অস্বস্তিতে ভারত

গালওয়ানে আবারও চীনা বাহিনীর ফেরার শঙ্কা

মাত্র দেড় কিলোমিটার পিছু হটেছে চীনের সেনারা চীনের ৫০টি প্রকল্প আটকে দিয়েছে ভারত

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হিমালয় বেষ্টিত পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় আবারও চীনা সেনাবাহিনীর ফিরে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সোমবার গালওয়ান উপত্যকার ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্ট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পিছু হটেছে চীনা বাহিনী। প্যাংগং রেঞ্জের 'ফিঙ্গার পয়েন্টে' তাদের অস্থায়ী ছাউনিগুলো সরানো হয়েছে। তবে চীনা বাহিনীর এই অতি সামান্য পদক্ষেপে এখনো আশার আলো দেখছে না ভারত। বরং অস্বস্তি আরও বাড়ছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ ভারতীয় সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, ভারত ভূখন্ডে প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকায় ঢুকে পড়েছিল চীনা বাহিনী। সেখানে মাত্র এক থেকে দুই কিলোমিটার পিছু হটেছে তারা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় এখনো ফিরে যায়নি চীনা বাহিনী। তাই তাদের আবারও ফিরে আসার সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারতীয় সেনাবাহিনী বলছে, দুই দেশের সেনাবাহিনী যেখানে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল, সেখানে পিপি (পেট্রোলিং পয়েন্ট) ১৪ থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার সরে গেছে চীনা বাহিনী। পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৫ ও পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৭ থেকে কিছু তাঁবু গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে চীনা সেনাদের হাবভাবে খুব একটা স্বস্তি পাচ্ছে না ভারত। সীমান্তে পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখছে তারা। গত ৩০ জুন চীন-ভারত সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পর সীমান্ত সমস্যার সমাধান না হওয়ায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। এরপরই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই আলোচনায় দুই দেশই সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে দুই দেশই তাদের বাহিনী সরিয়ে নিতে শুরু করে। মধ্যবর্তী স্থানে অন্তত তিন কিলোমিটার জুড়ে একটি নিরপেক্ষ এলাকা বা বাফার জোন তৈরি হবে। এর মাধ্যমে দুই দেশই যেন নিয়ন্ত্রণরেখায় বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলে, তা নিশ্চিত করা হবে। গোখরা হট স্প্রিং ও প্যাংগং লেক বরাবর কিছু সাঁজোয়া যান সরিয়েছে চীন। তবে তাদের বাহিনী এখনো পুরোপুরি ফিরে যায়নি। এছাড়া প্যাংগং রেঞ্জে ফিঙ্গার পয়েন্ট-৪ এর কাছাকাছি নিজেদের কংক্রিটের বাংকার বানিয়েছিল চীন। সেখানে তৈরি হয়েছিল শতাধিক অস্থায়ী ছাউনি। সামরিক পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল অস্থায়ী বিমানঘাঁটি। সেসব এখনো পুরোপুরি সরানো হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত নয় ভারতীয় বাহিনী। চীনের ৫০টি বিনিয়োগ প্রকল্প আটকে দিয়েছে ভারত এদিকে, সম্প্রতি ঘোষিত নতুন পর্যালোচনা নীতির আওতায় চীনা কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত ৫০টি প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করছে ভারত সরকার। বিষয়টির সঙ্গে জড়িত তিনটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সীমান্তে সংঘাতের পর দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কে যে সংকট তৈরি হয়েছে, এটি তারই উদাহরণ। গত এপ্রিলে ভারত কর্তৃক ঘোষিত নতুন নীতির আওতায় চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত হতে হবে; তা নতুন কোনো প্রকল্প হোক, আর চলমান প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থায়ন হোক না কেন। অবশ্য বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করে চীনা বিনিয়োগকারী ও বেইজিং এর সমালোচনা করেছিল। নতুন বিনিয়োগ বিধিগুলোর লক্ষ্য করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় সুবিধাবাদী বিষয়গুলো ঠেকানো। তবে শিল্প খাতের কর্মকর্তারা বলছেন, গত জুন মাসে দেশ দুটির মধ্যে বিতর্কিত সীমান্তে সংঘর্ষে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরও অবনতি এবং অনুমোদন প্রক্রিয়াকে আরও বিলম্ব করতে পারে; যে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে বিনিয়োগের আবেদনের ওপর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে দিলিস্নর এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, 'এতে বিভিন্ন ছাড়পত্র প্রয়োজন। অন্যরা যেভাবে ভাবে, আমরা এখন তার থেকেও আরও কিছুটা বেশি সতর্ক হয়েছি।' ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শিল্প বিভাগ এই নীতির খসড়া তৈরি করেছিল। সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে এ নিয়ে তাদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলেও তারা বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বস্ততার বিষয়টি নিয়ে তৈরি উদ্বেগের কারণে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। তারা জানিয়েছে, গত এপ্রিলে নতুন নীতি প্রণয়ন হওয়ার পর থেকে বিনিয়োগ প্রশ্নে ৪০ থেকে ৫০টি চীনা কোম্পানির আবেদন জমা পড়েছে। তবে সেগুলো এখনো অনুমোদন পায়নি। পর্যালোচনাধীন পর্যায়েই তা আটকে আছে।