এবার 'মিশন কানাডা'

সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ

সাবেক কর্মকর্তা আল-জাবরির মুখ বন্ধ করতেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সৌদি আরবের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যা করার উদ্দেশে কানাডায় একটি 'হিট স্কোয়াড' বা 'গুপ্তঘাতকের দল' পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দায়ের করা নথিপত্রে উলেস্নখ করা হয়, ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কে জামাল খাশোগিকে হত্যার পরপরই সাদ আল-জাবরিকে হত্যার পরিকল্পনাটি করা হয়। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা সৌদি আরব সরকারের একজন অভিজ্ঞ সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন সাদ আল-জাবরি। নির্বাসিত হওয়ার পর গত তিন বছর ধরে তিনি কানাডায় থাকেন। আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী, টরেন্টো পিয়ারসন বিমানবন্দর দিয়ে হত্যাকারীরা কানাডায় প্রবেশ করার সময় সেখানকার সীমান্তরক্ষীদের সন্দেহ হয় এবং তারা বাধা দেয়। এতে হত্যার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্স এবং অন্যান্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সৌদি আরবের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলেন ৬১ বছর বয়সী জাবরি। দায়ের করা ১০৬ পৃষ্ঠার অপ্রমাণিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, জাবরির মুখ বন্ধ করার উদ্দেশে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যিনি বিশ্বে 'এমবিএস' নামে বেশি পরিচিত। নথি অনুযায়ী, মিশন কানাডায় 'টাইগার স্কোয়াড' নামের পেশাদার হত্যাকারীদের একটি দল পাঠানো হয়েছিল জাবরিকে হত্যা করতে। এদিকে, জাবরির ভাষ্য অনুযায়ী, তার কাছে থাকা সংবেদনশীল তথ্যের কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসু্যলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায়ও টাইগার স্কোয়াডের সদস্যরা যুক্ত ছিল বলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পেশ করা নথিতে। সেখানে উলেস্নখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে এত অপমানজনক, সংবেদনশীল এবং ভয়াবহ তথ্য জাবরির স্মৃতি এবং মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি আর কোথাও সম্ভবত রক্ষিত নেই। সেই কারণেই অভিযুক্ত যুবরাজ সালমান জাবরিকে মৃত দেখতে চান এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন গত তিন বছর ধরে। মোহাম্মদ বিন সালমান তার বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার পর তিন বছর আগে সৌদি আরব ছাড়েন সাদ আল-জাবরি। এরপর ২০১৭ সালে তুরস্ক হয়ে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি। তিনি অভিযোগ তোলেন, যুবরাজ সালমান একাধিকবার তাকে সৌদি আরবে ফেরানোর চেষ্টা করেন। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে মেসেজও পাঠান তাকে। সেগুলোর মধ্যে একটি মেসেজের বক্তব্য ছিল : 'আমরা নিশ্চিতভাবে তোমার কাছে পৌঁছাব।' জাবরি বলেন, 'জামাল খাশোগিকে হত্যা করার দুই সপ্তাহের মধ্যে টাইগার স্কোয়াডের সদস্যরা কানাডায় পৌঁছায় তাকে হত্যা করার মিশন নিয়ে। আদালতে পেশ করা নথিতে উলেস্নখ করা হয়, জামাল খাশোগিকে হত্যা করে লাশ খন্ডিত করার অভিযোগ ছিল যে দলটির বিরুদ্ধে, ওই দলের একজন সদস্য কানাডায় পাঠানো টাইগার স্কোয়াডেও ছিল। তার কাছে দুই ব্যাগে ফরেনসিক উপকরণ ছিল বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। নথিতে বলা হয়, কানাডার সীমান্ত রক্ষাকারীবাহিনী ওই দলটি সম্পর্কে 'সন্দিহান হয়ে ওঠে' এবং তাদের কানাডায় প্রবেশে বাধা দেয়। জাবরি আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে। এ সম্পর্কে সৌদি সরকারের মতামত চাওয়া হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি। বহু বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন-নায়েফের ডান হাত ছিলেন সাদ আল-জাবরি। এই দশকের গোড়ার দিকে আল-কায়েদাকে পরাজিত করার পেছনে মোহাম্মদ বিন-নায়েফের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। সৌদি আরবের সঙ্গে 'ফাইভ আইস'র (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্কের মূল মাধ্যম ছিলেন জাবরি। 'আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সে' এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করা মৃদুভাষী সাদ আল-জাবির এক পর্যায়ে মন্ত্রী হন এবং অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ে মেজর জেনারেলের পদমর্যাদা লাভ করেন। কিন্তু পরিস্থিতি আমূল পাল্টে যায় ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুলস্নাহ মারা যাওয়ার পর। বাদশাহ আবদুলস্নাহ মারা যাওয়ার পর তার সৎ ভাই সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি বাদশাহ হন এবং তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০১৭ সালে বাদশাহ সালমান তার ক্ষমতার উত্তরাধিকার হিসেবে বেশ নাটকীয় পরিবর্তন আনেন। বাবা বাদশাহ সালমানের সম্মতিতে তিনি কোনো রক্তপাত ছাড়াই এক সামরিক অভু্যত্থান পরিচালনা করেন। সে সময় সৌদি রাজপরিবারের পরবর্তী উত্তরাধিকারী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে নিজে হয়ে যান যুবরাজ, রাজক্ষমতার-পরবর্তী উত্তরাধিকারী।