শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৪০ কেজি রুপার ইটে রামমন্দির নির্মাণের উদ্বোধন মোদির

যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা শহরে বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার ৪০ কেজি ওজনের রুপার ইট দিয়ে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। উলেস্নখ্য, রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে মোদি ২৯ বছর পর অযোধ্যায় পা রাখেন। সংবাদসূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে মোদি বলেন, 'বহু দিনের প্রতীক্ষা শেষ। আমাদের জীবনে আজকের দিনটি আসতে পারে অনেকে বিশ্বাস করতেই পারেনি। এতদিন তাঁবুতে মাথা গুঁজে ছিলেন রামলালা। এবার তার জন্য সুবিশাল মন্দির নির্মিত হবে। বহু শতক ধরে যে ভাঙা-গড়ার খেলা চলে আসছে। আজ রামজন্মভূমি সেটা থেকে মুক্ত হলো।' মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মূল প্রতিশ্রম্নতির একটি। এই মন্দির নির্মাণ ভারতের কট্টর হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদকে আরও তীব্র করবে বলে মত পর্যবেক্ষকদের। অযোধ্যার এক বাসিন্দা বলেন, 'আজ আমি অনেক খুশি। কারণ, ভগবান রাম অবশেষে সঠিক একটি ঠিকানা পেয়েছেন।' মন্দির নির্মাণকাজের উদ্বোধনীতে ৩১০ জন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যাদের মধ্যে ১৩৫ জন ধর্মীয় নেতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা যোগী আদিত্যনাথসহ বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে করোনায় নিহতদের প্রতি সম্মান জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করা হয়। দেশটিতে ১৯ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে প্রায় ৪০ হাজার। মন্দির নির্মাণ কর্তৃপক্ষ রামভক্তদের কাছ থেকে দুই লাখ 'শ্রী রাম' খচিত ইট সংগ্রহ করেছে। যেগুলো ভিত্তি নির্মাণে ব্যবহার করা হবে। মন্দির নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান স্থপতি চন্ত্রকান্ত সোমপুরা বলেন, ভারতের উত্তরাঞ্চলে নির্মিত মন্দিরের নকশা 'নাগারা'কে অনুকরণ করে রামমন্দির তৈরি হবে। তিন তলাবিশিষ্ট বিশাল মন্দিরে ৩৬৬টি পিলার (খাম্বা) থাকবে। অযোধ্যা ইসু্যতে যারা জড়িত হয়েছে, তাদের সম্মানে একটি মেমোরিয়াল ওয়াল নির্মাণ করা হবে। ১৫২৭ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের নির্দেশে উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়। মসজিদের জায়গায় রামমন্দির থাকতে পারে- এমন ধারণায় ১৮ শতক থেকে এ নিয়ে মুসলমানদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ায় হিন্দুরা। ১৯ শতকের শুরু থেকে এই বিতর্কের জের ধরে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে একাধিক কলহের ঘটনা ঘটে। পাল্টাপাল্টি আদালতে মামলা দায়ের চলতে থাকে। ১৯৪৯ সালে হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দু মহাসভার সঙ্গে জোট বেঁধে গোপনে রামের একটি মূর্তি মসজিদের অভ্যন্তরে রেখে দেয়। এরপরই দাঙ্গা ঠেকানোর নামে পুরো মসজিদ সিলগালা করে দেয় সরকার। প্রবেশাধিকার পেতে আদালতে মামলা করে হিন্দু-মুসলমান দুইপক্ষ। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং তাদের উগ্রপন্থি সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। যার ফলে পুরো ভারতজুড়েই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ মারা যায়। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলমান। ২০১০ সালে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখাড়া, রামলালার মধ্যে জমি সমান ভাগ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ উচ্চ আদালত। এর ফলে হিন্দুরা পায় জমির তিন ভাগের দুই ভাগ। মুসলমানরা এক ভাগ। এর বিরুদ্ধে সব পক্ষই উচ্চ আদালতে আপিল করে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায়কে বাতিল ঘোষণা করে। রায় দেয় ২ দশমিক ৭৭ একরের পুরো জমিই এমন একটি ট্রাস্টকে দিতে হবে; যারা মন্দির নির্মাণ করবে। একই সঙ্গে আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, সুন্নী ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প পাঁচ একর জমি দিতে। যেখানে মসজিদ নির্মাণ হবে। আর সে জমি অযোধ্যায়ই হতে হবে। মন্দির নির্মাণ এবং পর্যবেক্ষণে একটি ট্রাস্ট গঠনে সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। রায়ে আদালত আরও বলে, 'রামমন্দির ভেঙে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছে- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মসজিদ ভাঙাকে অপরাধ বলেও অভিহিত করা হয়।' ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বলছে, বাবরি মসজিদের ধংসাবশেষের তলদেশে কোনো ইসলামী নিদর্শন পাওয়া যায়নি। তাই আদালত সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সর্বসম্মতভাবে রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেয়। মসজিদের তলদেশে ইসলামী নিদর্শন পাওয়া পায়নি। পাওয়া যায়নি রামের বা মন্দিরের কোনো অস্তিত্বও। মন্দির ভেঙে যেহেতু মসজিদ নির্মাণ হয়নি, সেখানে কেন বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির তৈরি হবে? সে সময় এই প্রশ্নও উঠে। এ ছাড়া, বাবরি মসজিদ ভাঙাকে অপরাধ আখ্যা দিলেও সেই অপরাধের শাস্তিও ঘোষাণা করা হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে