশ্ন বা বিস্ময় জ্ঞাপনে : একবার মরলে কি কেউ ফেরে? গ) সম্ভাব্যতা অর্থে : এখন বৃষ্টি হলে ফসলের ক্ষতি হবে। ঘ) সাপেক্ষতা বোঝাতে : তিনি গেলে কাজ হবে। ঙ) দার্শনিক সত্য প্রকাশে : জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? চ) বিধিনির্দেশে: এখানে প্রচারপত্র লাগালে ফৌজদারিতে সোপর্দ হবে। ছ) সম্ভাবনার বিকল্পে : আজ গেলেও যা, কাল গেলেও তা। জ) পরিণতি বোঝাতে : বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি হবে। ২. 'ইয়া'>'এ' বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার ক) অনন্তরতা বা পর্যায় বোঝাতে : হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বস। খ) হেতু অর্থে : ছেলেটি কুসঙ্গে মিশে নষ্ট হয়ে গেল। গ) ক্রিয়া বিশেষণ অর্থে: চেঁচিয়ে কথা বলো না। ঘ) ক্রিয়ার অবিচ্ছিন্নতা বোঝাতে: হৃদয়ের কথা কহিয়া কহিয়া গাহিয়া গান। ঙ) ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে : সেখানে আর গিয়ে কাজ নাই। চ) অব্যয় পদেও অনুরূপ : ঢাকা গিয়ে বাড়ি যাব।