বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

কাঁদানে গ্যাসের কারণে বিক্ষোভকারীরা কাশি দিচ্ছে ফলে ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বিক্ষোভকারীরা
পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার লোক বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। চিৎকার করে তারা ফ্লয়েড হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছে। আর এসব করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে পুলিশের সঙ্গে। পুলিশও বিক্ষোভকারীদের দমাতে কাঁদানে গ্যাস ও পিপার স্প্রে ছুড়ছে। কাঁদানে গ্যাসের কারণে জোরে বিক্ষোভকারীরা কাশি দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বিক্ষোভের কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাবে। এছাড়া আফ্রো-আমেরিকানদের জনস্বাস্থ্য এমনিতেই অবহেলিত। এর মধ্যে পুলিশের শক্তি প্রয়োগ এসব জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরি করছে বাড়তি চাপ। এ কারণে তৈরি হচ্ছে হৃদরোগ থেকে ক্যান্সার ঝুঁকি। সংবাদসূত্র : এএফপি গত ২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের নিরস্ত্র এক কৃষাঙ্গ প্রাণ হারালে তা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। হত্যাকান্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। 'ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া হসপাতাল'র ডাক্তার এবোনি হিলটন দুটি মহামারির হুমকির কথা উলেস্নখ করেছেন। এর একটি কোভিড-১৯ এবং অপরটি পুলিশি নৃশংসতা। তিনি বলেন, 'করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে বলেই আমরা আশঙ্কা করছি। কারণ কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই এবং দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ লোক ভুলভাবে তাদের মাস্ক পরছে।' বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নিয়মিতভাবেই পিপার স্প্রে, টিয়ার গ্যাস ও নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করছে। এর ফলে কাশি ও জ্বলুনি হচ্ছে। এছাড়া চোখে 'ড্রপলেট' (মুখ থেকে নিঃসৃত জলকণা) পড়ার কারণেও করোনা ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন ওই ডাক্তার। কারণ লোকজন কোনো গগলস-মাস্ক পরছে না। এদিকে, পুলিশ কেন আফ্রো-আমেরিকান জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন রাটগার্স ইউনিভার্সিটির ফ্রাংক এডওয়ার্ড। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ২.৫ গুণ বেশি পুলিশের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। এই গবেষণার মূল লেখক এডওয়ার্ড বলেন, 'আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রে জনস্বাস্থ্যের জন্য পুলিশের হুমকির বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।' বিশ্বে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি পর্যুদস্ত যুক্তরাষ্ট্রে যখন সংক্রমণের মাত্রা কমে আসতে শুরু করেছে, তখনই উত্তাল এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। 'ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া রিভারসাইড'র মহামারি বিশেষজ্ঞ ব্রানডন ব্রাউন বলেন, বিশ্বে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ কমে এলেও এটি শূন্যে নেমে আসবে না। বিশেষ করে জনগণ যখন সামাজিক দূরত্ব মানতে পারছে না এবং পুলিশি চাপের মধ্যেও রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কেবল কোভিড-১৯ থেকেই নয়, রাষ্ট্রীয় নজরদারি থেকেও নিজেকে রক্ষায় মাস্ক পরা গুরুত্বপূর্ণ। নিউইয়র্কে জরুরি চিকিৎসক রবার্ট গেস্নটার বলেছেন, টিয়ার গ্যাসের কারণে সৃষ্ট অ্যারোসল করোনার বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। এসব কারণ জনস্বাস্ব্য বিশেষজ্ঞদের খুবই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বিক্ষোভে যারা অংশ নিচ্ছে, তাদের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু। নিম্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় থাকা এসব লোক কোভিড-১৯ এর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও তারা মনে করছেন।