সাংবাদিক বব উডওয়াডের্র লেখা বইয়ে দাবি

বাশারকে গোপনে হত্যা করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প

এটি আরেকটি বাজে বই প্রতারণাপূণর্ ও জনগণের সঙ্গে কৌতুক : ট্রাম্প

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প বাশার আল-আসাদ
মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে গোপনে হত্যা করতে চাইলেও মাকির্ন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ওই অনুরোধে কান দেননি বলে নতুন এক বইয়ে দাবি করা হয়েছে। ‘ওয়াটারগেট’ কেলেঙ্কারির প্রতিবেদনের জন্য খ্যাতি অজর্ন করা সাংবাদিক বব উডওয়াডের্র লেখা বইটিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্টের অনেক আচরণকে ‘ধ্বংসাত্মক ও বিপজ্জনক’ হিসেবে দেখেন, যে কারণে মাঝে মাঝেই তারা প্রেসিডেন্টের নিদের্শ অমান্য করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশের দিনক্ষণ নিধাির্রত থাকলেও মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্ট ‘ফিয়ার : ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’ বইটির কিছু অংশ প্রকাশ করে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, ওয়াশিংটন পোস্ট ওই বইতেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত ২০ মাসে ট্রাম্পের অধীনে হোয়াইট হাউসের ভেতর যে ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে উডওয়াডর্ নিজের ভাষ্যে তার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। বইয়ে দেয়া তথ্য ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে তার সম্পকর্ চিত্রায়নের তীব্র সমালোচনা করেছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট। ডেইলি কলারকে তিনি বলেছেন, ‘এটি আরেকটি বাজে বই’। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ম্যাটিস, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি ও অন্যদের উদ্ধৃতি যেভাবে বইটিতে ব্যবহার করা হয়েছে, তা ‘প্রতারণাপূণর্, জনগণের সঙ্গে কৌতুক’ বলেও টুইটারে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। বইটিতে মাকির্ন প্রেসিডেন্টকে হুট করে ক্ষেপে যাওয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আবেগতাড়িত ব্যক্তি হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। ট্রাম্পের এ আচরণের ফলে প্রশাসনের ভেতর নিয়মিত অস্থিরতা দেখা দেয় এবং নিবার্হী বিভাগ প্রায়ই ‘বিচলিত’ হয়ে পড়ে বলেও দাবি উডওয়াডের্র। পৃথক এক ঘটনায় মাকির্ন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সহকমীের্দর কাছে ট্রাম্পের আচরণকে ‘পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রদের মতো’ অভিহিত করেছেন বলেও বইতে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে সিরিয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক হামলার পর ট্রাম্প সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে হত্যা করতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বলেছিলেন বলে বইটিতে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ম্যাটিস তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পকে ‘এটাই ঠিক আছে’ বললেও পরে সিরিয়ায় স্বল্প আকারের বিমান হামলার পরিকল্পনা অঁাটেন, যা ব্যক্তি আসাদের ওপর হুমকি ছিল না। এদিকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ম্যাটিস ‘ফিয়ার : ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’ বইয়ে লেখা তথ্য উড়িয়ে দিয়ে একে ‘সাহিত্যের ওয়াশিংটন ব্রান্ডের অনন্য নজির’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পকে নিয়ে যেসব অবজ্ঞাসূচক কথা বইটিতে আছে সেগুলো ‘কখনো উচ্চারণ করিনি, কিংবা আমার উপস্থিতিতে হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডাসর্ বলেছেন, ‘মনগড়া গল্প ছাড়া বইটি আর কিছুই নয়। এসব গল্পের বেশিরভাগই এসেছে সাবেক অসন্তুষ্ট কমর্চারীদের কাছ থেকে, যারা প্রেসিডেন্টকে বাজে লোক হিসেবে দেখানে চান।’ বাশারকে হত্যায় প্রেসিডেন্টের আগ্রহ নিয়ে বইয়ে যা লেখা হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘে মাকির্ন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিও। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ওই আলোচনার সময় সেখানে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার, প্রেসিডেন্ট যে বাশারকে হত্যা করতে চাইছেন, তা একবারের জন্যও শুনিনি আমি।’ গত শতকের ৭০-এর দশকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রতিবেদন করে খ্যাতি অজর্ন করেছিলেন সাংবাদিক উডওয়াডর্। সাংবাদিক উডওয়াডর্ তার প্রতিবেদনের জন্য সে সময় পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। বিভিন্ন প্রেসিডেন্টের প্রশাসন ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরকার খবর নিয়ে বইও বের করেছিলেন তিনি। তিনি কীভাবে তথ্য পেয়েছেন, তা প্রকাশ করবেন না, এই সমঝোতার ভিত্তিতে এই বইয়ের জন্য ট্রাম্পের শীষর্ উপদেষ্টা ও অন্যান্য গুরুত্বপূণর্ কমর্কতাের্দর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বলে দাবি করেছেন উডওয়াডর্। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সাবেক অথৈর্নতিক উপদেষ্টা গেরি কোহন ট্রাম্পের ডেস্ক থেকে একটি চিঠি চুরি করেছিলেন বলেও নিজের বইতে বলেছেন এ সাংবাদিক। ট্রাম্প চিঠিটিতে স্বাক্ষর করে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে দাবি উডওয়াডের্র। মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে থাকা ‘নথর্ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ থেকে সরে আসার পরিকল্পনা সংবলিত ট্রাম্পের অন্য একটি নথিও কোহেন সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন উডওয়াডর্। তিনি বলেন, ‘আমি তার ডেস্ক থেকে কাগজটি নিয়ে নেবো’Ñ হোয়াইট হাউসের অন্য এক উপদেষ্টাকে সাবেক এ অথৈর্নতিক উপদেষ্টা এমনটাই বলেছিলেন বলে বইতে দাবি করা হয়েছে। তবে ডেস্ক থেকে চিঠি চুরির কোনো ঘটনা ঘটেইনি বলে ‘ডেইলি কলার’র কাছে দাবি করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এটা বানোয়াট।’ উল্লেখ্য, নতুন কিছু শতর্ নিয়ে আলোচনা চললেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো ওই দুটি বাণিজ্য চুক্তিতে আছে।