কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে উত্তাল বিক্ষোভের মধ্যেই থানায় আগুন

প্রকাশ | ৩০ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিস। এরই মধ্যে বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভকারীরা মিনিয়াপলিসের একটি থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ওই অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সংবাদসূত্র : সিএনএন, বিবিসি মিনিয়াপলিসের বিক্ষোভে অংশ নেয় কয়েক হাজার আন্দোলনকারী। তাদের অনেককে সংলগ্ন বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নিতে দেখা যায়। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদও বিক্ষোভ শান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং একদিকে থানার ভেতরে 'ফায়ার অ্যালার্ম' বেজে চলছে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা উলস্নাস করছে। পুলিশের বেষ্টনী ঘিরে লোকজন আতশবাজি পোড়চ্ছে। তবে কোনো সাইরেনের শব্দ পাওয়া যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিনির্বাপনকর্মীদের কোনো তৎপরতাও পরিলক্ষিত হয়নি। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পুলিশ হিসাব কষেই বলপ্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা হয়তো এ কারণে যে, পুলিশ জানে তাদের উপস্থিতি উত্তেজনার পারদ আরও বাড়িয়ে তুলবে। এতে করে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়বে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'এটি একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি। আমার মনে হয় পুলিশও সেটা অনুধাবন করছে।' ২০২০ সালের ২৫ মে পুলিশ জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে খুন করলে এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই হত্যাকান্ডের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে আন্দোলন তীব্রতা পায়। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। নিহত ব্যক্তি নিরস্ত্র ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে তাকে কাতরাতে দেখা যায়। তিনি বারবার শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে বলছিলেন, 'আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।' কৃষ্ণাঙ্গদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন জর্জ ফ্লয়েড। এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রথমে স্থানীয়রা রাস্তায় নামলেও পরে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঢল নামে। জর্জ ফ্লয়েডের সঙ্গে যা ঘটেছে তাকে আপত্তিকর হিসেবে উলেস্নখ করেছেন মিনেসোটার সেইন্ট পল এলাকার মেয়র মেলভিন কার্টার। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভকে 'বোধগম্য' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে মিনিয়াপোলিসে অরাজকতা ঠেকাতে মেয়র জ্যাকব ফ্রের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছেন। মেয়র শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী পাঠিয়ে 'সব ঠিক করা হবে' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, যখন লুটপাট শুরু হবে, তখন গুলিও শুরু হবে। ২০১৯ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত সহস্রাধিক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকান্ড যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে নাগরিকদের নিহতের উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সামনে এনেছে। সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশটিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে এক হাজার ১৪ জন। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, নিহতদের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ। 'ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স' নামে একটি বেসরকারি সংস্থার চালানো জরিপে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তিন গুণ বেশি মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গরা। দেশটিতে পুলিশি নির্মমতার প্রতিক্রিয়ার ফলে গড়ে উঠেছে 'কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান' নামের আন্দোলন। গায়ক বিয়ন্স, বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রন জেমস-এর মতো তারকারা এই আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানান।