বিক্ষোভ দমনের পরিকল্পনা

হংকংয়ে কট্টরপন্থি জাঁদরেল নেতা নিয়োগ চীনের

কঠোরহস্তে বিক্ষোভ দমনের জন্য চীনে সুপরিচিত ঝেং গ্রেপ্তারের ভয়ে হংকং ছেড়ে পালালেন গণতন্ত্রপন্থি নেতা হাত বাড়াল অস্ট্রেলিয়াও

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের স্বাধীনতায় শেষ পেরেকটুকু মারা হয়েছে আগেই, এবার কঠোরহস্তে বিক্ষোভ দমনে অঞ্চলটিতে কট্টরপন্থি জাঁদরেল নেতা নিয়োগ করেছে চীন। এদিকে, বিতর্কিত হংকং নিরাপত্তা আইন কার্যকরের দিন বুধবার থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে হংকং। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান উপেক্ষা করেই রাজপথে স্স্নোগান তুলছে গণতন্ত্রপন্থিরা। বৃহস্পতিবার হংকংয়ে বিক্ষোভরত একদল গণতন্ত্রপন্থি -এপি/নিউইয়র্ক টাইমস
হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের দমন করতে অঞ্চলটির নতুন নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান হিসেবে এক কট্টরপন্থী জাঁদরেল নেতাকে নিয়োগ দিয়েছে চীন। ঝেং ইয়ানশিয়ং নামে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক এই নেতা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের উকানে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ কঠোরহস্তে দমনের কারণে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা গত মঙ্গলবার চীনের পার্লামেন্টে পাস হয় বিতর্কিত 'হংকং নিরাপত্তা আইন'। চীনের 'ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস'র স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৬২ সদস্যের সম্মতিতে পাস হওয়া আইনটিতে হংকংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কর্তৃপক্ষকে অবমাননা, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাতের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। হংকংয়ের সরকার মঙ্গলবার রাত থেকেই আইনটি কার্যকরের ঘোষণা দেয়। নতুন এ আইনটিকে হংকংয়ের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করে আসছে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকর্মীরা। আইনটি কার্যকরের প্রতিবাদে বুধবার শহরটির কয়েক হাজার বাসিন্দা বিক্ষোভও করে। আর বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে। চীনের দক্ষিণের প্রদেশ গুয়াংডংয়ে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মহাসচিব ছিলেন ঝেং। ২০১১ সালে গুয়াংডংয়ের শানওয়েই শহরে দলের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। ওই সময় উকানের গ্রামে সরকারের জমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনকারীদের কঠোরহস্তে দমন করেছিলেন ঝেং। অবশ্য পাঁচ বছর পর দুর্নীতির অভিযোগে তাকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। গ্রেপ্তারের ভয়ে হংকং ছেড়ে পালালেন গণতন্ত্রপন্থি নেতা এদিকে, বেইজিংয়ের চাপিয়ে দেওয়া নতুন নিরাপত্তা আইনে গণতন্ত্রপন্থি বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটকের মধ্যেই হংকংয়ের এক রাজনৈতিক নেতা চীন নিয়ন্ত্রিত এ শহরটি ছেড়ে অন্যখানে পালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নাথান ল নিজেই তার হংকং ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাবেক এ ছাত্রনেতা ২০১৪ সালে হংকংয়ের 'আমব্রেলা আন্দোলনের' পর জেল খেটেছিলেন। এখন বাইরে থেকেই হংকংয়ের গণতন্ত্রের জন্য লড়বেন বলেও প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, এই আন্দোলন এখনো সজীব। ঝুঁকি থাকলেও হংকংয়ের মানুষ হাল ছাড়বে না।' হংকংয়ে চীনের বিতর্কিত নতুন আইন বুধবার থেকে কার্যকর হচ্ছে- মঙ্গলবার এমন ঘোষণা আসার অল্প সময় পরই নাথান ল তার দল 'ডেমোসিসতো পার্টি' থেকে পদত্যাগ করেন। হংকংয়ের আরেক গণতন্ত্রপন্থি নেতা জশুয়া ওংকে সঙ্গে নিয়ে নাথান এই দলটি গঠন করেছিলেন। ২০১৬ সালে নাথান হংকংয়ের সবচেয়ে কম বয়সি আইনপ্রণেতাও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নিয়ম মেনে শপথ নেননি- এমনটা প্রমাণ হওয়ার পর তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বুধবার ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মার্কিন কংগ্রেসে হংকং বিষয়ক এক শুনানিতে ল বলেন, চীন নিয়ন্ত্রিত শহরটিতে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি হংকং ছেড়ে 'আত্মগোপনে আছেন' বলে জানান। তিনি বলেন, 'ঝুঁকি বিবেচনায়, আমার অবস্থান এবং এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি বলা ঠিক হবে না।' হংকংবাসীকে 'সেফ হ্যাভেন' সুবিধা দেবে অস্ট্রেলিয়া অন্যদিকে, নতুন নিরাপত্তা আইন পাসের পর সৃষ্ট উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে হংকংবাসীদের 'সেফ হ্যাভেন' বা সাময়িক আশ্রয় সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করছে অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন নিজেই। সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন হংকংয়ের পরিস্থিতি 'খুবই উদ্বেগজনক' এবং এ বিষয়ে তার সরকার অঞ্চলটির বাসিন্দাদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা ভাবছে বলে জানান। হংকংয়ের বাসিন্দাদের 'সেফ হ্যাভেন' সুবিধা দেওয়া হবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মরিসন বলেন, যুক্তরাজ্য তাদের যে সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সেই একই ধরনের সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করছে অস্ট্রেলীয় সরকারও। তিনি বলেন, 'চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আমি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবো। তবে, যদি জানতে চান, ওই ধরনের সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রস্তুত কি না? উত্তর হচ্ছে, হঁ্যা!' জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়া হংকংয়ের বাসিন্দাদের অস্থায়ী সুরক্ষা ভিসা দেয়ার প্রস্তাব দিতে পারে, যার ফলে আশ্রয়প্রার্থীরা দেশটিতে তিন বছর পর্যন্ত থাকার অনুমতি পেতে পারেন। এর আগে বুধবার হংকংবাসীর পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। বুধবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ 'হাউস অব কমন্সে' বরিস জনসন বলেন, '(চীনের) নতুন নিরাপত্তা আইনের কারণে হংকংবাসীর স্বায়ত্তশাসন লঙ্ঘন হচ্ছে এবং ভুক্তভোগীরা চাইলে আগের এই ব্রিটিশ উপনিবেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে চলে আসতে পারে।'