মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটযুদ্ধ

জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে ট্রাম্প না বাইডেন?

হ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, উত্তাপ ততই বাড়ছে হ এ পর্যন্ত হওয়া জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন এগিয়ে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেন

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনেই ভোটাররা নির্ধারণ করবেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তারা আরও চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসে দেখতে চান কিনা। এই নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। যিনি বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেই বেশি পরিচিত। যদিও তিনি গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকেই দেশটির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, জনমত যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সারাদেশে লোকজনের পছন্দ-অপছন্দ জানতে ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে তারা প্রশ্ন করছে, কোন্‌ প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে আগ্রহী তারা। সারাদেশে জনপ্রিয়তার দৌড়ে কোন্‌ প্রার্থী কতটা এগিয়ে আছেন, সে বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জরিপ বা সমীক্ষা থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে এসব জরিপ থেকে নির্বাচনের ফল সম্পর্কে আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন। উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা উলেস্নখ করা যেতে পারে। ওই নির্বাচনের আগে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে তিনি ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নির্বাচনী ব্যবস্থা 'ইলেক্টোরাল কলেজ' পদ্ধতির কারণে এ রকম হয়েছে। ফলে বেশি ভোট পেলেই নির্বাচনে জয়ী হবেন, সেটা সবসময় নিশ্চিত করে বলা যায় না। চলতি বছর জাতীয় পর্যায়ে যত জরিপ হয়েছে, তার বেশিরভাগ ফলেই জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। গত কয়েক সপ্তাহে যেসব জরিপ হয়েছে, তাতে দেখা গেছে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে ১০ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত কয়েকদিনে এই দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। গত ৪ আগস্টের জরিপে দেখা গেছে, জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন যেখানে ৪৯ শতাংশ, সেখানে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ৪৫। গত নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প কার অবস্থান কোথায়, এই চিত্র ততটা পরিষ্কার ছিল না। এবার দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি। কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ। অথচ ২০১৬ সালের জনমত জরিপগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে ব্যবধান ছিল সামান্য কিছু পয়েন্ট। গত নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয় থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে, কোন্‌ প্রার্থী কত বেশি ভোট পেয়েছেন, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোন্‌ রাজ্যে কোন্‌ প্রার্থী বেশি ভোট পেয়েছেন। সাধারণত বেশিরভাগ রাজ্যেই সবসময় একই রকমের ভোট পড়ে। কিছু কিছু রাজ্য আছে, যেখানে দুই প্রার্থীর যে কেউ বিজয়ী হতে পারেন। এসব রাজ্যেই নির্ধারণ হবে, কে নির্বাচনে জয়ী আর কে পরাজিত হবেন। জয়-পরাজয়ের যুদ্ধটা হয় সেখানেই। আর তাই এসব রাজ্যকে বলা হয় 'ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটস'। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এই পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি রাজ্যের হাতে থাকে কিছু ভোট। কোন্‌ রাজ্যের কত ভোট সেটা নির্ভর করে ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর। এই হিসাবে সবচেয়ে বেশি ভোট টেক্সাস রাজ্যের। ইলেক্টোরাল কলেজে মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে তাকে ২৭০টি পেতে হবে। তাই প্রত্যেক নির্বাচনের সময় দেখা গেছে, যেসব রাজ্যের ভোট বেশি, প্রার্থীরা সেসব রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার পেছনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে থাকেন। বর্তমান জরিপের ফল জো বাইডেনের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। যেকোনো সময় এই ফল দ্রম্নত বদলে যেতে পারে। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাইডেন মিশিগান, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে আছেন। এই তিনটি শিল্প এলাকা। এসব রাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী এক শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। এখনকার জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব রাজ্যে এগিয়ে আছেন, সেগুলো হচ্ছে- জর্জিয়া, আইওয়া এবং টেক্সাস। কিন্তু সেখানে ব্যবধান খুবই সামান্য। গত নির্বাচনেও এসব রাজ্যে ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল আরও অনেক বেশি। জো বাইডেনের জন্য ভালো খবর হচ্ছে, তিনি অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকনসিনে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে এসব রাজ্যের অধিকাংশগুলোতেই ব্যাপক ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এসব রাজ্যে এখন এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে আইওয়া, ওহাইও এবং টেক্সাসে তিনি ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এখন জো বাইডেনের সঙ্গে তার অবস্থান প্রায় সমান সমান। এদিকে, চলতি বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম দখল করে আছে করোনাভাইরাস। মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে তার পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব ব্যবস্থা নিয়েছেন, তার পক্ষে সমর্থন তুঙ্গে ওঠে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে। তখন তিনি সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন এবং ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রাজ্যগুলোর জন্য ঘোষণা করেছিলেন পাঁচ হাজার কোটি ডলার। শীর্ষস্থানীয় একটি জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান 'ইপসোস'র হিসাব অনুসারে, সে সময় ৫৫ শতাংশ মার্কিনি তার গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। ডেমোক্রেট দলের যারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, পরে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করে। কিন্তু রিপাবলিকানরা তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখে। তবে অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে তার গৃহীত পদক্ষেপের সমালোচনা করছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরাও এখন তার নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তারা সমালোচনায় সরব হয়েছেন। জুলাই মাসের শুরুতে তার প্রতি রিপাবলিকানদের সমর্থন কমে ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো এ কারণেই করোনাভাইরাস সম্পর্কে তার বক্তব্য পরিবর্তন করছেন। শুরুতে তিনি বলেছিলেন, এই ভাইরাস একসময় আপনাআপনি চলে যাবে। কিন্তু এখন তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে মহামারি আরও খারাপ রূপ নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং নভেম্বরে মানুষের ভোটের ওপর এই মহামারি কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। কেননা নির্বাচনের এখনো আরও কয়েক মাস বাকি। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে