ভারতীয় বংশোদ্ভুত নারী

হোয়াইট হাউসের দৌড়ে বাইডেনের সঙ্গী কমলা

বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে মনোনয়ন

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জো বাইডেনের সঙ্গে কমলা হ্যারিস
যাযাদি ডেস্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী জো বাইডেন তার 'রানিংমেট' হিসেবে সিনেটর কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণা করেছেন। বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি। ৫৫ বছর বয়সি কমলা হ্যারিসই প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং প্রথম কোনো ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলের একটি থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী হওয়ার মনোনয়ন লড়াই থেকে আগেই ছিটকে পড়ে স্বপ্ন ভেঙেছিল তার, কিন্তু কয়েক মাস পরেই হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে থাকার আরেকটি সুযোগ ঠিকই পেয়ে গেলেন কমলা হ্যারিস। বিভিন্ন বিতর্কে ধারাবাহিকভাবে দক্ষতার পরিচয় দেওয়া কমলাকে ডেমোক্রেট নেতা বাইডেন, বার্নি স্যান্ডার্স, এলিজাবেথ ওয়ারেনদের সমকক্ষই মনে করা হচ্ছিল; কিন্তু বেশিদিন এ অবস্থা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। মনোনয়ন দৌড় শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ছিটকে পড়েছিলেন। মনোনয়ন দৌড়ের লড়াইয়ের সেই বিতর্কগুলোতে কমলাকে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি তীক্ষ্ন বাক্যবাণ ছুড়ে দিতে দেখা গিয়েছিল। এখন সেই বাইডেনের সঙ্গেই তাকে 'ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর' মিশনে নামতে হবে, সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করে মহামারি জর্জরিত মার্কিন ভোটারদের মন জয় করতে হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ডেমোক্রেট সিনেটর কমলার বাবা-মা দু'জনই অভিবাসী। মা জন্মেছিলেন ভারতে, বাবা জ্যামাইকায়। দু'জনের ছাড়াছাড়ির পর 'হিন্দু' ও 'সিঙ্গেল' মায়ের কাছে থাকা কমলা বড় হয়েছেন ভারতীয় ঐতিহ্য সংলগ্ন হয়েই। শৈশব-কৈশোরে প্রায়ই ভারতে বেড়াতে আসা কৃষ্ণাঙ্গ বাবার ঔরসজাত এ নারী অবশ্য বলছেন, তার মা শ্যামলা গোপালান হ্যারিস মূলত ওকল্যান্ডের কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতিকে ধারণ করেই তাকে ও ছোট বোন মায়াকে বড় করেছেন। 'আমার মা ভালো করেই বুঝেছিলেন যে তিনি দুটি কৃষ্ণাঙ্গ কন্যাকে বড় করছেন। তিনি জানতেন, তার বেছে নেওয়া দেশ মায়া ও আমাকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবেই দেখবে; আমরা যেন আত্মবিশ্বাসী, গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবেই বেড়ে উঠি তা নিশ্চিত করতেও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন,' আত্মজীবনীমূলক 'দ্য ট্রুথস উই হোল্ড' বইতে এমনটাই বলেছেন কমলা। ক্যান্সার গবেষক ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী শ্যামলা পরে কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতার চাকরি নিলে কমলা ও তার বোন মায়াকে বেশ কিছুদিন সে দেশেও কাটাতে হয়। দুই বোন মন্ট্রিয়লের স্কুলে বছর পাঁচেক পড়াশোনাও করেছেন। কমলা পরে ভর্তি হন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের পরিচয় নিয়ে সন্তুষ্ট এ নারী নিজেকে 'একজন আমেরিকান' হিসেবে বর্ণনা করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলেও বার বার বলে এসেছেন। হাওয়ার্ডে চার বছর কাটানোর পর আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে কমলা যান হেস্টিংসের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে। তার ক্যারিয়ার শুরু হয় আলামেদা কাউন্টি ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি কার্যালয়ে। ২০০৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হন কমলা; পরে তিনি প্রথম নারী ও প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নির্বাচিত হন। অ্যাটর্নি জেনারেল পদে থাকার সময় থেকেই কমলা ডেমোক্রেট পার্টির উদীয়মান তারকা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন; যার ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মার্কিন সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে রক্ষণশীল ব্রেট কাভানহ এবং মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পদে উইলিয়াম বারের মনোনয়ন নিয়ে সিনেট শুনানিতে ধারালো বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করে ডেমোক্রেটদের প্রগতিশীল অংশের কাছেও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। গত বছরের শুরুর দিকে কমলা ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ২০ হাজারেরও বেশি সমর্থকের সামনে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থিতার লড়াইয়ে শামিল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রথম দিকে তার প্রচারণা বেশ সাড়া ফেললেও স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু নীতি নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থান ও কিছু কিছু বিষয়ে সুস্পষ্ট যুক্তি হাজিরে ব্যর্থতা তাকে মনোনয়ন দৌড় থেকে ছিটকে দেয়। ডেমোক্রেট মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিতর্কগুলোতেও কমলা তার দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হন, কেবল মাঝে মাঝে বাইডেনের কথাবার্তার সমালোচনা করতেই দেখা গেছে তাকে। ওই লড়াই থেকে ছিটকে পড়ার পর চলতি বছরের মার্চে কমলা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেছিলেন, 'তাকে (বাইডেন) যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট করতে সাধ্যের সবটাই করব আমি।'