লাদাখ সীমান্ত সংকট

চীনের হুমকিতে আরও সেনা মোতায়েন ভারতের

শুধু সেনা সমাবেশই নয় সেই সঙ্গে সমরাস্ত্র, যুদ্ধের সরঞ্জামও বাড়ছে চীনের সঙ্গে পালস্না দিও না ভারতকে চরম হুঁশিয়ারি

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হিমালয়বেষ্টিত লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীন-ভারতের মধ্যে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে চীনবিরোধী বিক্ষোভ জোরালো হচ্ছে। এদিকে, দুই দেশের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে নিজেদের গন্ডির বাইরেও। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একদল প্রবাসী ভারতীয় চীনা পণ্য বর্জনের দাবিতে বিক্ষোভ করে -এপি/আউটলুক ইনডিয়া
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হঠাৎ সফরের পর শুক্রবার লাদাখে সেনা সমাবেশ আরও বাড়িয়েছে ভারত। ভারতীয় সেনা সূত্রের বরাতে দেশটির কয়েকটি গণমাধ্যম শনিবার জানিয়েছে, সবমিলিয়ে পূর্ব লাদাখে এই মুহূর্তে ভারতের সেনা সমাবেশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার ডিভিশনে। বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তে চীনের হুমকি মোকাবিলায় এই সেনা বৃদ্ধি ভারতের। সংবাদসূত্র : টাইমস অব ইনডিয়া, এনডিটিভি, এবিপি নিউজ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, চীনের হুমকি মোকাবিলায় লাদাখে ভারত নতুন করে আরও এক ডিভিশন সেনা মোতায়েন করেছে। উলেস্নখ্য, প্রতি ডিভিশনে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ হাজার সেনা থাকে। লাদাখে মে মাসের আগে মাত্র এক ডিভিশন সেনা ছিল। এখন সেখানে? চার ডিভিশন মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজারের কাছাকাছি ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। নতুন ডিভিশন এসেছে উত্তরপ্রদেশ থেকে। শুধু সেনা সমাবেশ নয়, সেই সঙ্গে সমরাস্ত্র, যুদ্ধের সরঞ্জামও বাড়ছে। এর আগে শুক্রবার লাদাখে দাঁড়িয়ে সরাসরি চীনকে কড়া বার্তা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সঙ্গে ছিলেন 'চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ' বিপিন রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান এমএম নারাভানে। তবে এ সময় মোদি চীনের নাম নেননি। ভারতীয় সেনাদের বীরত্বের প্রশংসাও করেন তিনি। লাদাখে ভারতীয় সেনাদের মাঝে দাঁড়িয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আগ্রাসনের দিন শেষ। এখন প্রগতির যুগ। এগিয়ে যাওয়ার সময়। ইতিহাস সাক্ষী আগ্রাসনকারীরা সবসময় ধ্বংস হয়েছে। যারা আগ্রাসনের নীতিতে চলছে, তারা শান্তির পক্ষে বিপদের কারণ।' এদিকে, লাদাখে চীন-ভারতের সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিরসনে এবং জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় সিন্ধু নদীতে পূজাও দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। শনিবার নরেন্দ্র মোদি তার ফেসবুক পেজে পূজা দেওয়ার ছবি পোস্ট করে জানান, 'শুক্রবার সিন্ধু পূজা করেছি। জাতির শান্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেছি।' একই দিনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ওপর যেকোনো কৃত্রিম বাধা ভারতীয় স্বার্থের ক্ষতির কারণ হবে বলে সতর্ক করে চীন। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে সীমান্তে শান্তি সমুন্নত রাখতে দুই দেশের ঐক্যবদ্ধ তৎপরতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ভারতে চীনের বাণিজ্যিক অধিকার বজায় রাখতে বেইজিং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। চীনের সঙ্গে পালস্না দিও না ভারতকে চরম হুঁশিয়ারি এদিকে, ক্রমশ জটিল হচ্ছে লাদাখের পরিস্থিতি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার কথা বারবার ভারতের তরফে বলা হচ্ছে। কিন্তু এরপরেই সীমান্তের ওপারে রণসজ্জা সাজাচ্ছে চীন। এরই মধ্যে কয়েক হাজার সেনা সমাবেশ করেছে বেইজিং। যদিও পাল্টা হিসেবে ভারতও ঘুঁটি সাজাচ্ছে সীমান্তে। চীন সীমান্ত ঘেঁষে মিসাইল সিস্টেমসহ একগুচ্ছ অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র মোতায়েন করেছে ভারত। কিন্তু যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধান করতে চায় মোদি সরকার। অন্যদিকে, শুক্রবার জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, জাপানকে ব্যাখ্যা দিয়েছে। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) ঠিক কী পরিস্থিতি তা জানানো হয়েছে। সীমান্ত সমস্যা সমাধানে গত এক সপ্তাহ ধরে কী আলোচনা হয়েছে, তাও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, শুক্রবার সকালে হঠাৎ করেই লাদাখে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সীমান্তে এখন প্রতি মুহূর্তে চাপা টেনশন, কড়া নজরদারি। এই পরিস্থিতিতে জওয়ানদের মনোবল আরও চাঙ্গা করতে লাদাখ সফরে যান তিনি। লাদাখে মোদি পা রাখার পর থেকে একের পর এক বিবৃতি আসছে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে। চীনের কমিউনিস্ট সরকারের মুখপত্র 'গেস্নাবাল টাইমস'র এডিটর-ইন-চিফ হু শিজিন মোদির এই লাদাখ সফর নিয়ে টুইট করেন। সেখানে মোদির সফরকে রাজনৈতিক চমক বা স্টান্ট বলে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। এরপরেই চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সম্পাদক হু শিজিন। টুইটে তিনি বলেন, ভুলেও যেন চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ধারেকাছে না আসে ভারতীয় সেনাবাহিনী। টুইটে তিনি লিখেছেন, 'আমি বুঝতে পারছি মোদি সীমান্তে রাজনৈতিক চমক দেখিয়ে কড়া কড়া কথা বলছেন। কিন্তু দয়া করে চুপি চুপি সীমান্তে ভারতীয় জওয়ানদের বলে দিন, চীনকে তোমরা চেন, তারা কিন্তু ভারতের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিধর। পিএলএ-এর সঙ্গে যেন তারা পালস্না দিতে না যায় কেননা পিএলএ-এর কাছে তারা কিছুই নয়।