সামনে আরও বিপদ

করোনা সংক্রমণের চাপে পিষ্ট বিশ্ব

বিশ্বে আক্রান্ত এক কোটি ৩৩ লাখ, মৃতু্য পাঁচ লাখ ৭৭ হাজারে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আরও ৬০ হাজার আক্রান্ত তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর মৃতু্য

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাস সংক্রমণের একের পর এক মাইলফলকে পিষ্ট হচ্ছে বিশ্ব। মাত্র পাঁচ দিনে ১০ লাখের বেশি রোগী শনাক্তের মধ্যে দিয়ে বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩৩ লাখ ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্যমতে, করোনা সংক্রমণে জানুয়ারির শুরুর দিকে প্রথম মৃতু্যর পর সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৭ হাজারে পৌঁছেছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা জরিপ সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, রোগটি সবচেয়ে দ্রম্নতগতিতে বিস্তার লাভ করছে লাতিন আমেরিকায়। আর দুই আমেরিকা মহাদেশে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, অর্ধেকের বেশি মৃতু্যর ঘটনাও সেখানে ঘটেছে। আক্রান্ত ও মৃতু্যতে বিশ্বে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলেও রোগীর সংখ্যা দ্রম্নতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরসহ বিশ্বের কয়েকটি এলাকায় ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া হংকংয়ে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরুর আশঙ্কায় সামাজিক দূরত্ব পালনে ফের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এদিকে, শীতকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রিটিশ গবেষকরা বলছেন, শীতে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণে কেবল যুক্তরাজ্যেই এক লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। তবে দ্রম্নততর সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে মৃতু্যর এই সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা। ৩৭ জন বিজ্ঞানী ও অ্যাকাডেমিশিয়ান মিলে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ খারাপ পরিণতির কথা বিবেচনা করে তারা একটি মডেল দাঁড় করিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, শীতে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যেতে পারে। সর্বোচ্চ মৃতু্য হতে পারে আগামী বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি মাসে। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আরও প্রায় ৬০ হাজার আক্রান্ত এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি করোনাভাইরাসে নতুন করে আরও ৫৯ হাজার ২২২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এদিন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অনেক বেড়ে গেছে। গত শনিবার দেশটিতে ৬৬ হাজার ৫২৮ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে এটি ছিল একটি নতুন রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ ভাইরাসে নতুন করে আরও ৪১১ জন প্রাণ হারিয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক লাখ ৩৮ হাজার ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় এ দুই অঞ্চলের রাজ্যগুলোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফের খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া থেমে গেছে। এসব অঞ্চলে বর্তমানে মাস্ক পরার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশ্বে তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর মৃতু্য অন্যদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে তিন হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীর মৃতু্য হয়েছে। পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবই এসব মৃতু্যর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা অ্যামনেস্টি বলছে, করোনাভাইরাসে ৫৪৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃতু্য হয়েছে রাশিয়ায়। যুক্তরাজ্যে মারা গেছে ৫৪০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, এর মধ্যে ২৬২ জন স্বেচ্ছাসেবীও রয়েছেন। আর করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্য হয়েছে ৫০৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর। যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনা সংক্রমণ ও মৃতু্যতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে মারা গেছে ৩৫১ স্বাস্থ্যকর্মী। আর মেক্সিকো এবং লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে মৃতু্য হয়েছে ২৪৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীর। অরক্ষিত কর্মক্ষেত্র, কম বেতন এবং একটানা দীর্ঘসময় স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে কাজ করানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বলা হয়, মহামারিটি ছড়িয়ে পড়ার পরে চিকিৎসাকর্মীরা প্রায়ই কঠিন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার সম্মুখ লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন। বিভিন্ন দেশ তাদের চিকিৎসাকর্মীদের পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম- ফেস মাস্ক, গাউন, গস্নাভস এবং গগলস সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মৃতু্যর এ হার বেড়েছে।