'চীনের পদক্ষেপ দুর্ভাগ্যজনক'

হংকংয়ের বাণিজ্য অগ্রাধিকার বাতিল করলেন ট্রাম্প

হংকং ছাড়তে চান অনেকে

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ৩১ মে ২০২০, ১০:৩০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

হংকংয়ে চীনবিরোধী আন্দোলনকে দমন করতে বেইজিং নতুন নিরাপত্তা আইন পাস করায় শাস্তি হিসেবে বাণিজ্য ও ভ্রমণ ক্ষেত্রে হংকংয়ের অগ্রাধিকার মর্যাদা বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হংকং নিয়ে চীনের এই পদক্ষেপকে 'দুর্ভাগ্যজনক' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, ডয়চে ভেলে, রয়টার্স দেশদ্রোহিতা, হংকংকে পৃথক করার ও গণবিক্ষোভের চেষ্টা করলে শাস্তির বিধান রেখে গত বৃহস্পতিবার চীনের 'ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস' নিরাপত্তা বিলের অনুমোদন দেয়। চীন বলছে, গত বছর টানা কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতা দেখা হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, বৈধ সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা, সন্ত্রাসবাদ ও বিদেশি হস্তক্ষেপ রুখতে এ নিরাপত্তা আইন জরুরি হয়ে পড়েছিল। তবে আধা-স্বায়ত্তশাসিত হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের দাবি, এর মাধ্যমে বেইজিং মৌলিক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। শুক্রবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আর হংকংকে চীন থেকে পৃথক হিসেবে বিবেচনা করছেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'চীন এক দেশ দুই ব্যবস্থাকে এক দেশ এক ব্যবস্থায় পরিবর্তন করেছে। এটা হংকংয়ের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। হংকংয়ের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে চীন।' তিনি জানান, হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন যারা কেড়ে নিয়েছে, ওয়াশিংটন সেইসব চীনা ও হংকং কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। তবে কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে, সে ব্যাপার ট্রাম্প কিছু জানাননি। এই বিলটি পাসের পর হংকংয়ের সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক যুক্তরাজ্য বলেছে, চীন এই আইনটি নিয়ে আরও অগ্রসর হলে হংকংয়ে যেসব ব্রিটিশ ন্যাশনাল (বিদেশি) পাসপোর্টধারী (বিএনও) আছে, তাদেরকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথে হাঁটবে লন্ডন। এই পদ্ধতিতে বিএনও মর্যাদাধারী ৩০ লাখ লোক যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পেতে পারে বলে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে। জার্মানিও এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এই আইন প্রণয়ন পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হংকংয়ে ভবিষ্যতে 'বাক ও একত্রে মিলিত হওয়ার স্বাধীনতা' এবং গণতান্ত্রিক বিতর্ক চর্চার সুযোগের 'নিশ্চিয়তা থাকতে হবে'। মাস বলেন, 'হংকংয়ের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে এক দেশ, দুই ব্যবস্থা নীতি ও আইনের শাসন। নিরাপত্তা আইন দিয়ে এসব মৌলিক অধিকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলা যাবে না।' হংকং ছাড়তে চান অনেক বাসিন্দা এদিকে, হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীরা আশঙ্কা করছে, এই আইন হংকংয়ের ওপর বেইজিংয়ের ক্ষমতা আরও বাড়াবে। ফলে অনেক বাসিন্দা হংকং ছাড়তে চান বলে জানা গেছে। আন্দোলন চলার সময় গত বছরের শেষ দুই কোয়ার্টারে হংকংয়ের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা অন্য দেশে অভিবাসী হয়েছে। এছাড়া গত ডিসেম্বরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ 'অপরাধের রেকর্ড নেই' এমন কাগজ পেতে পুলিশের কাছে আবেদন করেন। যারা অন্য দেশে অভিবাসী হতে চান তাদের এমন কাগজ প্রয়োজন হয়। আবেদনের এই সংখ্যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি বলে জানা গেছে। এদিকে, অভিবাসী হতে চেয়ে আবেদনের সংখ্যা গত কয়েকদিনে আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে জানিয়েছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা হংকংয়ের দুটি সংস্থা। ৩০ বছর বয়সি সাংবাদিক জোসেফিন হংকংয়ের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এতদিন হংকং ছাড়ার পরিকল্পনা না করলেও এবার নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাব পাস হওয়ায় তিনি অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। চীনা ব্যাংকে কর্মরত চু-ও হংকংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। গত আন্দোলনের সময় থেকেই তিনি অভিবাসনের পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানান। তবে নিরাপত্তা আইন প্রস্তাব পাসের পর এখন তিনি এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হয়েছেন। চু বলেন, তিনি চান না তার দুই বছর বয়সি ছেলে ভবিষ্যতে কোনো আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য পুলিশের নিপীড়নের শিকার হোক। ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে শিক্ষার্থী ও গণতন্ত্রপন্থিদের ওপর নিপীড়নের কথা তিনি ভুলে যাননি বলেও জানিয়েছেন।