শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
দক্ষিণ চীন সাগর

পাল্টাপাল্টি মহড়ায় চীন-যুক্তরাষ্ট্র

পারস্পরিক দ্বন্দ্বের মধ্যেই এই মহড়া দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াবে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৫ জুলাই ২০২০, ১০:৩৪
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের মহড়া

দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের পাঁচ দিনব্যাপী সামরিক মহড়ার মধ্যেই ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী পাল্টা মহড়া চালিয়েছে। শনিবার মার্কিন নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিকের সমর্থনে তাদের 'ইউএসএস নিমিটজ' ও 'ইউএসএস রোনাল্ড রিগান' দক্ষিণ চীন সাগরে মহড়া ও অভিযান চালিয়েছে। বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস, বাণিজ্য চুক্তি এবং হংকং নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই বিতর্কিত জলসীমায় ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের পাল্টাপাল্টি এই মহড়া দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মত বিশ্লেষকদের। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা দক্ষিণ চীন সাগরের প্যারাসেল দ্বীপের কাছে বুধবার থেকে চীনের মহড়া শুরু হয়েছে। দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। আজ বেইজিংয়ের মহড়াটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরীগুলো শনিবার দক্ষিণ চীন সাগরের ঠিক কোন অংশে মহড়া চালিয়েছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মার্কিন নৌবাহিনীর বিবৃতিতেও মহড়ার স্থান উলেস্নখ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজগুলো সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশেই মহড়া চালায়। সম্প্রতি ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমানবাহী রণতরীকে একসঙ্গেও দেখা গেছে। চীন তাদের মহড়ার বিষয়টি আগেই জানিয়েছিল; অন্যদিকে মার্কিন নৌবাহিনী শনিবার হঠাৎই দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের দুটি রণতরীর মহড়ার খবর দেয়। দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের সঙ্গে এর প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধ থাকলেও বিতর্কিত এ জলসীমার প্রায় ৯০ শতাংশই মূলত বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে। এদিকে, চীনের মহড়ার সমালোচনা এসেছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের তরফ থেকে। এ ধরনের মহড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে সতর্কও করেছে তারা। এর আগে শুক্রবার দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ অংশে চীনের বিদ্যমান সামরিক মহড়াকে উসকানিমূলক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই সাগরের বিরোধপূর্ণ অংশে চীনা মালিকানার দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। শুক্রবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এতে সাগরটিতে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের দাবির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। টুইটে পম্পেও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র তার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বন্ধুদের সঙ্গে একমত, দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অংশে চীনের সামরিক অনুশীলন অত্যন্ত উসকানিমূলক। আমরা বেইজিংয়ের বেআইনি দাবির বিরোধিতা করছি।' আরেক টুইটে তিনি লিখেছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে এবং যেকোনো স্থানে সবাইকে আকার, ক্ষমতা এবং সামরিক ক্ষমতা নির্বিশেষে সব দেশের সার্বভৌম অধিকারকে সমর্থন করতে হবে।' পম্পেও মন্তব্য করেন, ভারতের সীমান্ত কিংবা হংকং বা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ থেকে দেশটির আচরণের ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। চীনের আচরণের প্রভাব কেবল সেই দেশে ও হংকংয়ে বসবাসকারীদের ওপরই নয়, বরং পুরো দুনিয়ার মানুষের জীবনের ওপর পড়ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং ক্ষমতা রয়েছে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি, মার্কিন নাগরিকরা যথাযথ পররাষ্ট্রনীতির পরিষেবা পাচ্ছে। আজকের দিনে চীনের হুমকিকে চিহ্নিত করে ফেলা হয়েছে।' অন্যদিকে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীন যে সামরিক মহড়া চালিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার সমালোচনা করার পর সেই সমালোচনাকে একেবারেই পাত্তা দেয়নি বেইজিং। চীন বলছে, দেশের সার্বভৌম সীমানার মধ্যেই তারা সামরিক মহড়া চালিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাউ লিঝিয়ান শুক্রবার রাজধানী বেইজিংয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। ঝাউ বলেন, এ অঞ্চলের বাইরের অনেক দেশ বহুদূর পথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরে এসে সামরিক মহড়া চালায় এবং তাদের কর্মকান্ডই আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ। চীনা মুখপাত্র তার ব্রিফিংয়ে কোনো দেশের নাম উলেস্নখ করেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করেই যে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন, এটি পরিষ্কার। উলেস্নখ্য, মৎস্য সম্পদসহ খনিজ আহরণের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহণ হয়ে থাকে। পুরো সমুদ্রপথকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করে চীন। তবে আরও কয়েকটি দেশও ওই অঞ্চলের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে। দেশগুলো হচ্ছে মালয়েশিয়া, ব্রম্ননাই, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ওই অঞ্চলের দাবি না করলেও আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ হিসেবে ওই অঞ্চলে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি ধরে রাখতে চায় তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে