করোনা মহামারি

একদিনে আক্রান্ত-মৃতু্যর রেকর্ড বিশ্বে

যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্য ১ লাখ ১০ হাজার ছাড়াল করোনায় মৃতু্যশূন্য দিন নিউইয়র্ক সিটির

প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রায় আড়াই মাস ধরে সীমাহীন সংক্রমণ ছাড়ানোর পর কিছুটা নেতিয়ে এসেছিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সর্বগ্রাসী থাবা। বিশ্বজুড়ে সর্বোচ্চ সংক্রমণের দেশগুলোতে ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছিল মৃতু্যর মিছিল। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আবারও আক্রান্ত-মৃতু্যর রেকর্ড হয়েছে বিশ্বে। এ সময় এক লাখ ২৯ হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৪ জন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, সিএনএন আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৬৮ লাখ। পাশাপাশি মৃতু্য হয়েছে তিন লাখ ৯৪ হাজারের বেশি মানুষের। এদিকে, রাশিয়া, ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্য সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ব্রাজিলে হু-হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এক হাজার ৪৯২ জনের মৃতু্য হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। অন্যদিকে, ইউরোপের দেশগুলোতে লকডাউন শিথিলের পর হঠাৎই মৃতু্য আর সংক্রমণ বেড়েছে। যুক্তরাজ্য ১৫ জুন থেকে কড়াকড়ি শিথিল করলেও, গণপরিবহণে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে ১৫টি শহরে ছুটির দিনে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্য এক লাখ ১০ হাজার ছাড়াল এদিকে, চীন থেকে প্রাদুর্ভাব হওয়া প্রাণঘাতী করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃতু্য দেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক লাখ ১০ হাজার ১৭৩ জন। তবে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৮ হাজারের বেশি। হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৬৩৬ জন এবং মারা গেছে ৮৭৬ জন। ফলে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৫২৮ এবং মারা গেছে এক লাখ ৮ হাজারের বেশি। তবে ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ২৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে সাত লাখ ১২ হাজার ২৫২ জন। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগী ১১ লাখ এক হাজার ৬২৬ জন। এছাড়া ১৭ হাজার ৮৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতু্যতে শীর্ষে রয়েছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৮৩ হাজার ৮৯৯। এর মধ্যে মারা গেছে ৩০ হাজার ২৮১ জন। আক্রান্ত ও মৃতু্যতে নিউইয়র্কের পরই রয়েছে নিউ জার্সি, ইলিনয়, ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাসাচুসেটস, পেনিসিলভেনিয়া, টেক্সাস এবং ফ্লোরিডা। করোনায় মৃতু্যশূন্য দিন নিউইয়র্ক সিটির অন্যদিকে, প্রথমবারের মতো একদিনে নিউইয়র্ক সিটিতে নতুন করে কারও মৃতু্যর খবর পাওয়া যায়নি। গত মার্চের মাঝামাঝিতে সেখানে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর এই প্রথম কেউ করোনায় মারা যায়নি। আগামী সপ্তাহ থেকেই সবকিছু পুনরায় খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি। এর মধ্যেই এমন খবর অনেকটাই স্বস্তি দিল সেখানকার মানুষজনকে। নিউইয়র্ক সিটির স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গল এবং বুধবারের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় নিউইর্কে একজনও মারা যায়নি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটা একটি মাইলফলক হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মেয়র বিল ডে বস্নাসিওর প্রেস সেক্রেটারি ফ্রেডি গোল্ডস্টেইন বলেছেন, এটা সত্যিই খুব ভালো খবর। এদিকে, কার্যকর বলে প্রমাণ হোক বা না হোক, চলতি বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মার্কিন কোম্পানি 'মডার্না'র তৈরি কোভিড-১৯ টিকার অন্তত ১০ কোটি ডোজ প্রস্তুত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন জাতীয় সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যান্থনি ফাউচি। তার আশা, ২০২১ সালের শুরুতে এ তালিকায় আরও কয়েক কোটি ডোজ টিকা যুক্ত হবে। 'আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন' সাময়িকীর সঙ্গে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে ফাউচি এসব কথা বলেন। বিভিন্ন দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা ও ওষুধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছেন, নিরাপদ ও কার্যকর রোগ প্রতিরোধী টিকা উদ্ভাবনে ১২-১৮ মাস সময় লাগতে পারে। এ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি টিকা পরীক্ষামূলকভাবে মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্না এবং ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন।