শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সম্পর্কে ফাটল

যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফেরাচ্ছে ইউরোপ

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

৭০ বছরের বেশি সময় ধরে আটলান্টিকের এক পাশের যুক্তরাষ্ট্র আর অপর পাশের ইউরোপের মধ্যে স্থিতির অটল ভিত্তি ও যুক্তরাষ্ট্রচালিত পশ্চিমা শৃঙ্খলার মূল্যবোধের অনড় অবস্থান জারি রেখেছে। কিন্তু ২০২০ সালে এসে দেখা যাচ্ছে, এই সম্পর্ক নিয়ে আটলান্টিকের দুই পারেরই নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

চলতি সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ?'নিরাপদ দেশের' তালিকা প্রকাশ করে ইইউতে প্রবেশের অনুমতি দেয়। কিন্তু তালিকায় নেই যুক্তরাষ্ট্রের নাম। এতে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের করোনা বিপর্যয় দেখে অশ্রম্ন বিসর্জন করলেও, অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপের মাটিতে মার্কিন পর্যটকদের স্বাগত জানানো হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় হলো ইইউ ঘোষিত ওই তালিকায় করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের নাম থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রকে তালিকায় রাখেনি ইইউ। অবশ্য চীনের জন্য ইইউ দরজা খুলতে তখনই সম্মত হবে, যদি চীনও অনুরূপভাবে ইইউভুক্ত দেশগুলোর জন্য দরজা খুলে দেয়।

ইউরোপীয়দের নিয়ে একাধিকবার তীব্র সমালোচনাকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সম্ভবত সান্ত্বনা দিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ জোরের সঙ্গে জানিয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং বৈশ্বিক মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মার্কিনিদের জন্য আরও গ্রহণযোগ্য উপায় নিয়ে ভাবার ইচ্ছাও ব্রাসেলসের ছিল বলে অনেকে ব্যক্তিগতভাবে স্বীকারও করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইইউ এক কূটনীতিক বলেন, 'অতীতের ঘটনাগুলো বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য হলেও তালিকায় চীনকে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।'

বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আটলান্টিকের দুই পারের সম্পর্কের হঠাৎ ফাটলের প্রমাণ হিসেবে এ ঘটনাটিকে গ্রহণ করা যেতে পারে। ইউরোপিয়ান সম্পর্কের ব্যাপারে এখন ওয়াশিংটনেরও যে খুব একটা আগ্রহ নেই, সেটা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বলয় থেকে বের হয়ে বৃহৎ পরিসরে কূটনৈতিক স্বায়ত্তশাসন ফিরে পাওয়ার পথ যে ইউরোপীয় দেশগুলো সক্রিয়ভাবে খুঁজছে, এটাও খুবই পরিচিত ঘটনা। ইইউভুক্ত ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ কথা বিশেষভাবে সত্য।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব তৈরিতে ইউরোপের দেশগুলো একদিকে যেমন চীনের সঙ্গে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক অংশিদারীত্বের বিস্তৃত পরিসরে যুক্ত হচ্ছে, অপরদিকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে তারা বিশ্বের সুপার পাওয়ার হিসেবে পরিচিতি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নিজেদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনছে।

বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইসু্যতে ট্রাম্পের অবস্থানে অনেক ক্ষেত্রেই অখুশি ইউরোপ। ফলে ব্রাসেলস ওইসব বিষয়ে বন্দুক তাক করেছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি এবং ফাইভ-জি বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের কারণে ইউরোপ তাদের পুরাতন মিত্র চীনের পক্ষে নিজেদের দাঁড় করিয়েছে।

অবশ্যই, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গভীর, প্রতিষ্ঠিত বন্ধন নিয়ে হঠাৎ এমন কথা অবশ্য পরিস্থিতির সংকীর্ণ পাঠ হতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বেইজিংয়ের প্রতি ইউরোপের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির যে বিষয়টি দেখা যাচ্ছে, তাতে করে তা ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আঘাত হিসেবে গণ্য হবে।

ইউরোপী ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করেন ব্রাসেলসের এমন একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভূ-রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্রের পাশ থেকে এই সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যখন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনই। ব্রাসেলসের সেই কূটনীতিক বলেন, ?'পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টদের মতো মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ওবামার অতটা আগ্রহ ছিল না। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপীয়দের জন্য মধ্যপ্রাচ্য বেশি সমস্যার বিষয়। কিন্তু ইউরোপের বদলে চীন ও এশিয়ার প্রতি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন তিনি। ফলে ইউরোপ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।'

অবশ্য, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর দীর্ঘকাল যারা নজর রাখছেন, তাদের মতে, চার বছর আগেই এই সম্পর্ক শুকিয়ে গেছে। আসন্ন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি বারাক ওবামা প্রশাসনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পরাজিত করেন, তাহলে এ সম্পর্কের হাল আরও খারাপ হবে বলেই মত তাদের।

'অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর ইউরোপিয়ান অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি'র ভেলিনা চাকারোভা বলছেন, 'ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), বিশেষ করে জার্মানিকে নিজেদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গণ্য করেন ট্রাম্প; তাই তিনি দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হলে এ নিয়ে উত্তেজনা বাড়বে বৈ কমবে না।' তিনি আরও বলেন, 'নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা মতো বিষয়গুলোতে আরও বেশি আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অপরদিকে, ইউরোপিয়ান ন্যাটো সদস্যদের আক্রমণ ও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক খড়গ চাপিয়ে ইউরোপের এ ধরনের প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।'

ব্রাসেলসের ওই কর্মকর্তার ব্যাখ্যা, ইরানের মতো বড় একটা আন্তর্জাতিক বিষয়ে ট্রাম্প একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে জোটবদ্ধতা থেকে সরে এসে ইউরোপীয় নিরাপত্তাকে ছোট করেছেন, ফলে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকে সরে আসছে, কারণ তাদের মধ্যে এই চিন্তা ত্বরান্বিত হয়েছে যে, নিজের ভালোটা নিজেকেই বুঝতে হবে।'

মার্কিন প্রশাসনের এই শত্রম্নতাপূর্ণ আচরণ ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে জানিয়ে ওই কূটনীতিক বলেন, 'সমস্যাটা হলো, মার্কিন প্রশানসনের যেসব কর্মকর্তা চুক্তিমাফিক ইউরোপের সঙ্গে কাজ করতে চান, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর জন্য সরকার ছাড়পত্র দেয় না। তাই ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে, আমরা সত্যিকারের ঝামেলায় পড়ে যাব।'

আগামীতে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার বিষয়টি অনিশ্চিত। বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে, এই একটা সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নামমাত্র আন্তরিকতার সম্পর্ক রেখে ইউরোপ খোঁজ করছে নতুন অংশীদারের। যেই অংশীদারিত্ব তাদের আরও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ তৈরি করবে; অথচ কিছুদিন আগেও যারা ছিল পশ্চিমাদের শত্রম্নপক্ষ। সংবাদসূত্র : সিএনএন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105154 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1