শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথচলার দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পুরস্কার হাতে আকরাম খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল -ফাইল ফটো

১৩ এপ্রিল, ১৯৯৭। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুনভাবে পথ চলা শুরুর একটি দিন। ২৩ বছর আগে এই দিনেই আইসিসি ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ। সে পথ ধরেই বিশ্ব ক্রিকেটে আজকের এই বাংলাদেশ। টাইগার ক্রিকেটাররা আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পুরো জাতিকে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সে অর্জনের ২৩ বছর পূর্তির দিনটি কাটল নীরবেই। কুয়ালালামপুরে কেনিয়ার বিপক্ষে শিরোপা জয়ের সেই রুদ্ধশ্বাস লড়াই স্মৃতিতে এখনো অমলিন। বিশ্ব ক্রিকেটের মানচিত্রে জায়গা করে নিতে এক বলে চাই ১ রান। কিলাত কিলাত মাঠে সে কী উত্তেজনা! টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হয়নি ম্যাচ। তবে মাঠের অবস্থা টের পাওয়া যাচ্ছিল বেতারে বাংলাদেশের ধারাভাষ্যকারদের কণ্ঠ শুনেই। স্নায়ুক্ষয়ী সেই মুহূর্তে বোলার ছিলেন পেসার টনি সুজি। ব্যাটিং প্রান্তে হাসিবুল হোসেন শান্ত। অপর প্রান্তে খালেদ মাসুদ পাইলট। লেগস্টাম্পের একটু বাইরের বল ব্যাটে করতে পারেননি হাসিবুল। তার প্যাডে লেগে বল চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে। উইকেটরক্ষক কেনেডি ওটিয়ানো কিছুটা দৌড়ে বল ছোড়ার আগেই দুই ব্যাটসম্যানের প্রান্ত বদল। ব্যাট উঁচিয়ে হাসিবুলের ভোঁ-দৌড়। রচিত হলো নতুন রূপকথা। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বড় মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি ধরা হয় সেই আইসিসি ট্রফি জয়কে। মনে করা হয় টাইগার ক্রিকেটে নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল ১৩ এপ্রিল। সেই আলোয় আলোকিত হয়ে এসেছে আরও অনেক অনেক সাফল্য। বাংলাদেশ এখন ওয়ানডের সাত নম্বর দল। যত অর্জনেই নাম লেখাক পথ যারা দেখিয়েছিলেন, সেই আকরাম খানের দল ইতিহাস গড়ার বীরসেনানী হয়ে থাকবেন সবসময়। টাইগারদের আইসিসি ট্রফি জয়ের পর ক্রিকেট খেলাটি ছড়াতে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে। প্রাণের খেলা ফুটবলকে ছাপিয়ে এটিই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। সব বিভেদ ভুলিয়ে পুরো দেশকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলে ক্রিকেট। আইসিসি সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আইসিসি ট্রফি। প্রথম রাউন্ডে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ হারায় হংকং ও নেদারল্যান্ডসকে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে রান রেটে এগিয়ে থেকেই সেমিফাইনালে উঠেছিল লাল-সবুজের দলটি। সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফির ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ফাইনালে টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক আকরাম খান। শুরুতেই কেনিয়ার ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেন টাইগার বোলাররা। স্টিভ টিকোলো ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যানই রানের দেখা পাননি। বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিক ৩টি এবং খালেদ মাহমুদ ও সাইফুল ইসিলাম ২টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। আইসিসি ট্রফির ফাইনাল ম্যাচটি ছিল মূলত ১২ এপ্রিল। রিজার্ভ ডে থাকায় ১৩ এপ্রিলে গড়ায় ম্যাচ। আউটফিল্ড ভেজা থাকায় সকালটা কাটে অপেক্ষায়। মাঠের পানি শুকাতেই চলে যায় আধাবেলা। ফলে ছোট হয়ে আসে ম্যাচের দৈর্ঘ। ৫০ ওভারে ২৪২ রানের বদলে ডাকওয়ার্থ ও লুইস মেথডে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৬৬। দুই উইকেট হাতে রেখে শেষ বলে টাইগাররা পৌঁছায় লক্ষ্যে। কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফির শিরোপা ঘরে তুলেছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার টিকিটাটাও নিশ্চিত করেছিল আকরাম খানের দল। বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব নববর্ষের আগের দিন ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের অভু্যদয় ঘটে। টাইগারদের এই হুংকার বিশ্ব শুনেছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপেই। স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে সূচনা হয়। এরপর সেই বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ জানান দিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন এক পরাশক্তির আগমনী বার্তা। তারই পর্যায়ক্রমে ক্রিকেট বিশ্বে তৈরি হয়েছে আজকের এই বাংলাদেশ। সাকিব-তামিম-মাশরাফির হাত ধরে ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম পরাশক্তি এখন বাংলাদেশ। আইসিসি ট্রফি জয়ের স্মৃতি মনে করিয়ে খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, 'আমি ওই টুর্নামন্টে সেরা উইকেটকিপার হয়েছিলাম, সেটা একটি ব্যক্তিগত অর্জন। অবশ্যই একটি কৃতিত্ব, প্রাপ্তি। স্বীকৃতিও। একটা ভালো লাগা আছে এখনো। মাঝে-মধ্যেই মনে হয় ৯৭'র আইসিসি ট্রফির সেরা উইকেটকিপারের পুরস্কার পেয়েছিলাম আমি। তবে তা নিয়ে আমার বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। আমরা আইসিসি ট্রফি জিতেছি এবং দল হিসেবে সবার সেরা হয়েছি, সেটাই তো অনেক বড় ছিল।' নিজের কৃতিত্বের চেয়ে পাইলট সৃষ্টিকর্তার গুণগানই বেশি গাইলন। তার বদ্ধমূল ধারণা, ওই আইসিসি ট্রফিতে তার ভাগ্যটা খুব ভালো ছিল। তাই তো মুখে এমন কথা, 'আলস্নাহ আমার বিশেষ সহায় ছিলেন। আমি তার অনেক আনুকূল্য চেয়েছিলাম, পেয়েছিও। সবমিলিয়ে আমার ওই আসরটি খুব ভালো কেটেছে। সৃষ্টিকর্তার অনেক কৃতজ্ঞতা। তবে আমার নিজের তেমন কোনোই বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। আমার মনে হয় একজন পারফরমার হিসেবে জায়গামত পারফরম করা, দলের প্রয়োজনে অবদান রাখাই তো আমার কাজ। আমি সেটা করতে পেরেছি। সেটাই ভালো লাগার।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে