পশ্চিমা বিশ্বে নিন্দার ঝড়

বিতর্কিত হংকং নিরাপত্তা আইন পাস চীনের পার্লামেন্টে

আজ থেকেই কার্যকর হতে পারে, হংকংজুড়ে বড় বিক্ষোভের সম্ভাবনা মার্কিন কর্মকর্তাদের ভিসায় কড়াকড়ির পথে চীন

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের স্বাধীনতায় শেষ পেরেকটুকু মেরে দিল চীনের ক্ষমতাসীন শি জিনপিংয়ের সরকার। মঙ্গলবার চীনা পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিতর্কিত হংকং নিরাপত্তা আইনকে অঞ্চলটির বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে গণতন্ত্রপন্থিরা। আইন পাসের প্রতিবাদে হংকংয়ের একটি শপিং মলের ভেতরে এদিন প্রতিবাদ জানায় তারা -রয়টার্স অনলাইন
স্বায়ত্তশাসিত নগর হংকংয়ে জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাস করেছে চীনের পার্লামেন্ট। বেইজিংয়ের সর্বোচ্চ আইন পরিষদ 'ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস স্ট্যান্ডিং কমিটি' (এনপিসিএসসি) সর্বসম্মতিক্রমে আইনটি অনুমোদন দিয়েছে। এ আইনে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কর্তৃপক্ষকে অবমাননা, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট মঙ্গলবার বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এনপিসিএসসির বৈঠক শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৬২ জন সদস্যের সম্মতিতে আইনটি পাস হয়। ব্রিটিশ শাসন থেকে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তরের ২৩তম বার্ষিকী ১ জুলাই, ফলে আজ থেকে আইনটি কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থিরা এই আইনকে হংকংয়ের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন অঞ্চলটির চীনা মনোনীত প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম। এর আগে গত মাসে চীনা কর্তৃপক্ষ হংকংয়ে নতুন নিরাপত্তা আইন জারির ঘোষণা দিলে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থিরা। ওই ঘোষণার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে তারা। এবারও বড় বিক্ষোভের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে, নতুন এই নিরাপত্তা আইন হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের জন্য কোনো হুমকি নয় বলে দাবি বেইজিংয়ের। অন্যদিকে, গণতন্ত্রপন্থিদের দাবি, এ আইন অঞ্চলটির বাসিন্দাদের দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসা রাজনৈতিক স্বাধীনতার পরিসমাপ্তি ঘটাবে। চীনের পার্লামেন্টে পাস হওয়ার আগে হংকংয়ের হাতে গোনা কয়েকজন প্রতিনিধি এ আইনের একটি খসড়া দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই বিষয়টি নিয়েই বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সুদূরপ্রসারি এই আইনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাবের নিন্দা জানিয়েছেন অনেক হংকংবাসী। ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই চীনের কাছে হস্তান্তরের সময় হংকংয়ের জন্য উচ্চমাত্রার স্বায়ত্তশাসন মঞ্জুর করেছিল বেইজিং। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্য পশ্চিমা সরকারগুলো। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বেইজিংয়ের বিরোধের আরও একটি ধারা শুরু হলো বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। উলেস্নখ্য, ১৫০ বছর ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার পর লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকং চীনের কাছে ফেরত দেয় যুক্তরাজ্য। তখন থেকে বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হংকংকে ২০৪৭ সাল অবধি স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে চীন। এই সময়ে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি বাদে অন্য সব বিষয়ে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতে পারবে অঞ্চলটি। তবে গত বছর অঞ্চলটিতে ব্যাপক বিক্ষেভের মুখে সেখানে বিতর্কিত হংকং নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বেইজিং। মঙ্গলবার সর্বসম্মতভাবে এ সংক্রান্ত বিলই অনুমোদন পেল চীনা পার্লামেন্টে। হংকং প্রশ্নে মার্কিন কর্মকর্তাদের ভিসায় কড়াকড়ির পথে চীন এদিকে, হংকং প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের 'বেপরোয়া আচরণের' জবাবে মার্কিন কর্মকর্তাদের ভিসায় কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বেইজিং। চীন হংকংয়ে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন চাপানোর পদক্ষেপ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সদ্যই হংকংয়ের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে চীনকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছিলেন, হংকংবাসীদের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য সাবেক কিংবা বর্তমান যেকোনো চীনা কর্মকর্তা দায়ী বলে গণ্য হলেই তার ওপর ওয়াশিংটনের নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের জবাবে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিনিদের ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে ঘোষণা দেন। তবে কারা এ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বেন, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।