ভারতে মন্দা গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে :মনমোহন

মোকাবিলায় তিন দাওয়াই মনমোহন সিংয়ের বর্তমানের অর্থনৈতিক মন্দা অনেকটাই মানুষের তৈরি হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করে মোদি সরকার জনগণের দুর্দশা বাড়িয়েছিল

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং
ভারতের অর্থনীতিতে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী মন্দা অবশ্যম্ভাবী ছিল। কিন্তু তা মোকাবিলায় যে পন্থা নেওয়া উচিত ছিল সরকারের, সে ভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি তারা। করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের মোকাবিলায় মোদি সরকারের আর্থিক নীতিকে এভাবেই সমালোচনা করলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করে মোদি সরকার জনগণের দুর্দশা বাড়িয়েছিল বলে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মত প্রকাশ করেছেন মনমোহন। তবে একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে তিনটি পন্থাও বাতলে দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, বিবিসি নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে উদার অর্থনীতির দরজা খুলে দিয়েছিলেন মনমোহন সিং। তার সেই দাওয়াইয়ে যে বিপুল কাজ হয়েছিল, তা এখন অর্থনীতিবিদরা একবাক্যে স্বীকার করে নেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং লকডাউনের জেরে ফের তীব্র সংকটের মুখে ভারতের অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতেই মুখ খুললেন মনমোহন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বর্তমানের অর্থনৈতিক মন্দা অনেকটাই 'মানুষের তৈরি সংকট'। অর্থাৎ মোদি সরকার যে পরিস্থিতি ঠিক ভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি, সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন ইউপিএ আমলের দুই বারের প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত ২২ মার্চ জনতা কারফিউ পালিত হয়েছিল গোটা দেশে। তার পর হঠাৎই ২৪ মার্চ দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছিল পরের দিন থেকে। তারপর কয়েক দফায় লকডাউন চলেছে ৩১ মে পর্যন্ত। এরপর থেকে শুরু হয়েছে 'আনলক'। কিন্তু মনমোহন সিংয়ের মতে, এভাবে প্রস্তুতি না নিয়ে হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা করা ঠিক হয়নি সরকারের। যদিও লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেননি তিনি। তার মতে, হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণার জেরে 'ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে দেশবাসীকে'। তিনি বলেন, 'হয়তো ওই সময় লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই ছিল। কিন্তু ঘোষণার আকস্মিকতা এবং কঠোরভাবে তা প্রয়োগ করা ছিল বিচারবুদ্ধিহীন ও অমানবিক।' কিন্তু যা হবার, তা তো হয়ে গেছে, এখন ঘুরে দাঁড়াতে কী করা উচিত, সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, তিনটি পন্থা নিয়ে এগোলে এখনো আগামী কয়েক বছরে অর্থনীতি ফের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে। প্রথমত, নগদ অনুদান। মনমোহন সিং মনে করেন, প্রথমত, সরকারের উচিত 'সাধারণ মানুষের জীবিকা সুরক্ষিত করা এবং তারা যাতে নগদ টাকা খরচ করতে পারে, সরাসরি নগদ অনুদানের মাধ্যমে তা সুনিশ্চিত করা'। দ্বিতীয়ত, শিল্প ক্ষেত্রে সংস্থাগুলোর যাতে পর্যাপ্ত মূলধন থাকে, তার ব্যবস্থা করা। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। শেষ ব্যবস্থা হিসেবে তিনি বলেছেন শিল্প ক্ষেত্রে স্বায়ত্বশাসনের কথা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে মজবুত করতে এই ব্যবস্থার প্রয়োজন বলে মনে করেন ৮৮ বছরের বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং। কিন্তু সরাসরি জনগণের পকেটে নগদ অনুদান দিলে অর্থনীতি তথা রাজকোষেও তার প্রভাব পড়ে। তাতে সরাকরকে ঋণ নিতে হয় এবং তাতে ঋণের বোঝা বেড়ে যায়। কিন্তু মনমোহন সিংহের যুক্তি, ধার করে যদি কারও জীবন রক্ষা হয়, জীবিকা নিশ্চিত হয় এবং আর্থিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত হয়, তা হলে সেটা করাই উচিত। তিনি বলেন, ধার করতে লজ্জা পাওয়া উচিত নয়, কিন্তু সেই ঋণের টাকা কীভাবে কোন্‌ খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা ভবিষ্যতের কথা ভেবে করা উচিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 'আত্মনির্ভর' হওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু তাই বলে সব ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন। বরং উদার অর্থনীতির পক্ষেই কথা বলেছেন তিনি। মনমোহন সিংয়ের মতে, গত তিন দশকে ভারতের বাণিজ্যনীতিতে শুধু যে উচ্চবিত্ত শ্রেণির জন্য সুবিধা হয়েছে এমন নয়, বরং সমাজের সব স্তরের সাধারণ মানুষ তার সুবিধা পেয়েছেন। এই মন্দা যে আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে, তেমন ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন মনমোহন সিং।