করোনা মহামারি

মৃতু্যতে লাখ ছাড়াল যুক্তরাষ্ট্র

করোনার অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠেছে ব্রাজিল লকডাউন শিথিলে বিশ্বে প্রকোপ নতুন করে বাড়ছে

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হুহু করে। অনেক জায়গায় লকডাউন তুলে নেয়ার দাবি তোলা হলেও মৃতের সংখ্যা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে। তাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই দেশটির লং আইল্যান্ডে একটি সাইকেলের দোকান থেকে সাইকেল কিনে এভাবে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করেন এক ক্রেতা। ছবিটি বুধবার তোলা -সিনহুয়া
চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে মৃতু্যর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছে এক লাখ দুই হাজারের বেশি। এই সংখ্যাটি কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানে ৪৪ বছরের বেশি সময়ের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর যত লোক নিহত হয়েছে, তার প্রায় সমান। আর করোনায় অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্যর সংখ্যাও বেশি। দেশটিতে বর্তমানে শনাক্ত হওয়া আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার, যা বিশ্বের মোট সংক্রমণের প্রায় ৩০ শতাংশ। গত ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে প্রথম সংক্রমণের কথা জানা গিয়েছিল। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, পিটিআই, এপি প্রায় দুই মাস আগে একটি সমীক্ষা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা-মৃতু্য এক থেকে দুই লাখ পর্যন্ত হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে সময় এই তথ্যকে গুরুত্ব দেননি। বলেছিলেন, প্রতি বছর সাধারণ ফ্লুয়েই বহু হাজার মানুষের মৃতু্য হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে করোনাকে তিনি আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। প্রথমে ট্রাম্পের অনুমান ছিল, ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোক মারা যাবে, পরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার। এরপর 'এক লাখের নিচে থাকবে' বলেও মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু মে মাসের শেষ সপ্তাহে এসে ঠিক সেই ঘটনাই ঘটলো। যুক্তরাষ্ট্রে এখন মৃতের সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ছাড়িয়ে গেল। আগের চেয়ে সংক্রমণ কমলেও, এখনো সে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে লকডাউন ক্রমশ তুলে দেওয়া হচ্ছে। খুলছে দোকানপাট, অফিস। প্রেসিডেন্ট বারবার স্বাভাবিক জনজীবনের পক্ষে কথা বলছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও কিছু দিন লকডাউন চললে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার যে ঢেউ উঠেছিল, তা আরও খানিকটা স্তিমিত করা সম্ভব হবে। এড়ানো যাবে মৃতু্য। কিন্তু এখনই সব খুলে দিলে দ্বিতীয়বার করোনার ঢেউ আসতে পারে। তা সামাল দিতে আরও বেগ পেতে হবে প্রশাসনকে। এবং সে ক্ষেত্রে মৃতু্যর সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। যদিও মার্কিন প্রশাসন সে কথায় এখন পর্যন্ত বিশেষ কান দেয়নি। করোনার অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠেছে ব্রাজিল এদিকে, গত কয়েক সপ্তাহে করোনার অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠেছে ব্রাজিল। রাশিয়াকেও পেছনে ফেলে করোনার তালিকায় দুই নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে পেলের দেশ। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছে চার লাখ ১৫ হাজারের বেশি। মৃতু্য হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার। সুস্থ হয়েছে এক লাখ ৬৬ হাজার মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাজিলে মৃতু্যর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় চোখে পড়ার মতো বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রাজিলে রেকর্ড মৃতু্য হয়েছে। এক হাজার ৮৬ জন করোনায় মারা গেছে। এক দিনে আক্রান্ত হয়েছে ২০ হাজার ৫৯৯ জন। যদিও ট্রাম্পের মতোই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো করোনাকে সময় মতো গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ আছে। তিনি এখনো বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে বিরোধীদের অভিযোগ। করোনার নিয়মও তিনি মানছেন না। বিশ্বে প্রকোপ নতুন করে বাড়ছে এদিকে, বিশ্বে করোনার প্রকোপ নতুন করে বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন যত শিথিল করছে, ততই নতুন করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এ বিষয়ে দেশের মানুষকে সতর্ক করেছেন। করোনার দ্বিতীয় দফার ঢেউ আসছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। কিন্তু সমস্যা হলো, প্রায় দুই তিন মাস ধরে লকডাউনের কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে কাজ শুরু না করলে অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বাধ্য হয়েই করোনাকে তোয়াক্কা না করে লকডাউন তুলতে বাধ্য হচ্ছে বহু দেশে। চীন জানিয়েছে, আরও সাতটি দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ কিছু দিনের মধ্যেই শুরু করা হবে। ভারতেও দেশের ভেতর বিমান যোগাযোগ শুরু হয়ে গেছে। জুন থেকে বিদেশেও বিমান চলাচল শুরু হবে বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন। ভারতে ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউন রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আরও দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু কড়াকড়ি আরও কমে যাবে। বস্তুত, লকডাউনের কড়াকড়ি আগেই কমে গিয়েছিল। এবং তার ফলে প্রায় প্রতিটি শহরে করোনা সংক্রমণ দুই গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।