বৈরুত বিস্ফোরণ

ধ্বংসস্তূপে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ

সরকারের উদাসীনতায় বন্দরে বিস্ফোরণ, দাবি বিক্ষোভকারীদের

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বৈরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ
ঝুঁকি জেনেও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো মারাত্মক দাহ্য পদার্থ কেন ?বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছিল, সরকারের কাছে তার জবাব চেয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ। রাজধানী বৈরুতের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা বিক্ষোভকারীদের দাবি, বর্তমান সরকারের অবহেলার জন্যই বন্দরে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাদের অভিযোগ, ছয় বছর ধরে যেভাবে গুদামে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফেলে রাখা হয়েছিল, তাতে আরও আগে এমন বিস্ফোরণ ঘটতে পারতো। গত বৃহস্পতিবারই বন্দর কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ জানিয়েছিলেন, একাধিকবার সরকারের কাছে এ বিষয়ে চিঠি লেখা হয়েছিল। চিঠি দেওয়া হয়েছিল আদালতকেও। কিন্তু অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরানো বা বিক্রির বিষয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। লেবাননের এক আইনপ্রণেতা সেলিম আউন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই দাহ্য পদার্থ কীভাবে সরানো হবে, সে পরামর্শ চেয়ে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লেবাননের কাস্টমস কর্মকর্তারা আদালতে অন্তত ছয়বার চিঠি লিখেছেন। কিন্তু বিচার বিভাগ তাদের চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। বৈরুত বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার হাসান বুধবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কাস্টমস এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বারবার অনুরোধের পরও 'কিছুই হয়নি'। তিনি বলেন, 'আমাদের বলা হয়েছিল, ওই পণ্য নিলামে বিক্রি করা হবে। কিন্তু তা আর কখনো হয়নি। বিচার বিভাগও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।' বৈরুত বন্দরের কাছের একটি গুদামে ২০১৩ সাল থেকে দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট অনিরাপদ অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। যা থেকেই গত মঙ্গলবার বিকালে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের ধাক্কায় পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। আহত হয়েছে আরও পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। রাজধানী বৈরুতের অর্ধেকই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে এই বিস্ফোরণে। এখনো নিখোঁজ বহু মানুষ। তাই হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। এছাড়া এ ঘটনায় তিন লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে বন্দরের মহাব্যবস্থাপকও রয়েছেন। বিস্ফোরণের পর বুধবার এমপি মারওয়ান হামাদহ পদত্যাগ করেন। আরও দুই শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাও পদত্যাগ করেছেন। এ ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেশটির নেতৃত্বে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন জর্ডানে নিযুক্ত লেবাননের রাষ্ট্রদূত ট্রেসি শামৌন। বৈরুতে বিস্ফোরণের পর আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ প্রথম লেবানন সফর করেছেন। বৃহস্পতিবার বৈরুতের অবস্থা পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, লেবাননে দেশ পরিচালনায় 'বড় ধরনের' পরিবর্তন প্রয়োজন। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানও জানান তিনি। ফ্রান্সের একটি উদ্ধারকারী দল বৈরুতে উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো জীবিত মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে ধারণা করছেন তারা। বিস্ফোরণে এত মানুষ আহত হয়েছেন যে, তাদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গণস্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান আহতদের চিকিৎসায় সাহায্য করার আবেদন জানিয়েছেন। এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, লেবাননের কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের জন্য যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে দুষছেন, সেটি আসলে লেবাননের নয়, বরং রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি পণ্যবাহী জাহাজে করে লেবাননে পৌঁছেছিল। ছয় বছরের বেশি সময় আগের ওই ঘটনায় মোজাম্বিকে যাওয়ার পথে থাকা ওই রুশ জাহাজ ফুটো হয়ে যাওয়ায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ভেড়ে। জাহাজটিতে বহন করা হচ্ছিল দুই হাজার টনের বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। সার বানাতে কিংবা বোমা তৈরির কাজে এই রাসায়নিক ব্যবহার হয়। জাহাজটির আর গন্তব্যে ফেরা হয়নি। অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিরোধের কারণে যে রুশ ব্যবসায়ী জাহাজটি লিজ নিয়েছিলেন, তিনি চুক্তি বাতিল করেন। এরপরই জাহাজের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুতের বন্দরের কাছের একটি গুদামে নেওয়া হয়। এতবছর ধরে সেখানেই তা পড়ে ছিল। উলেস্নখ্য, লেবাননে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত বছরেই। অর্থনীতির বেহাল দশা, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। করোনাকালে সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। করোনার মধ্যেও মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তবে বিক্ষোভ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।