যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন জিনপিং

লাদাখে ভারত ও চীনের সেনা মুখোমুখি, উত্তেজনা

দুই দেশই সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সীমান্তে ভারতীয় সেনা -ফাইল ছবি
করোনার মধ্যেই লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। ডোকলামের পর এতটা উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। এদিকে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটির সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। চলমান এ উত্তেজনার মধ্যেই চীনা প্রেসিডেন্টের যুদ্ধের প্রস্তুতির মন্তব্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। জিনপিং বলেন, 'যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করে তুলতে হবে। সে জন্য সামগ্রিক প্রশিক্ষণ জরুরি।' সংবাদসূত্র : ডয়চে ভেলে, বিবিসি, এনডিটিভি মে মাসের প্রথমে একবার দুই দেশের সেনার মধ্যে হাতাহাতি হয়ে গেছে। ভারত ও চীনের আড়াইশ সেনা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। তারপর কমান্ডাররা আলোচনা করে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু উত্তেজনা কমেনি, বরং বেড়েছে। সম্প্রতি দুই দেশই পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিশেষ করে প্যাংগং ও গালয়ান উপত্যকায় সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে। চীন বাঙ্কার তৈরি করেছে। অস্থায়ী পরিকাঠামোও তৈরি করেছে। সেখানে তারা দুই থেকে আড়াই হাজার সেনা বাড়িয়ে নিয়েছে। ভারতও একই রকমভাবে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে। দুই দেশের সেনা একেবারে মুখোমুখি। উত্তেজনা রয়েছে। ২০১৭ সালে ডোকলামের পরও এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যেটা এবার পূর্ব লাদাখে হয়েছে। জানা গেছে, ভারতও সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে। চীনের সেনার তুলনায় ভারতের সেনার সংখ্যা বেশি। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে উদ্বেগের বিষয় হলো, গালয়ান উপত্যকায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চীনা সেনার উপস্থিতি ও সংখ্যা বাড়ানো। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, 'প্যাংগং লেকের দুই-তৃতীয়াংশ চীনের অধিকারে, এক-তৃতীয়াংশ ভারতের। চীন তাদের অধিকারের এলাকা বাড়াতে চায়। তার পাশে যে পাহাড় আছে, সেগুলোর নামকরণ হয় ফিঙ্গার দিয়ে। ফিঙ্গার ওয়ান, টু, থ্রি। আমাদের দাবি, ফিঙ্গার পাঁচ পর্যন্ত আমাদের। আবার চীন বলে ফিঙ্গার ৯ থেকে তিন পর্যন্ত তাদের। এ নিয়ে বিরোধ আছে। যা খবর বেরুচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, চীন ওখানে এক ব্যাটালিয়ন সেনা অতিরিক্ত নিয়ে গেছে। কামান নিয়েছে। আমাদেরও ফিল্ড গান, মাউন্টেড গান নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা চাই না উত্তেজনা বাড়ুক। বেশি উত্তেজনা হলে ফ্ল্যাগ মিটিং হচ্ছে।' অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডিএস হুডার মতে, পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক নয়। বরং চিন্তাজনক। কোনো দেশ যখন সীমান্তে বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এভাবে শক্তি দেখায়, আগ্রাসনের চেষ্টা করে, তখন তার পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে। করোনার মধ্যে চীনের এমন সিদ্ধান্তের পেছনেও কোনো কারণ থাকবে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, 'করোনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতও চীনকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। তাই চীনা সেনাবাহিনীর লাদাখে এভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার একটা কারণ এটা হতে পারে।' 'নিউ ইনডিয়ান এক্সপ্রেস'র 'বিজনেস এডিটর' জয়ন্ত রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, 'অর্থনৈতিক কারণে এটা হচ্ছে না। সব দেশ একই রকমভাবে চীনা জিনিসের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করছে। ভিয়েতনাম করেছে, কম্বোডিয়া করেছে। জাপানও করেছে। চীন তাতে রাগতে পারে। প্রত্যাঘাতও করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেনা পাঠিয়ে রক্তচক্ষু দেখানোর চেষ্টা করছে না। আমার ধারণা এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে যা মনে হয়েছে, চীন অনেক বেশি চিন্তিত আমাদের কাশ্মীর নীতি নিয়ে। ভারত সম্প্রতি জাতিসংঘে একটা ম্যাপ দিয়েছে, যেখানে আকসাই চীনসহ গোটা কাশ্মীরকে ভারতের এলাকা বলে দাবি করা হয়েছে। চীনের বরাবরের দাবি, আকসাই চীন তাদের। এখনো এলাকাটা তাদের অধিকারে। এ ছাড়া তাদের মনে হতে পারে, ভারত হয়তো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই তারা এভাবে চাপ দিচ্ছে।' উৎপল ভট্টাচার্যের দাবি, 'এই চাপ দেওয়ার নীতি চলতে থাকবে। তবে চীন ভালো করেই জানে ১৯৬২-র ভারত এবং ২০২০-র ভারতের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। ওরা জানে আমাদের শক্তি কতটা। ওরা বেস্না হট, বেস্না কোল্ড নীতি নিয়ে চলছে। আমরাও তাই করছি।' এর মধ্যে নেপালের সঙ্গেও ভারতের মতবিরোধ হয়েছে। ভারত আসলে মানস সরোবরে যাওয়ার একটা রাস্তা বানাচ্ছে উত্তরাখন্ডে। তা নিয়ে আপত্তি নেপালের। তাতে ভারতের সেনাপ্রধান বলেছেন, অন্য একটা দেশের নির্দেশে নেপাল এই কাজ করেছে। তাতে নেপালও কড়া বিবৃতি দিয়েছে। আসলে ভারত-নেপাল সীমান্তে কালী নদী এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। ভারত বলছে এক নম্বর কালী নদী থেকে আমাদের এলাকা। নেপাল বলে, তিন নম্বর কালী নদী থেকে ভারতের এলাকা। উৎপল ভট্টাচার্যের বক্তব্য, চীনও এখানে নেপালকে উসকাচ্ছে। তাই তারা রাস্তা বানানো নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে।' পাকিস্তানের সঙ্গেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলি চলছে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান জঙ্গিদের ঢোকাতে চাইছে বলে গোলাগুলি চালাচ্ছে। মোট কথা, করোনাকালেও ভারতের সীমান্ত বেশ অস্থির। তবে সব চেয়ে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে লাদাখে চীনের সঙ্গে।