বাড়ছে করোনার প্রকোপ

ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকটে লেবানন

এবার করোনা সংক্রমণেরও বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বৈরুতকে গুঁড়িয়ে দেওয়া রাসায়নিকের মালিক কে?

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বৈরুত বন্দরে রাসায়নিক থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর করোনাভাইরাস সংক্রমণেরও বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে লেবাননে। মঙ্গলবার দেশটিতে প্রথমবারের মতো একদিনে তিন শতাধিক নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছে অন্তত সাতজন। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান লেবানিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১২১ জন, মারা গেছে ৮৭ জন। বন্দরে বিস্ফোরণের আগে থেকেই করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছিল লেবাননে। তবে দুর্ঘটনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ, আহত ছয় হাজারেরও বেশি। বিস্ফোরণে শহরের প্রায় অর্ধেকটাই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে, এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন অন্তত তিন লাখ মানুষ। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) মুখপাত্র তারিক জারাসেভিক এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, লেবাননে এত মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ায় তাদের মধ্যে দ্রম্নত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। লেবাননের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে গত ৭ আগস্ট ১৫ মিলিয়ন ডলার তহবিলের আবেদন জানিয়েছে ডবিস্নউএইচও। দেশটির স্বাস্থ্যখাত এরই মধ্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ঘাটতির মতো মারাত্মক সংকটে রয়েছে। গত ১০ আগস্ট জাতিসংঘের মানবিক বিষয়াদি সমন্বয়কারী অফিস বলেছে, বৈরুতে জরুরি অবস্থার কারণে করোনাভাইরাস বিষয়ক অনেক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা শিথিল করা হয়েছে। এতে আগামী সপ্তাহগুলোতে সেখানে সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যেতে পারে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিস্ফোরণে বৈরুতের প্রধান তিনটি হাসপাতালসহ অন্তত ১৫টি মেডিকেল স্থাপনা গুরুতর বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরটির ৫৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৪৭ শতাংশ পুরোদমে সেবা কার্যক্রম চালাতে পারছে। বৈরুতকে গুঁড়িয়ে দেওয়া রাসায়নিকের মালিক কে? এদিকে, বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কেন এতদিন বন্দরের গুদামে পড়েছিল? কে সেগুলোর মালিক? কেন কোনও দাবীদার নেই? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। বিস্ফোরণের পর এক সপ্তাহের মাথায়ও কেউ ওই রাসায়নিকের মালিকানা দাবি করেনি বা কাগজপত্র ঘেঁটেও মালিকের কোনও সন্ধান মেলেনি। মার্কিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করা গেলে অনেক প্রশ্নের জবাব ?পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। তাই স্পষ্টভাবে মালিকের পরিচয় জানা জরুরি। ২০১৪ ?সালে মলদোভার পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ 'রোসুস' ওই রাসায়নিক নিয়ে বৈরুত বন্দরে ভেড়ে। নৌপথে পণ্য পরিবহনের নিয়মানুযায়ী এভাবে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মত মারাত্মক দাহ্য রাসায়নিক পরিবহন অত্যন্ত বিপজ্জনক। কে বা কারা এতটা ঝুঁকি নিয়ে বিপুল পরিমাণ ওই রাসায়নিক এক দেশে থেকে অন্য দেশে নিয়ে যাচ্ছিল তা খুঁজে বের করতে রয়টার্স ?অন্তত ১০টি দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং নথিপত্র ঘেঁটে প্রকৃত মালিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। লেবাননের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা হাসান হাসবানি বলেন, 'পণ্যগুলো এক দেশ থেকে আরেক দেশে পরিবহন করা হচ্ছিল, তৃতীয় আরেকটি দেশে গিয়ে সেগুলো আটকে যায় এবং কেউ সেগুলোর মালিক নয়! কেন সেগুলোর যাত্রা এখানে শেষ হয়েছিল?' এই চালানের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সংবাদমাধ্যমটি। কিন্তু তারা সবাই কার্গোটির প্রকৃত মালিক কে তা তারা জানেন না বলে জানিয়েছেন এবং এ বিষয়ে আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি পণ্যবাহী জাহাজটির ক্যাপ্টেন, জার্জিয়ার সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যারা কার্গোটি পাঠিয়েছিল এবং আফ্রিকার যে ফার্ম ওই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ক্রয়াদেশ দিয়েছিল তারা কেউই প্রকৃত মালিককে চেনেন না বলে দাবি করেছেন। আফ্রিকার ফার্মটির দাবি, তারা ক্রয়াদেশ দিলেও কখনোই ওই রাসায়নিকের মূল্য পরিশোধ করেনি। 'শিপিংয়ের' নথি অনুযায়ী, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জর্জিয়া থেকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের চালানটি পণ্যবাহী জাহাজ 'রোসুসে' তোলা হয়। রাসায়নিকের চালানটি মোজাম্বিকের বিস্ফোরক উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাহাজটি ভূমধ্যসাগর পার হওয়ার আগেই তাদের ?কাছে একটি নির্দেশ আসে বলে জানান রোসুসের ক্যাপ্টেন এবং দুই ক্রু। রাশিয়ার ব্যবসায়ী ইগোর গ্রেচুশিকন তাদের ওই নির্দেশ দেন, যাকে তারা জাহাজটির মালিক বলে চিনতেন।