হুঁশিয়ারি গুতেরেসের

অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞের মুখে বিশ্ব

শত বছর আগের মহামন্দা পরিস্থিতি আবারও ফিরে আসতে পারে ২৪ ঘণ্টায় এক লাখ ১৬ হাজারের বেশি আক্রান্তের রেকর্ড

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
মহামারি করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আর শুধু এ কারণটিই বিশ্বে 'অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞের' কারণ হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষের পাশপাশি ভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক উৎপাদনে ৮ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি; যা শত বছর আগের মহামন্দা পরিস্থিতি আবারও ফিরে আসতে পারে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এনডিটিভি 'ফাইন্যান্সিং ফর ডেভেলপমেন্ট'র একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জাতিসংঘের প্রধান বৃহস্পতিবার আরও বলেন, তবে সব দেশ যদি একতা ও সংহতির সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। গুতেরেস বলেন, 'আমাদের অবশ্যই এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে হবে। তবে এই মহামারি আমাদের নানা অসামঞ্জস্যতা সামনে এনেছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি সত্ত্বেও ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কারণে আমরা নজিরবিহীন মানবিক সংকটের মধ্যে পড়েছি।' নজিরবিহীন এই সংকট মোকাবিলায় সব দেশকে সংহতি ও একতা বজায় রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস। ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলে জানান তিনি। এর ফলে ৮ দশমিক পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের বৈশ্বিক উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এরপর জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হলনেস ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন গুতেরেস। এ সময় বিশ্বব্যাপী দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অসমতার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন তারা। কনফারেন্স পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পরকে এড়িয়ে চলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গুতেরেস বলেন, 'দুটি দেশই আমাদের কাজের সঙ্গে সমন্বয় করছে।' সম্প্রতি নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি, বাণিজ্যযুদ্ধ ও সর্বশেষ হংকং নিরাপত্তা বিল নিয়ে তুমুল দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। সমালোচকরা মনে করেন, মহামারির সময় বিশ্বের দুই ক্ষমতাধর দেশের মুখোমুখি অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ২৪ ঘণ্টায় এক লাখ ১৬ হাজারের বেশি আক্রান্তের রেকর্ড এদিকে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পালস্না দিয়ে বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডওমিটারের' পরিসংখ্যান বলছে, বৃহস্পতিবার একদিনেই এক লাখ ১৬ হাজার ৩০৪ জন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে পাঁচ হাজার ৪২৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মারা গেছে তিন লাখ ৬৩ হাজার। অপরদিকে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে, ২৬ লাখের বেশি মানুষ। নতুন করে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে এক হাজার ২২৩ জন। এরপরই রয়েছে ব্রাজিল। সেখানে নতুন করে মৃতু্য হয়েছে এক হাজার ৬৭ জনের। অপরদিকে, মেক্সিকোতে মারা গেছে ৪৬৩ জন এবং যুক্তরাজ্যে ৩৭৭ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ও মৃতু্যতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭০ হাজার এবং মারা গেছে এক লাখ তিন হাজারের বেশি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের চেয়ে সেখানেই আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপরেই রয়েছে নিউ জার্সি, ইলিনয়েস, ক্যালিফোর্নিয়া ও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্য। এরপরই রয়েছে ল্যাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। সেখানে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৪০ হাজার। অপরদিকে মারা গেছে প্রায় ২৭ হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৮৭ হাজার ৬২৩ এবং মৃতু্য হয়েছে চার হাজারের বেশি। স্পেনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৬ এবং মারা গেছে ২৭ হাজারের বেশি। অপরদিকে, যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃতু্য হয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষের।