চীন-ভারত

উত্তেজনা সহজে মিটবে না

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই ভারতের উত্তর সীমান্তে লাদাখে চীনের অগ্রযাত্রা ও বাড়তি সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের মাঝে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলএসি রয়েছে, গত কয়েকদিনে সেই এলএসি বরাবর বিভিন্ন স্থানে ভারত-চীনের সেনারা সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। চীনা সেনারা ঘাঁটি তৈরি করেছে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালির মতো সম্পূর্ণ নতুন জায়গাতেও, যেখানে আগে কোনো বিরোধের ইতিহাস ছিল না। তাহলে কেন আচমকা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এই ধরনের সামরিক উত্তেজনা তৈরি হলো, তা পর্যবেক্ষকদেরও বেশ ধন্দে ফেলেছে। ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট ও সুচিহ্নিত আন্তর্জাতিক সীমানা নেই। তার বদলে আছে কয়েক হাজার কিলোমিটার লম্বা একটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল, যা লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। কী ঘটছে চীন-ভারত সীমান্তে? ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্ট অনুসারে, গত দুই-তিন সপ্তাহের ভেতর চীনা সেনাবাহিনী এই 'এলএসি' অন্তত চার জায়গায় অতিক্রম করে অবস্থান নিয়েছে। সেই জায়গাগুলো হলো লাদাখের প্যাংগং সো বা প্যাংগং লেক, গালওয়ান নালা ও ডেমচক; আর সিকিমের নাকু লা। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা তার বস্নগে লিখেছেন, এই প্রথম পুরো গালওয়ান উপত্যকাতেই (ভ্যালি) চীন নিজেদের বলে দাবি করছে। শুক্লার কথায়, 'এই ইনট্রুশনগুলো কিন্তু হয়েছে বিরাট একটা জায়গা জুড়ে। উত্তর লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ লাদাখের ডেমচক, আর সেখান থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে সিকিমের নাকু লা পাস পর্যন্ত। যা থেকে বোঝা যায়, এই গোটা অভিযানটার পরিকল্পনা হয়েছে রাজনৈতিকভাবে খুবই উঁচু মহলে, এমন নয় যে স্থানীয় কমান্ডাররা তাদের ইচ্ছেমতো এগুলো করছেন।' ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কী? গত ২২ মে ভারতের সেনাপ্রধান এমএম নারাভানে লাদাখে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসেছেন, ওই সেক্টরের সেনাদের এলএসি-র দিকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। লাদাখ সফরের আগে জেনারেল নারাভানে বলেছিলেন, 'আসলে যেহেতু এলএসি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত নয়, তাই দুই পক্ষই এই সীমান্তকে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে। দুই দেশের সেনারাও ততদূরই টহল দেয়, যতদূর পর্যন্ত তারা নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে। আর যখনই দুই দেশের বাহিনী একই সময়ে একই জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, তখন এরকম সংঘাত প্রায়ই ঘটে থাকে। লাদাখে আর সিকিমে যে একই সময়ে সংঘাত হলো এটা নেহাতই সমাপতন; এটা থেকে খুব বেশি কিছু খোঁজার মানে হয় না।' তবে এর কদিন পরেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক কড়া বিবৃতি দিয়ে জানায়, ভারতীয় সেনার স্বাভাবিক টহল বা পেট্রলিং প্যাটার্নকে বাধা দিয়ে চীনই বরং সীমান্তে নানা কর্মকান্ড চালাচ্ছে। ১৯ মে বেইজইংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ট্রেসপাসিং বা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনেছিল- দিলিস্ন সেটাও জোরালোভাবে অস্বীকার করে। আবার গত ২৪ মে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তার বার্ষিক সাংবাদিক বৈঠকে কিন্তু ভারতকে নিয়ে একটিও শব্দ বলেননি। দিলিস্নর ওপর চাপ প্রয়োগের পরিকল্পনা? চীনে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অশোক কান্থা মনে করেন, প্রত্যেক গ্রীষ্মে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে যেমন হাতাহাতি বা মারামারি হয়, তার চেয়ে এবারের সংঘাত কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। কান্থা বলেন, 'প্রথমত চীন এবার অনেক বেশি আগ্রাসী, দ্বিতীয়ত একসঙ্গে অনেকগুলো জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। তা ছাড়া গালওয়ান উপত্যকায় এলএসি-র নতুন ব্যাখ্যা এনে নতুন একটা ফ্রন্ট খুলতে চাইছে। এর কারণ কী বলা মুশকিল, তবে হতে পারে তারা বিতর্কিত সীমানার ওপর নিজেদের দাবি জোরেশোরে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। আবার এটা তাদের প্রেসার ট্যাকটিক্সের অংশও হতে পারে, যার মাধ্যমে তারা মনে করিয়ে দিতে চায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা ইসু্যতে বা এমন কি কোভিডের প্রশ্নেও ভারত যেন চীনের সংবেদনশীলতা খেয়াল রাখে।' বছর তিনেক আগে ডোকলাম উপত্যকায় চীন ও ভারতের সেনারা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে। ফলে লাদাখের এই সামরিক উত্তেজনা অনেক বেশি এবং এটাও খুব সহজে মিটবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ