বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বর্ষপূর্তি আজ

জম্মু-কাশ্মীরে ব্যাপক উত্তেজনা

কালো দিবস উদযাপনের ঘোষণা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই দিনের কারফিউ সেনা কর্মকর্তা অপহরণ

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল
বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা বাতিলের বর্ষপূর্তির দিন 'কালো দিবস' উদযাপন ঘিরে ব্যাপক প্রতিবাদের শঙ্কায় ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গত বছরের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। এদিকে, এই চরম উত্তেজনার মধ্যেই কাশ্মীরে এক সেনা কর্মকর্তা নিখোঁজ হয়েছেন। সেনাবাহিনী এবং পুলিশের দাবি, তাকে কুলগাম অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয়েছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এএনআই, ডিডাবিস্নউ নিউজ, বিবিসি স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, ৫ আগস্ট কাশ্মীরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর কালো দিবস পালনে সহিংসতা ঠেকাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাবেশ আগে থেকেই নিষিদ্ধ রয়েছে। গত বছর জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে বিভক্ত করা হয়। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কাশ্মীর উত্তেজনায় কাঁপছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ৫ আগস্ট সহিংসতার আশঙ্কায় কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে প্রশাসন। গত বছরের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের জেরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ওই অঞ্চল। পরে দেশটির সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে কারফিউ জারির পাশাপাশি মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ১৫০ দিনের বেশি সময় ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে পরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়। তারপরও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে কাশ্মীরের বাসিন্দারা। বিক্ষোভ ঠেকাতে কয়েক হাজার কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীর উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও ভারতের অন্যান্য অংশের অনেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের এক বছরপূর্তির দিনটিকে ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে কাশ্মীরে, তা থেকে স্পষ্ট, সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। প্রশাসন জানিয়েছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নাশকতার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। এবং সে কারণেই দ্রম্নত লকডাউন এবং কারফিউ জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরের কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ৫ আগস্ট দিনটিকে 'কালো দিবস' হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারই মধ্যে সেনা কর্মকর্তা অপহরণের ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, গত রোববার কুলগামে গিয়েছিলেন ওই সেনা কর্মকর্তা। ওই দিনই তিনি নিখোঁজ হন। সোমবার তার পোড়া গাড়ি পুলিশ উদ্ধার করে। তবে কারা তাকে অপহরণ করেছে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো খবর পায়নি পুলিশ। দিকে দিকে তলস্নাশি শুরু হয়েছে। ওই সেনার পরিবারও বিবৃতি দিয়ে অফিসারকে মুক্তির আবেদন করেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, গত এক বছরে কাশ্মীর উপত্যকায় যা ঘটেছে, তা নজিরবিহীন। মাসের পর মাস লকডাউন জারি ছিল। এবং তারই মধ্যে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা হয়। লকডাউন, কারফিউ থাকলেও এই এক বছরে কাশ্মীরে সেনার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াই জারি থেকেছে। জঙ্গিদের হাতে প্রাণ গেছে বিজেপি নেতার। সেনা সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে প্রায় ১৫০ 'জঙ্গি'র মৃতু্য হয়েছে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আসা ব্যক্তির সংখ্যা ১৭। অর্থাৎ, বাকি সবাই কাশ্মীরের অধিবাসী। বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে বলেই সূত্র জানাচ্ছে। ফলে উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে, এমনটা বলা যায় না। পরিস্থিতি যে অনুকূল নয়, তা বুঝতে পারছে সরকারও। সে কারণেই পরপর দুই দিন কারফিউ জারি করা হয়েছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। ওই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরেই ভারতবিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিনিয়ত সংঘাত-সহিংসতা ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভারতের এই অঞ্চল বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে। ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশই বিতর্কিত এই ভূখন্ডের মালিকানা দাবি করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রতিবেশি দুই দেশের মাঝে কাশ্মীর ইসু্যতে যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে বিশ্বকে সতর্ক করে দেন। কাশ্মীর নিয়ে প্রতিবেশি পারমাণবিক অস্ত্রধারী এ দুই দেশ এরই মধ্যে দুই বার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। গত বছরের ফেব্রম্নয়ারির পর থেকে দুই দেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষও বৃদ্ধি পেয়েছে।