৭০ বছরের সম্পর্কের ইতি

ডবিস্নউএইচও থেকে বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু যুক্তরাষ্ট্রের

আগামী বছরের ৬ জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরেই ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) থেকে বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বেশকিছু আন্তর্জাতিক চুক্তি ও বিভিন্ন সংস্থা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে এনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জাতিসংঘের বিশেষায়িত এই সংস্থাটির ভূমিকার সমালোচনাকারী ট্রাম্প আগেই সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। আগামী বছরের ৬ জুলাই থেকে কার্যকর হবে এ বিচ্ছেদ। সারাবিশ্ব যখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিপর্যস্ত, ঠিক এমন সময়েই এই বিতর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণ করল ট্রাম্প প্রশাসন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের এক মুখপাত্র ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের নোটিশ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস করোনাভাইরাসকে 'গণশত্রম্ন' হিসেবে উলেস্নখ করে বলেন, তা মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য ও বৈশ্বিক সংহতি যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করে আসছেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে জাতিসংঘের এই সংস্থা 'চীনের পুতুলের' ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিন্নের ওই ঘোষণা ট্রাম্প দিয়েছিলেন মাসখানেক আগে। নিয়ম অনুযায়ী, তা কার্যকর করার আগে এক বছরের নোটিস দিতে হয় এবং জেনেভাভিত্তিক এই বিশ্ব সংস্থাকে যে চাঁদা দেশটির দেওয়ার কথা তা এই সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব দেশের টাকায় চলে, তার মধ্যে এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চাঁদার পরিমাণই এতদিন ছিল সবচেয়ে বেশি। কেবল ২০১৯ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তহবিলের পরিমাণ ছিল ৪০ কোটি ডলারের বেশি, যা ডবিস্নউএইচওর মোট বাজেটের ১৫ শতাংশের মত। ডবিস্নউএইচওর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সেই চাঁদা বাবদে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখনও ২০ কোটি ডলারের বেশি পাওনা রয়েছে জাতিসংঘের এ সংস্থার। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চীনের সঙ্গে টানাপড়েনের জেরে যুক্তরাষ্ট্র এখন ডবিস্নউএইচওর সঙ্গে ৭০ বছরের সম্পর্কের অবসান ঘটাতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি ট্রাম্প বলেছিলেন, চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সংস্থাটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার তথ্য 'গোপন করেছিল'। ডবিস্নউএইচওকে 'চীন ঘেঁষা' আখ্যায়িত করে এই বিশ্ব সংস্থাকে জবাবদিহিতায় আনারও দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্পের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস বলেছিলেন, প্রতিটি দেশের সঙ্গেই তারা কাজ করেন। পক্ষপাতের সুযোগ তাদের নেই। আর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, এখন ডবিস্নউএইচওর তহবিল বন্ধের সময় নয়। এই সংকট মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এদিকে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটি এই মাইলফলক পার হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় দুই ডজনেরও বেশি রাজ্যে প্রতিদিন নতুন সংক্রমণের উদ্বেগজনক উলস্নম্ফনের তথ্য জানিয়েছে কর্তৃপক্ষগুলো। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অংশজুড়ে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার ইঙ্গিত। মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়া, হাওয়াই, আইডাহো, মিজৌরি, মন্টানা, ওকালাহোমা ও টেক্সাসে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধির নতুন রেকর্ড হয়েছে। সোলাইমানি হত্যাকান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ভুয়া : জাতিসংঘ এদিকে, ইরানের কুদস বাহিনীর সাবেক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আনা অভিযোগের কোনও প্রমাণ মেলেনি। বরং এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের ঘোষণা লঙ্ঘন করেছে ওয়াশিংটন। এমনটাই উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত এক বিশেষ প্রতিবেদনে। এটি তৈরি করেছেন সংস্থাটির বিচার বিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ইরানে ড্রোন হামলা চালিয়ে জেনারেল কাসেমিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে চালানো ওই হামলায় তার সহযোগী ও ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠী 'হাশদ আশ-শাবি'র উপপ্রধান মাহদি আল মুহান্দিসসহ আরও কয়েকজন নিহত হন। এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার বিদ্যমান উত্তেজনায় ঘি ঢালে। তবে সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ নাকচ করে দেন।