স্বাধীন ভারতের ৭৪ বছর

স্বাধীনতা দিবসে মোদির আত্মনির্ভরতার ডাক

এ নিয়ে টানা সাতবার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিলেন তিনি কোভিড টিকার গণউৎপাদনে যেতে প্রস্তুত ভারত : মোদি

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দিলিস্নর লালকেলস্নায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস ছিল শনিবার। এ উপলক্ষে দিলিস্নর লালকেলস্না থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিনের ভাষণে আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। এই স্বাধীনতা দিবস থেকেই আত্মনির্ভর ভারত ১৩০ কোটি ভারতীয়র মন্ত্র হয়ে উঠুক বলে আহ্বান জানিয়েছেন মোদি। পুরো দেশের কাছে আবারও তিনি তার স্স্নোগান 'ভোকাল ফর লোকালের' প্রতি মনযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ মোদি বলেন, 'প্রত্যেক ভারতীয়র স্বপ্ন স্বনির্ভর ভারত গড়ে তোলা। এই স্বপ্নকে এবার আমরা বাস্তবে পরিণত করব।' তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির সময় ১৩০ কোটি ভারতীয় আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, 'আমি আত্মবিশ্বাসী, ভারত তার স্বপ্নকে অনুভব করতে পেরেছে। আমরা একবার যখন একটা কিছু করব বলে ঠিক করি, তখন সেটা পূরণ না করা পর্যন্ত আমরা থামি না। ভারত প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিকের ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।' তিনি বলেন, 'আজ সারা বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ভারত উন্নতি করলে তবেই পুরো পৃথিবীর উন্নতি হবে। গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরুণ সম্প্রদায় আমাদের দেশেই রয়েছে। আজকের ভারতীয়রা চিন্তা করতে পারেন এবং নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারেন।' দিলিস্নর লালকেলস্না থেকে এ নিয়ে টানা সাতবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিলেন নরেন্দ্র মোদি। আত্মনির্ভর ভারত গড়ার প্রসঙ্গে মোদি বলেন, 'আমরা কতদিন আমাদের কাঁচামাল রপ্তানি করব আর প্রস্তুত দ্রব্য আমদানি করব? এই চক্র বন্ধ করার সময় এসে গেছে। ভারতকে এবার সেসব জিনিস তৈরি করতে হবে, যা আমরা ব্যবহার করি। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে গোটা বিশ্বে প্রস্তুত দ্রব্যও রপ্তানি করব আমরা। তার 'মেক ইন ইনডিয়া' স্স্নোগানে তিনি আরও একটু সংযুক্ত করে বলেন, 'মেক ইন ইনডিয়া, মেক ফর ওয়ার্ল্ড।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এফডিআই বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এফডিআই-এ ১৮ শতাংশ গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি) হয়েছে। এমনকি এই করোনার মধ্যেও ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। এ থেকে এটাই প্রমাণ হয়, আমাদের ক্ষমতার ওপর পুরো বিশ্বের আস্থা রয়েছে।' মোদি বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে, কারণ ভারত তার নীতির বদল ঘটিয়েছে এবং পরিকাঠামোর উন্নতি করেছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য এখন ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। কৃষিতে আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য কৃষকদের উন্নয়নের কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা কৃষকদের উন্নয়নের কথাও বলেছেন তিনি। কোভিড-১৯ টিকার গণউৎপাদনে যেতে প্রস্তুত ভারত : মোদি এদিকে, বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে 'সবুজ সংকেত' পেলে বিপুল পরিমাণে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনে ভারত প্রস্তুত রয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে শনিবার মোদি টিকা উৎপাদনের পাশাপাশি যত দ্রম্নত সম্ভব, সেটা দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানান। দিলিস্নর 'রেড ফোর্ট' বা লালকেলস্নায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে মোদি বলেন, 'একটি বা দুটি নয়, কোভিড-১৯ এর অন্তত তিনটি টিকা ভারতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। শুধু টিকা উৎপাদনই নয়, বরং কীভাবে দ্রম্নততার সঙ্গে সেটা দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, এর পরিকল্পনাও করা হয়ে গেছে।' এদিন মোদি কমলা ও সাদা রঙের পাগড়ি পরে অনুষ্ঠানে আসেন। একই রঙের স্কার্ফ গলায় পেঁচানো ছিল। অনুষ্ঠানের সময় কেউ কাছে এসে গেলে ওই স্কার্ফ দিয়ে তিনি নাক-মুখ ঢাকেন। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন তেমন ঝাঁকজমকপূর্ণ ছিল না। কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া সেনাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে। অনুষ্ঠানে মাত্র চার হাজার ?অতিথি আমন্ত্রিত ছিলেন। প্রতিটি চেয়ার ছয় ফুট দূরে দূরে ছিল। মোদি এদিন ১৩০ কোটি রুপির স্বাস্থ্য প্রকল্প 'ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন' উদ্বোধন করেন। করোনাভাইরাস মহামারি আটকাতে বিশ্বের অনেক দেশ ও ইনস্টিটিউট টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। তারা টিকা পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। চীনের নাম মুখে আনতে ভয় কেন মোদিকে আক্রমণ কংগ্রেসের এদিকে, লাদাখ প্রসঙ্গে ভারতীয় জওয়ানদের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন তিনি। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে কৌশলে চীনের নাম এড়িয়ে গেছেন। তা নিয়েই এবার নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র আক্রমণ করল কংগ্রেস। তাদের প্রশ্ন, ক্ষমতায় বসে রয়েছেন যারা, তারা কি চিনের নাম মুখে আনতে ভয় পাচ্ছেন? এদিন মোদির ভাষণ শেষ হতেই দিলিস্নতে দলের সদর দপ্তরে পতাকা উত্তোলন করে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা। তিনি বলেন, 'চীন যে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে রয়েছে, সেটা নিয়ে প্রত্যেক ভারতবাসীর উচিত সরকারকে প্রশ্ন করা। জানতে চাওয়া উচিত, চীনকে ফেরত পাঠাতে এবং দেশকে রক্ষা করতে তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে? স্বাধীনতা দিবসে সরকারের সামনে এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরা দরকার। সরকারকে প্রশ্ন করাই আসল অর্থে গণতন্ত্র।'