অভিযোগ শীর্ষ কর্মকর্তার

যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করছেন ট্রাম্প

প্রতিক্রিয়ায় ম্যাটিসকে 'অতিমূল্যায়িত' জেনারেল বলে তোপ ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদের আগুন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। প্রতিদিনই বিক্ষোভের আকার বাড়ছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড শহরে এক হাঁটু মাটিতে রেখে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানান বিক্ষোভকারীরা -এপি/আউটলুক ইনডিয়া
নিজের কর্তৃত্বের অপব্যবহার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। ক্ষমতাসীন একজন প্রেসিডেন্টকে স্পষ্টভাবে সমালোচনা করার বিষয়টি দীর্ঘদিন এড়িয়ে গেছেন বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা, কিন্তু বুধবার আর কোনো রাখঢাক না রেখেই নাগরিক অস্থিরতা দমাতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে চাওয়ায় ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। সংবাদসূত্র :রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি প্রভাবশালী সাবেক মেরিন জেনারেল ম্যাটিস, যিনি নীতিগত বিরোধের কারণে ২০১৮ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ ছেড়েছিলেন, পেন্টাগনের সাবেক নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর ভাষায় জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। ২৫ মে কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডকে মিনিয়াপোলিসের পুলিশ হেফাজতে হত্যা করা হয়। আটলান্টিক সাময়িকীতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ম্যাটিস বলেন, 'আমার জীবদ্দশায় প্রথম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি মার্কিন জনগণকে একতাবদ্ধ করার চেষ্টা করেননি, এমনকি চেষ্টা করার ভানটুকু পর্যন্ত করেননি। তার বদলে তিনি আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। তিন বছরের এই সচেতন প্রচেষ্টার পরিণতি এখন প্রত্যক্ষ করছি আমরা। তিন বছর ধরে পরিণত নেতৃত্ব না থাকার ফলাফল দেখছি আমরা।' এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডকে হত্যা করার পর পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হলে তা দমনে সামরিকবাহিনী ব্যবহারের হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। রাজ্য গভর্নরদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তিনি এমনটি করবেন বলে জানান। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে বর্তমান ও সাবেক অনেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে সামরিকবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন ও এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিকবাহিনীর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা। ম্যাটিস বলেন, 'ওয়াশিংটন ডিসিতে আমরা যেমনটি প্রত্যক্ষ করেছি, সামরিকবাহিনী নামানোতে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, মিথ্যা দ্বন্দ্ব যা সামরিকবাহিনী ও বেসামরিক সমাজের মধ্যে।' এদিকে, ধারাবাহিক কয়েকটি টুইটে এর জবাব দেন ট্রাম্প। ম্যাটিসকে 'বিশ্বের সবচেয়ে অতিমূল্যায়িত জেনারেল' বলে অভিহিত করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, 'আমি তার 'নেতৃত্বের' ধরন পছন্দ করতাম না, তার অনেক কিছুই পছন্দ করতাম না, আমার সঙ্গে অনেকেই একমত। খুশি যে সে চলে গেছে!' ফ্লয়েডের মৃতু্যর দিন রাতেই মিনিয়াপোলিসজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই উত্তাল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির ছোট-বড় বহু শহরে চলা বিক্ষোভের সময় সহিংতা, কোথাও কোথাও লুটপাটের মতো ঘটনাও ঘটে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভের সময় জনতা মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়ালে কিছুক্ষণের জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন ট্রাম্প। বহু শহরে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ চালিয়ে যায় ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা। তাদের দমাতে কাঁদানে গ্যাস, পেপার স্প্রে ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে পুলিশ। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়। সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যা নিয়ে বিক্ষোভ দমনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের হুমকির পর এর বিরোধিতা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। বুধবার এসপার বলেছেন, 'বর্ণবাদী অন্যায়, অবিচার এবং ফ্লয়েডের মৃতু্য নিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া অস্থিরতা প্রশমনে সেনা মোতায়েন করাকে তিনি সমর্থন করেন না।' পেন্টাগনে এক বক্তব্যে এসপার বলেন, 'একমাত্র শেষ উপায় হিসেবেই সক্রিয় দায়িত্বে থাকা সামরিকবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ভূমিকায় নামানোর বিকল্প পথ অবলম্বন করা উচিত। পরিস্থিতি খুবই গুরুতর এবং ভয়াবহ হলেই কেবল তা করা যেতে পারে। এখনো আমরা সেরকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়িনি।' ফলে 'ইনসারেকশন অ্যাক্ট' (যে ফেডারেল আইনে প্রেসিডেন্ট সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা রাখেন) এর শরণাপন্ন হওয়াটা সমর্থন করেন না বলেই জানিয়েছেন এসপার। ফ্লয়েড হত্যাকে তিনি এক 'ভয়ংকর অপরাধ' বলেও বর্ণনা করেছেন। এসপার বলেন, 'তাকে (ফ্লয়েড) খুন করার জন্য ওই দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মুখে দাঁড় করানো উচিত। এ এক মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা বহুবারই এর পুনরাবৃত্তি দেখে আসছি।' গত সপ্তাহে মিনেসোটার মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটুর চাপে দমবন্ধ হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা উত্তাল সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এসপার এ মন্তব্য করলেন।