বাড়ছে প্রাণহানি

করোনায় দিশেহারা ভারত একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত

দেশটিতে সুস্থ হওয়ার হারও আশাব্যঞ্জক ভারতকে কটাক্ষ নেপালের প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ | ২১ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিপাকে পরিযায়ী শ্রমিকরা
করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড গড়েছে ভারত। বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারত নতুন করে পাঁচ হাজার ৬১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো এক লাখ ছয় হাজার ৭৫০। এর মধ্যে তিন হাজার ৩০৩ জনের মৃতু্য হয়েছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই করোনায় নতুন করে আরও ১৪০ জনের মৃতু্য হয়েছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ৪২ হাজার ২৯৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ দেশটিতে করোনাভাইরাস থেকে পুনরুদ্ধারের হার বুধবার সকালে বেড়ে ৩৯ দশমিক ৬২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রাজ্য মহারাষ্ট্র। এরপরই রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে মঙ্গলবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬৮৮ জন। এ নিয়ে রাজ্যটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ হাজার ৪৪৮ জন। মঙ্গলবার পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের পর আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় স্থানে ছিল গুজরাট। কিন্তু একদিনের মধ্যে গুজরাটকে টপকে গেল তামিলনাড়ু। গুজরাটে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ১৪০ জন। এদিকে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্য থেকে গিয়ে পৌঁছেছে। এখন এই পরিযায়ীদের সঙ্গে পালস্না দিয়ে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। রাজ্যের রাজধানী লক্ষ্ণৌ থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে যে বাসটি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ফিরেছে, তাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কমপক্ষে ৫০ জনের সন্ধান মিলেছে। উত্তরপ্রদেশে এখনও পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত চার হাজার ৯২৬ জন। সেখানে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৫। মৃতু্য হয়েছে ৯১ হাজার ৮৭৮ জনের। মৃতের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৪২২। তৃতীয় স্থানে থাকা ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ৩২ হাজার ১৬৯। চতুর্থ স্থানে থাকা ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ২৫। পঞ্চম স্থানে থাকা স্পেনে মৃতের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৭৮। উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৬৩৮। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, 'বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।' অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিসে পেইনি বলেছেন, করোনা নিয়ে চীনের স্বচ্ছতার বিষয়টি সর্বোচ্চ উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। ভারতকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ নেপালের প্রধানমন্ত্রীর এদিকে, দিলিস্নর দাবিকৃত বিতর্কিত ভূখন্ডকে নিজ দেশের মানচিত্রে যুক্ত করার পর ভারতকে কড়া ভাষায় কটাক্ষ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি অলি। দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, 'ভারত থেকে আসা ভাইরাস চীনা এবং ইতালীয় ভাইরাসের চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী।' একই সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে নেপালে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগও করেছেন এই প্রধানমন্ত্রী। পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে অলি বলেন, 'যারা অবৈধপথে ভারত থেকে নেপালে আসছেন, তারাই আমাদের দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া অবৈধপথে লোকজনকে ভারত থেকে দেশে আনার জন্য স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি এবং দলীয় নেতা দায়ী।' তিনি বলেন, 'বাইরে থেকে লোকজন ব্যাপক পরিমাণ আসায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ভারতীয় ভাইরাস, চীন এবং ইতালির ভাইরাসের চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী। অনেক বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর এই সমালোচনায় দিলিস্নর কর্মকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।' প্রতিবেশি এ দুই দেশের অমীমাংসিত ভূখন্ড কালাপানিতে ভারতের একটি সড়ক নির্মাণ ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা দেখা দেয়। একদিন আগে নেপালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে কালাপানিকে নিজ দেশের ভূখন্ড হিসেবে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের একদিন পর পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে অলি বলেন, কালাপানি-লিমপিয়াধুরা-লিপুলেখ এলাকাকে যেকোনও মূল্যে ফিরিয়ে আনবে নেপাল। বিতর্কিত এই এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে ভারত। ভারত এবং নেপালের উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে প্রায় এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের পর থেকে কালাপানি-লিমপিয়াধুরা এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন রেখেছে নয়াদিলিস্ন। কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকাকে নিজ ভূখন্ড বলে দাবি করছে নেপাল। গত ৮ মে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং উত্তরাখন্ডের লিপুলেখ পাসের সঙ্গে কৈলাশের মনসারোভার এলাকার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি নতুন সড়কের উদ্বোধন করেন। নেপাল এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সেখানে একটি নিরাপত্তা চৌকি বসানোর ঘোষণা দেয়।