করোনা মহামারি

সংক্রমণের নতুন রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে

লকডাউন শিথিল করার খেসারতই সংক্রমণ বৃদ্ধি : ফাউচি আগাম ১৫ লাখ কবর খুঁড়ছে দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে একজনের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
নভেল করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্যমতে, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমণের তালিকায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র আর তৃতীয় অবস্থানে ভারত। দেশ দুটিতে প্রতিদিনই সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ৬৫ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আগেরদিন যা ছিল ৬০ হাজার। অন্যদিকে, ভারতে ২৬ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে একদিনে এটাই সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, এনডিটিভি কোভিড-১৯ মহামারিতে সংক্রমণ আর মৃতু্যর ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত সব রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে ৩২ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে প্রায় এক লাখ ৩৬ হাজার। গত কয়েকদিনে সংক্রমণ খুব বেশি মাত্রায় বেড়েছে। এখন প্রতিদিন ৫০-৬০ হাজার পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। ফলে মৃতু্যও বেড়ে গেছে। গত তিনদিনে গড়ে ৯০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। কেন এতটা বেড়ে গেল? যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ও হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য ডা. অ্যান্থনি ফাউচি মনে করেন, কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে খুব তাড়াতাড়ি লকডাউন শিথিল করার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। ফাউচি বলছেন, 'সতর্কতার সঙ্গে ও বিবেচনাপ্রসূতভাবে লকডাউন তুলে নেয়ার স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা দেয়া হলেও কিছু অঙ্গরাজ্য এসব নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে বললে ফ্লোরিডাকেই দেখুন, আমি মনে করি, সেখানে সবকিছু খুব দ্রম্নত খুলে দেয়া হয়েছে, এখন ভাইরাসটিও খুব দ্রম্নত বাড়ছে। এটা যেন সত্যিকার এক ঝড়, যা সংক্রমণ রোগ ও জনস্বাস্থ্য খাতের মানুষদের জন্য এক দুঃস্বপ্ন।' ফ্লোরিডায় কিছুদিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার মানুষের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হচ্ছে। গত মাসের পর দিনে এক হাজারের নিচে কখনো নামেনি। কোভিড-১৯ মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ফ্লোরিডা। অন্যদিকে, করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারসংখ্যা পাঁচ কোটির কাছাকাছি পৌঁছেছে। দেশটির শ্রম অধিদপ্তর বলছে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেও নতুন করে বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছেন ১৩ লাখ মার্কিনি। তবে কর্মহীন মানুষের বেকারভাতার আবেদনের সংখ্যা বাড়লেও লকডাউন শিথিল করায় উলেস্নখযোগ্যহারে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। এদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাত লাখ ৯৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃতু্য হয়েছে আরও ৪৭৫ জনের। ফলে এখন পর্যন্ত দেশটিতে কমপক্ষে ২১ হাজার ৬৫৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ভারতে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। অর্থাৎ, আক্রান্তদের মধ্যে এরই মধ্যে ৬২ দশমিক ৪২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে। দেশটিতে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিলিস্ন, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানায়। মহারাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি এবং মৃতু্য হয়েছে কমপক্ষে ৯ হাজার ৬৬৭ জনের। ওই রাজ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে এক লাখ ২৭ হাজার ২৫৯ জন। আর তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ২৬ হাজার ৫৮১ এবং মারা গেছে এবং হাজার ৭৬৫ জন। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত ও মৃতু্যতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজধানী শহর দিলিস্ন। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ সাত হাজার ৫১ জন। আগেভাগেই ১৫ লাখ কবর খুঁড়ছে দক্ষিণ আফ্রিকা এদিকে, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ায় আগেই ১৫ লাখ কবর খুঁড়ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়েই ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর চীনে প্রাদুর্ভাব হওয়া এ ভাইরাস এরই মধ্যে বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ভয়ঙ্কর দিনের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে আফ্রিকার এই দেশটি। দক্ষিণ আফ্রিকার গাওতেং প্রদেশে ১৫ লাখ কবর খোঁড়া হচ্ছে। সেখানকার প্রশাসনের এমন উদ্যোগ নিয়ে এরই মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। দেশটির করোনার 'হটস্পট' গাওতেং প্রদেশ। সেখানকার মেডিকেল কাউন্সিলের সদস্য ডা. বান্দিলে মাসুকু জানিয়েছেন, বাধ্য হয়েই তাদের এমন অস্বস্তিকর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে অনেকেই বলছেন, প্রশাসন আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এমন নিন্দনীয় কাজ শুরু করেছে।