শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বৈরুত বিস্ফোরণ

'বিদেশি হস্তক্ষেপ' তদন্তে লেবানন

গুদামে ক্ষেপণাস্ত্র মজুতের কথা অস্বীকার হিজবুলস্নাহর লেবাননে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট
যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন

বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ শুরুতে দুর্ঘটনা বললেও এবার এর নেপথ্যে বিদেশি হস্তক্ষেপের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে লেবানন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউন বলেছেন, 'বৈরুতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ বোমা বা বাইরের হস্তক্ষেপে ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।' সংবাদসূত্র : রয়টার্স, সিএনএন, আল-জাজিরা মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণে অন্তত ১৫৭ নিহত ও ৫ সহস্রাধিক আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণ এতই শক্তিশালী যে শহরের অর্ধেক বিধস্ত হয়ে গেছে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট বলেন, 'বিস্ফোরণের কারণ এখনো সুনিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। রকেট বা বোমা কিংবা অন্য উপায়ে বাইরের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে।' এর আগে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, বন্দরে অরক্ষিতভাবে রাখা বিস্ফোরক দ্রব্যে অগ্নিসংযোগে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, অবহেলায়, না দুর্ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হবে। একটি সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে বিস্ফোরণের জন্য অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রও হামলার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়নি। লেবাননের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ইসরাইল বিস্ফোরণে কোনো ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান বলেছেন, বিস্ফোরণের কারণ স্পষ্ট নয়। তবে ২০০৫ সালে যে বিস্ফোরণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক আল-হারিরি নিহত হয়েছিলেন সেটির সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। গুদামে ক্ষেপণাস্ত্র মজুতের কথা অস্বীকার হিজবুলস্নাহর এদিকে, লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি গুদামে ক্ষেপণাস্ত্র মজুতের কথা অস্বীকার করেছে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুলস্নাহর মহাসচিব সাইয়ে্যদ হাসান নাসরুলস্নাহ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বৈরুত বন্দরে সম্প্রতি যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে তার সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। বিস্ফোরণের প্রথমদিকে কিছু গণমাধ্যম জানায় যে, ওই গুদামে হিজবুলস্নাহর ক্ষেপণাস্ত্র মজুত ছিল। এই খবর নাকচ করে দিয়ে সাইয়ে্যদ হাসান নাসরুলস্নাহ বলেন, হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে লেবাননের জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য কিছু গণমাধ্যম এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত খবর প্রচার করেছে। এসব গণমাধ্যমের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে এবং তারা লেবাননের ভেতরে গৃহযুদ্ধ শুরু করতে চায় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। শুক্রবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে হাসান নাসরুলস্নাহ বলেন, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় এবং দলমতের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গত মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের ব্যাপারে যে তদন্ত হবে তাতে কোনো রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক পরিচয় গুরুত্ব পাওয়া উচিত নয়। ওই বিস্ফোরণকে হিজবুলস্নাহ মহাসচিব লেবাননের জন্য মানবিক ও জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে উলেস্নখ করে বলেন, এই সংকট মোকাবিলায় দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। লেবাননে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অন্যদিকে, শনিবার লেবানন সফরে গেছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লেস মিশেল। গত মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বৈরুত। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিপর্যস্ত বৈরুতের পাশে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যেই দেশটিতে ইতালি, ফ্রান্স, ইরান, ইরাক, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মানবিক ও মেডিকেল সহায়তা পাঠানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লেস মিশেল এক টুইট বার্তায় তার লেবানন সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমরা বৈরুত বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং তাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাব। এই সফরে তিনি লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন, পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরি এবং প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বৈরুত সফর করেছেন। তিনি দুইটি বিমানে করে উদ্ধারকর্মীদের একটি দল ও মানবিক সহায়তা নিয়ে বৈরুতে পা রাখেন। বৈরুতে গত মঙ্গলবারের ওই প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের কারণ এখনো শতভাগ নিশ্চিত না হলেও সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস, বন্দরের গোডাউনে প্রায় ছয় বছর ধরে মজুত রাখা বাজেয়াপ্ত ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে