বৈঠকের কের্ডিং ফাঁস

শুরুতে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি চীন

করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানানো হয় ২ সপ্তাহ পর

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে চীনের কাছ থেকে নতুন করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডবিস্নউএইচও) বেশ বেগ পেতে হয়েছিল বলে সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ কয়েকটি বৈঠকের রেকর্ডিং থেকে জানা গেছে। সংক্রমণের বিস্তার কমাতে চীনের ভূমিকা নিয়ে ডবিস্নউএইচওর কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে করা প্রশংসার সঙ্গে ওই রেকর্ডিংয়ের কথাবার্তায় ব্যাপক বৈপরীত্য আছে। সংবাদসূত্র : গার্ডিয়ান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থার হাতে আসা ওই রেকর্ডিংয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হওয়া বৈঠকগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা ভাইরাসের বিস্তৃতি এবং বাকি বিশ্বের জন্য এর ঝুঁকি কতটুকু, তা নিরূপণে বেইজিংয়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছিলেন। এরও দুই সপ্তাহ পর চীন নতুন করোনাভাইরাস যে ছোঁয়াচে, তা প্রথম জানিয়েছিল। পরে ৩০ জানুয়ারি ডবিস্নউএইচও ভাইরাস বিষয়ে সতর্ক করে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে। বৈঠকের একটিতে ডবিস্নউএইচওর কোভিড-১৯ বিষয়ক কৌশলের নেতৃত্বে থাকা মার্কিন এপিডেমিওলজিস্ট মারিয়া ভ্যান কেরখোভকে বলতে শোনা গেছে, 'আমরা খুবই স্বল্প পরিমাণ তথ্য পাচ্ছি। সঠিক পরিকল্পনার জন্য এটা যথেষ্ট নয়।' অন্য একটি বৈঠকে চীনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা গডেন গ্যালি বলেছেন, 'আমরা এমন একটা পর্যায়ে আছি, যেখানে চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভিতে কোনো তথ্য যাওয়ার কেবল ১৫ মিনিট আগে আমাদের সেটি জানায়।' চীনের তিনটি সরকারি ল্যাবরেটরি ভাইরাসের বংশগতি বৈশিষ্ট্য বের করারও প্রায় এক সপ্তাহ পর বেইজিং ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাপ প্রকাশ করে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই বার্তা সংস্থার প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ভাইরাসটি নিয়ে আগে থেকে সতর্ক করা কিংবা দেরিতে তথ্য দেয়ার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে চীনের প্রশংসা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। সংস্থাটিকে চীনঘেঁষা অ্যাখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি ডবিস্নউএইচওর সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নেরও ঘোষণা দিয়েছে। প্রভাবশালী এ দাতা দেশের অসন্তোষ সত্ত্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাসকে কিছুদিন আগেও 'ত্বরিত ও আগ্রাসী পদক্ষেপের মাধ্যমে চীন ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় নতুন মান নির্ধারণ করে দিয়েছে' বলে বেইজিংয়ের প্রশংসা করতে দেখা গেছে। গার্ডিয়ান রেকর্ডিংগুলোর বিষয়ে চীনের ডবিস্নউএইচও কার্যালয়ের মন্তব্য চাইলেও তাতে সাড়া মেলেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তা সংস্থাটিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে কার্যালয়টি বলেছে, 'আমাদের কর্মীরা দিনরাত সংস্থার নিয়ম ও বিধিবিধান মেনে সদস্য সকল দেশকে সমান সহায়তা ও তথ্য দিতে কাজ করে যাচ্ছেন; সরকারগুলোর সব স্তরের সঙ্গেই খোলামেলা ও সরাসরি কথাবার্তা হচ্ছে আমাদের।' ২০০২ সালে সার্সের প্রাদুর্ভাবের সময় চীনের কর্মকর্তারা যেভাবে 'তথ্য লুকিয়েছিলেন', সে রকমই কিছু হতে যাচ্ছে বলে জানুয়ারির শুরুতে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন ডবিস্নউএইচওর জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান। তিনি বলেন, 'একই দৃশ্যপট। কী ঘটছে, সে বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পেতে একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।' বেইজিং সহযোগিতা করছে না অভিযোগ করে তাদের ওপর চাপ বাড়াতে আহ্বানও ছিল রায়ানের। তিনি জানান, 'এটা কঙ্গোতে হতো না; কঙ্গো কিংবা অন্য কোথাও হয়ওনি। আমাদের তথ্য-উপাত্ত দেখার দরকার আছে; এই মুহূর্তে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ'- ডবিস্নউএইচও কর্মকর্তা এমনটাই বলেছিলেন বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই বার্তা সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সার্সের মতো অজ্ঞাত একটি ভাইরাস চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়ছে বলে গত বছরের ডিসেম্বরেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে সতর্ক করা হলেও বেইজিং সে সময় এর অস্তিত্বের কথা জানায়নি। ৯ জানুয়ারি চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম উহানে অসংখ্য মানুষের অসুস্থতার পেছনে নতুন একটি করোনাভাইরাস দায়ী বলে জানালেও সেটি ছোঁয়াচে নয় বলে আশ্বস্ত করেছিল। তার দুই সপ্তাহ পর দেশটির কর্মকর্তারা ভাইরাসটি মানবদেহ থেকে অন্য মানবদেহে ছড়ায় বলে স্বীকার করে নেন; সে সময় উহানের হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগী উপচে পড়ছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে হুবেই প্রদেশের অন্যান্য এলাকাতেও। চীনা কর্তৃপক্ষ পরে ২৩ জানুয়ারি উহানকে লকডাউন করে দেয়; যদিও এর আগেই শহরটির অন্তত ৫০ লাখ লোক চীন এবং বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সেই ভাইরাস এরই মধ্যে ৬৫ লাখের বেশি মানুষের দেহে শনাক্ত হয়েছে; ভাইরাসটির কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ মৃতু্য ছাড়িয়েছে তিন লাখ ৮৩ হাজারের বেশি।