শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বদল

হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বিদেশি শিক্ষার্থীরা

বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে নতুন নীতিমালা প্রত্যাহার এর আগে মামলা করেছিল এমআইটি ও হার্ভার্ডের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০
পরিবর্তনের খবরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস - রয়টার্স

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে শরৎকালীন সেশনে কেবল অনলাইনে ক্লাস করবে এমন বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য সরকারের আইনি পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন নীতিমালা ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা সিদ্ধান্তটি থেকে সরে এলো। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ঘোষণায় হাফ ছেড়ে বাঁচল দেশটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও হার্ভার্ডের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নতুন ওই নীতিমালার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। একই বিষয়ে এ সপ্তাহে মামলা করেছেন অন্তত ১৮টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নররাও।

মঙ্গলবার ম্যাসাচুসেটসের ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক অ্যালিসন বারাস বলেন, 'সরকারের ওই নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়ে সব পক্ষই সমঝোতায় পৌঁছেছে। তাই নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীকেই ফেরত পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র।'

সমঝোতা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সংস্থা পরিচালিত স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে মার্চের নির্দেশনাই পুনর্বহাল করতে যাচ্ছে বলে মার্কিন গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আগের নীতিমালায় মহামারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে তাদের সব কোর্স অনলাইনে করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। অনলাইনে ক্লাস করলেও তারা 'শিক্ষার্থী ভিসায়' বৈধভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে, বলা হয়েছিল মার্চের নির্দেশনায়।

প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যায়। তাদের বেশিরভাগকেই সম্পূর্ণ টিউশন ফি দিতে হয়। এই অর্থ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের অন্যতম উৎস। সম্প্রতি হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ এক ঘোষণায় করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে নতুন শিক্ষাবর্ষে সব কোর্সের নির্দেশনা অনলাইনে দেওয়া হবে বলে জানায়।

এ নির্দেশনা কেবল যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, যারা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছিল তারা। হার্ভার্ডের পর এমআইটিসহ আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা জানিয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন ঘোষণার মধ্যে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আইসিইর নতুন নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিপদে ফেলে দেয়। গত ৬ জুলাইয়ের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি তাদের সব ক্লাস অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে দেশটিতে অবস্থান করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

সশরীরে উপস্থিত থাকার দরকার আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো কোর্সে ভর্তি না থাকলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। নতুন এ নিয়ম না মানলে শিক্ষার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠানো হবে বলেও সতর্ক করে সংস্থাটি।

অথচ আইসিই বসন্ত ও গ্রীষ্মকালীন সেশনে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সব ক্লাস অনলাইনে করার সুযোগ দিয়েছিল। নির্দেশনা জারির দুই দিনের মাথায় হার্ভার্ড ও এমআইটির বিরুদ্ধে আদালতে যায়। পরে আরও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাতে যুক্ত হয়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কয়েক মাসের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির পর যুক্তরাষ্ট্র যে ফের স্বাভাবিক হচ্ছে তা দেখানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শরৎকালীন সেশন থেকে সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন; তারই ধারাবাহিকতায় আইসিইর ৬ জুলাইয়ের ওই নির্দেশনা। নির্দেশনাটি মূলত এফ-১ ও এম-১ ভিসাধারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতো বলে গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে ৯ হাজার ৫১৮টি 'এফ' ক্যাটাগরির তিন লাখ ৮৮ হাজার ৮৩৯টি 'এম' ক্যাটাগরির ভিসা দিয়েছিল বলে আইসিইর দেওয়া তথ্যে জানা গেছে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবদান ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

আইসিইর এ আদেশের পরপরই এর বিরুদ্ধে সরব হন দেশটির রাজনীতিবিদ-শিক্ষাবিদরা। হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট ল্যারি ব্যাকো এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, 'আইসিইর জারি করা নির্দেশনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জটিল সমস্যায় ফেলে দিয়েছে, বিশেষ করে অনলাইন প্রোগ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের; দেশত্যাগ বা স্কুল পরিবর্তন ছাড়া তাদের হাতে খুব একটা বিকল্প নেই।'

ডেমোক্রেটিক সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, 'বিশ্বব্যাপী মহামারি চলাকালীন বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105989 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1