বিবিসির অনুসন্ধান

সুযোগ খুইয়ে এখন ধুঁকছে দিলিস্ন

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আক্রান্ত এক রোগীকে জড়িয়ে ধরছেন তার স্বজন
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক দিলিস্নতে; মারা গেছে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ। মহামারি ঠেকানোর চেষ্টায় যেন কুলিয়ে উঠতে পারছে না ভারতের রাজধানী। দেশটিরই বিভিন্ন অঞ্চল যখন করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সফলতা দেখাচ্ছে, তখন রাজধানীর হিমশিম খাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছে বিবিসি। তাতে বেরিয়ে এসেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোটা দেশে প্রায় তিন মাস যে 'লকডাউন' দিয়েছিলেন, সেই সুযোগ কীভাবে হেলায় হারিয়েছে দিলিস্নর কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগ না দেওয়া আর রাজনৈতিক বিভেদ রোগীর সংখ্যাই বাড়িয়ে তুলছে এ শহরে, যেখানে থেকে কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশ পরিচালনা করে। ভারতের ছোট শহরগুলো বরং রাজধানীর চেয়ে ভালোভাবে সামাল দিতে পারছে এই মহামারি। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং পদ্ধতিতে জোর দিয়েছিল কর্নাটক প্রদেশের রাজধানী বেঙ্গালুরু; সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে বেঙ্গালুরুর এই ব্যবস্থাপনা কাজেও দিয়েছে। চেন্নাইতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃতু্যর হার সামান্যই। ভারতের বাণিজ্যিক কেন্দ্র মুম্বাইও ছোঁয়াচে এই ভাইরাসে বিপর্যস্ত। তবে দিলিস্নতে নতুন রোগীর সংখ্যা এখন ঊর্ধ্বমুখী। এ শহরের সবচেয়ে ভালো ও বড় সরকারি হাসপাতালগুলো রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগে স্বাস্থ্যসহসেবা খাতে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রম্নতিতে ভর করেই দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল। জুনের গোড়া থেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল দিলিস্নতে; এই এক মাসেই শনাক্ত হয় ৫০ হাজার জন। ওই সময় সদ্য অনুমোদন পাওয়া অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট দিয়েই অধিকাংশ পরীক্ষা করা হয়েছিল। আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল দিতে পারা এই কিট ব্যবহারের কারণেই ওই মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিলো। তবে নমুনা পরীক্ষাকেই সমাধান বলে মনে করছেন না কে শ্রীনাথ রেড্ডি। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ও ভারতের জাতীয় কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের সদস্য রেড্ডি বলেন, 'অবশ্যই টেস্ট করাতে হবে। তবে অবস্থা বুঝে তা করতে হবে; উপসর্গ ও অন্যান্য দিক স্পষ্ট বুঝে নিয়েই পরীক্ষা করতে হবে।' কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং নিয়ে ইনডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) এক গবেষণা বলছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভারতে গড়ে প্রতিটি শনাক্ত রোগীর বেলায় তার সংস্পর্শে আসা ২০ জনেরও পরীক্ষা করা হয়। তবে ভারতে সবখানে এই অনুপাতে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা হয়নি। কর্নাটকে যেখানে গড়ে রোগীর সংস্পর্শে আসা ৯৩ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে, দিলিস্নতে এই সংখ্যা ছিল মোটে ৯ জন। গত মাসে দিলিস্নর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রোগীর একেবারে ঘনিষ্ঠজনরাই থাকছে ট্রেসিং পদ্ধতির আওতায়। যদিও টুইটারে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, কোভিড-১৯ রোগীর পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে না। রোগীর প্রতিবেশীদের অবরুদ্ধ না করার কথাও টুইটে জানিয়েছেন অনেকে। 'আমি এমন অনেক ঘটনাই জানি যেখানে পরিবারে একজন কোভিড-১৯ শনাক্ত হলেও বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়নি,' বলেন স্বাস্থ্য বিভাগের উপর নজর রাখা অল ইন্ডিয়া ড্রাগ অ্যাকশন নেটওয়ার্কের মালিনি অ্যায়সোলা। তিনি বলেন, 'অনেক ক্ষেত্রেই কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা করা হত না, যদি না জোরালো অনুরোধ ও সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা আসত।' তবে সম্প্রতি ২ কোটি ৯০ লাখ দিলিস্নবাসীর ঘরে ঘরে গিয়ে পরীক্ষা করার এক ঘোষণা এসেছে সরকার থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেরি হয়ে গেছে। এমন অনেক উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়ার দরকার ছিল; লকডাউনের মধ্যেই। যদি ওই সময় এমন কার্যক্রম ব্যাপক হারে পরিচালনা করা হত, তাহলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লকডাউন শিথিল হওয়ার কালে সরকার আরও সহজে সবকিছু সামাল দিতে পারত। দিলিস্নর স্যার গঙ্গা রাম হসপিটালের ভাসকুলার সার্জন আমবারিশ সাত্ত্বিক বলেন, এই মহামারি নিয়ে কুসংস্কার পেয়ে বসেছে সবাইকে। এখন এটা জনস্বাস্থ্য সংকট না হয়ে আইন-শৃঙ্খলার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেস্ট সম্পর্কিত নানা নিয়ম, কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে করণীয় নিয়ে যথেষ্ট প্রচারণা না করা এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার সরকারি কোয়ারেন্টিনের কারণে অনেকেই পরীক্ষা করাতে অনিচ্ছুক থাকছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ