কৃষ্ণাঙ্গের মৃতু্য

যুক্তরাষ্ট্রে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ

সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন ৯ অঙ্গরাজ্য বিক্ষোভ থামাতে সেনারা দারুণ কাজ করছে :ট্রাম্প

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মিনেসোটার অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর মিনিয়াপোলিসে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি বড় শহর। বিক্ষোভ দমাতে ২৫টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তারপরও কমছে না, কারফিউ ভেঙেই রাজপথে নামছে বিক্ষোভকারীরা। শনিবার মিনিয়াপোলিসে এক বিক্ষোভকারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত চার পুলিশ কর্মকর্তার কারাদন্ড চেয়ে পস্ন্যাকার্ড দেখান -এপি অনলাইন
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার রাজ্যের প্রধান শহর মিনিয়াপোলিসে পুলিশের এক কর্মকর্তার হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃতু্যর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি বড় শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, অস্থিরতার মুখে ২৫টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। ফ্লয়েডের মৃতু্যতে ফুঁসে ওঠা বিক্ষোভকারীরা শুক্রবারের পর শনিবারও রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ দেখায়। এমন বাস্তবতায় ৯টি অঙ্গরাজ্য সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছে। এদিকে, শনিবার হোয়াইট হাউসের সামনেও কাঁদানে গ্যাস ও পিপার স্প্রে উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীদের পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের লস অ্যাঞ্জেলস থেকে পূর্ব উপকূলের মিয়ামি, উত্তরের শিকাগোসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে আসা বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের শেষ বলা কথা 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না'র প্রতিধ্বনি তুলে স্স্নোগান দেয়। প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও বিক্ষোভকারীরা এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ করে, তারপর দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। কয়েকটি শহরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি রাজ্যের ২৫টি শহরে কারফিউ জারি করা হয়। শহরগুলোর মধ্যে বেভারলি হিলস, লস অ্যাঞ্জেলস, ডেনভার, মিয়ামি, আটলান্টা, শিকাগো, মিনিয়াপোলিস, ফিলাডেলফিয়া, কলম্বাস, সল্ট লেক সিটি, সিয়াটল উলেস্নখযোগ্য। লস অ্যাঞ্জেলসে স্থানীয় সময় শনিবার রাত ৮টা থেকে রোববার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি হয়। এ সময় সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়। গত সপ্তাহের সোমবার ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে তাকে আটক করতে যায় পুলিশ। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে পুলিশের এক কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু দিয়ে তাকে মাটিতে চেপে ধরেছেন। সে সময় ফ্লয়েডকে 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না' বলতে শোনা যায়। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে করে পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েড। তার মৃতু্যর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মিনিয়াপোলিসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তাল হয়ে ওঠা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি ভবন ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। শনিবার রাতে বিক্ষোভের আড়ালে লস অ্যাঞ্জেলসে রীতিমতো তান্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। শহরের বেশ কয়েকটি মার্কেট ও সুপারশপের গেট ভেঙে লুটপাট হয়েছে ব্যাপক, আগুন দেয়া হয়েছে পুলিশের কিয়স্কেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শনিবার রাত ৮টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয় লস অ্যাঞ্জেলসে। বেভারলি হিলসে রাতভর টহল দিয়েছেন বাড়তি পুলিশ সদস্যরা। এ সময় সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান শহরের মেয়র লেস্টার ফ্রায়েডম্যান। ফ্লয়েডের মৃতু্যর ঘটনায় মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ তাদের চার কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেয়া ৪৪ বছর বয়সী ডেরেক শভিনও আছেন। শুক্রবার গ্রেপ্তার শভিনের বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করার কথা। কিন্তু প্রতিবাদকারীরা এতে সন্তুষ্ট নয়। ফ্লয়েডের মৃতু্যর সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনার দাবি তুলেছে তারা। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে লকডাউনে থাকার পর শহরগুলোর রাস্তায় নেমে আসা শত শত বিক্ষোভকারীর দৃশ্য যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সংকট চলার ধারণা দিচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছে ও মারা যাচ্ছে। লকডাউনের কারণে লাখ লাখ লোক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। বিক্ষোভ থামাতে সেনা সদস্যরা দারুণ কাজ করছে : ট্রাম্প এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, মিনিয়োপলিসে ডেমোক্রেট মেয়র যেটা করতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটাই সফল করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এটা অবশ্য দুইদিন আগেই করা উচিত ছিল। তাহলে বিক্ষোভকারীরা প্রধান পুলিশ স্টেশন দখলে নিতে পারত না এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটত না। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, সেনারা দারুণ কাজ করছেন।