করোনা পর্যালোচনা

মৃতু্যহার কম দক্ষিণ এশিয়ায়

মোট মৃতু্যর ৯০ শতাংশই বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে জুনশেষে মৃতু্যহার শূন্যে নামার আশা বিশেষজ্ঞের

প্রকাশ | ২১ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত জনবহুল হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যহার পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অনেক কম। উপমহাদেশে মৃতু্যহার বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এত কম হওয়ার কারণ কী, তা জানতে এরই মধ্যে গবেষণা শুরু করেছেন বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এবিপি নিউজ যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রখ্যাত 'দ্যা ল্যানচেট' মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মে মাসের শুরু পর্যন্ত গোটা বিশ্বে যত মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোতে। চীন, ব্রাজিল ও ইরানকে ধরলে তা ৯৬ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা সেন্টার থেকে দেওয়া সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে, পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার অনেক জনবহুল দেশ এবং আফ্রিকার কিছু অংশের অনেক দরিদ্র দেশেও মৃতু্যহার তুলনামূলকভাবে কম। ইউরোপে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর মৃতু্যহার (সিএফআর) সবচেয়ে বেশি। গড়ে প্রতি একশ জনে ১৫ দশমিক ২ নিয়ে ফ্রান্সে তা সর্বোচ্চ। যথাক্রমে যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক ৪, ইতালিতে ১৪, স্পেনে তা ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতু্যহার ৬ শতাংশ। বিপরীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো কোভিড-১৯ মৃতু্যহার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এই অঞ্চলে করোনায় মৃতু্যহার সবচেয়ে বেশি ভারতে; ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানে ২ দশমিক ২, বাংলাদেশে ১ দশমিক ৫ এবং শ্রীলঙ্কায় কোভিড-১৯ এ মৃতু্যহার ১ শতাংশ। ল্যানচেটে প্রকাশিত নিবন্ধে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ক্যাশ ও বিক্রম প্যাটেল লিখেছেন, 'বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো কোনো মহামারিতে পশ্চিমে ধনী দেশগুলোর তুলনায় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে মৃতু্যহার কম।' বিষয়টা অনেকটা অবাক হওয়ার মতো। তারা বলছেন, 'ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা এসব দেশবাদে বিশ্বের বাকি দরিদ্র দেশগুলো মহামারি কিংবা অন্যান্য রোগের আধারে যখন পরিণত হয় তখন পশ্চিমের দেশ ও ফাউন্ডেশনগুলো তাদের এর থেকে রক্ষায় নানা উপদেশ পরামর্শ ছাড়াও অর্থ সহযোগিতা করত। কিন্তু এবার সেই চিত্র ভিন্ন। \হ জুন শেষে মৃতু্যহার শূন্যে নামার আশা বিশেষজ্ঞের এদিকে, বর্তমানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে দৈনিক মৃতু্যহার যেভাবে কমছে তাতে করে আশা করা যায় আগামী মাস শেষে অর্থাৎ জুলাইয়ে করোনায় মৃতু্যহার শূন্যতে নেমে আসতে পারে। এমনটাই আশা করছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির 'সেন্টার ফর এভিডেন্স-বেসড' মেডিসিনের ডিরেক্টর অধ্যাপক কার্ল হেনেঘান। যুক্তরাজ্যে বিগত কয়েক সপ্তাহে করোনায় দৈনিক মৃতু্যহারের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন আভাস দিয়েছেন এই অধ্যাপক। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৩৪১ জন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (ওএনএস) এক পরিসংখ্যান বলছে, মঙ্গলবার দেশটিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৪৫ জন (দৈনিক ভিত্তিতে গত সপ্তাহের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম)। তার আগের সপ্তাহে ১১ মে মারা যায় ৬২৭ জন। ৯ এপ্রিল এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৫২ জন। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে দৈনিক মৃতের হার কমছে। তার আগে গত ৮ মে ছিল শুক্রবার। ওএনএস বলছে, ওই সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের কেয়ার হোমগুলোতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৪৮ জন। তার আগের সপ্তাহে ছিল ৬ হাজার ৪০৯ জন। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেয়ার হোমে মৃতের সংখ্যা কমেছে ২ হাজার ১৬২১ জন। এর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১ হাজার ৬৬৬ জন। যুক্তরাজ্যে বিগত তিন সপ্তাহের পরিসংখ্যান তুলে ধরে অধ্যাপক কার্ল হেনেঘান বলেছেন, 'আমি মনে করি, যদি করোনায় মৃতের হার এভাবেই কমতে থাকে তাহলে আমি বলব, জুন শেষে কোভিড-১৯ আক্রান্ত লোকজনকে খুঁজে পাওয়াই কষ্ট হয়ে যাবে।? বর্তমানে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে আঘাত হেনেছে করোনা। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯১২ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৫২৫ জন। তবে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে এ পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৯৩ হাজার ৫৩৩ জন। এ পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি করোনার।