বিস্ফোরণে ঘটনায় বিক্ষোভ

লেবাননে আগাম ভোটের ডাক

'নির্বাচন ছাড়া এই সংকট উত্তরণের সুযোগ নেই' সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ লেবাননের পাশে বিশ্ব

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব
বৈরুত বন্দরে গত বুধবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল লেবানন। রাজপথে নেমে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থার জানান দিচ্ছে দেশটির জনগণ। এরই মধ্যে সংকট উত্তরণে আগামী ১০ বছরের জন্য লেবাননের কর্তৃত্ব ফ্রান্সের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে একটি পিটিশন (আবেদনপত্র) খোলা হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। সংবাদসূত্র :বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেন, 'ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের অনুরোধ জানাবেন।' তিনি আরও বলেন, 'আগাম নির্বাচন ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের সুযোগ নেই। সোমবার (আজ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের একটি বিলের খসড়া উপস্থাপন করব।' দেশের এই পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলকে নিজেদের মধ্যকার বিভেদ থেকে দূরে থাকার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। শনিবার তার এমন আহ্বানের মধ্যেই দেশটির রাজপথে নেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে হাজার হাজার মানুষ। রাজধানী বৈরুতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে গুলির আওয়াজ আসতে থাকে। বৈরুতে এদিনের সহিংসতায় অন্তত ৭২৮ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। একপর্যায়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢুকে পড়ে একদল বিক্ষোভকারী। এ সময় পার্লামেন্ট ভবনে অনুপ্রবেশ বন্ধে পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভাঙারও চেষ্টা চালানো হয়। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছে দেশটির মানুষ। লেবাননকে ফ্রান্সের কর্তৃত্বে নেওয়া সংক্রান্ত পিটিশনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা স্পষ্টতই রাষ্ট্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও দেশ পরিচালনায় তাদের অক্ষমতা দেখিয়েছে। একটি ব্যর্থ ব্যবস্থা, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং মিলিশিয়া বাহিনী দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। রাষ্ট্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এক সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল লেবানন। এখন এই পিটিশনের উদ্যোক্তাদের বিশ্বাস, একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লেবাননকে ফের ফ্রান্সের অধীনে ফিরে যেতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। বৈরুত বন্দরে ওই প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের কারণ এখনো শতভাগ নিশ্চিত না হলেও সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস, বন্দরের গোডাউনে প্রায় ছয় বছর ধরে মজুত রাখা বাজেয়াপ্ত দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই বিস্ফোরণে তিন লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের তান্ডবে বৈরুত শহরের প্রায় অর্ধেকটাই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বিস্ফোরণের প্রভাব এতটাই তীব্র ছিল যে ১৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও তার শব্দ শোনা গেছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় তিন মাত্রার ভূমিকম্পের মতো কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উলেস্নখ্য, গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া তীব্র বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন আগের সরকারপ্রধান সাদ হারিরি। ফেব্রম্নয়ারিতে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে জেতে দিয়াবের মন্ত্রিপরিষদ। ওই সময় তিনি দাবি করেন, লেবাননের গুরুতর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দায়ী ছিলেন না তিনি। সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ এদিকে, বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দেড় শতাধিক মানুষের মৃতু্যর পর লেবাননের ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী মানাল আবদেল সামাদ। বৈরুত বিস্ফোরণে পর কয়েকদিন ধরে দেশটিতে চলমান ব্যাপক জনবিক্ষোভের মাঝে রোববার তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে লেবাননের এই মন্ত্রী বলেন, 'বৈরুতে বিশাল বিপর্যয়ের পর আমি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি লেবানিজদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।' লেবাননের পাশে বিশ্ব অন্যদিকে, ভয়াবহ বিস্ফোরণে বিপর্যস্ত লেবাননের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তুরস্ক সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে, পাশে দাঁড়িয়েছে আরব লিগও। এদিকে, বৈরুতের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে রোববার বৈঠক করেছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। এদিন জাতিসংঘ এবং ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।